মহান বিজয় দিবস ২০২২ উপলক্ষে দেশে ও দেশের বাইরে বসবাসকারী বাংলাদেশের সকল নাগরিককে আন্তরিক শুভেচ্ছা জানিয়েছেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। বৃহস্পতিবার (১৫ ডিসেম্বর) সন্ধ্যায় জাতির উদ্দেশে দেওয়া ভাষণে তিনি এই শুভেচ্ছা জানান।
এ সময় তিনি সর্বকালের সর্বশ্রেষ্ঠ বাঙালি, জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান, জাতীয় চার নেতা- সৈয়দ নজরুল ইসলাম, তাজউদ্দিন আহমদ, ক্যাপ্টেন এম মনসুর আলী এবং এএইচএম কামারুজ্জামানকে শ্রদ্ধার সঙ্গে স্মরণ করেন।
তিনি বলেন, জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের নেতৃত্বে ২৩ বছরের রাজনৈতিক সংগ্রাম এবং ৯ মাসের মহান মুক্তিযুদ্ধের মধ্য দিয়ে আমরা অর্জন করেছি স্বাধীন-সার্বভৌম বাংলাদেশ।
প্রধানমন্ত্রী বলেন, বিজয় দিবসে আমি মুক্তিযুদ্ধে সহায়তাদানকারী বিভিন্ন দেশ ও সেসব দেশের জনগণ, ব্যক্তি এবং সংগঠনের প্রতি আমাদের কৃতজ্ঞতা প্রকাশ করছি। ভারতীয় সশস্ত্র বাহিনীর উল্লেখযোগ্য সংখ্যক বীর সদস্য আমাদের মুক্তিযুদ্ধে শহীদ হয়েছেন। তাঁদের প্রতি আমি গভীর শ্রদ্ধা জানাচ্ছি। কৃতজ্ঞতা জানাচ্ছি ভারতের তৎকালীন সরকার, রাজনৈতিক নেতৃবৃন্দ এবং সর্বোপরি সাধারণ জনগণকে- যাঁরা আমাদের মুক্তিযুদ্ধে সমর্থন জানিয়েছিলেন, শরণার্থীদের আশ্রয় দিয়েছিলেন এবং নানাভাবে সহযোগিতা করেছিলেন।
এরপর বিনিয়োগ, রেমিটেন্স প্রবাহ এবং আমদানি-রফতানি পরিস্থিতি স্বাভাবিক রয়েছে বলে জানিয়ে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বলেছেন, আমাদের বৈদেশিক মুদ্রার রিজার্ভ নিয়ে অনেকে নানা মনগড়া মন্তব্য করছেন। তিন মাসের আমদানি খরচ মেটানোর মত রিজার্ভ থাকলেই চলে। বর্তমানে আমাদের পাঁচ মাসের আমদানি ব্যয় মেটানোর মতো বৈদেশিক মুদ্রা মজুদ আছে।
বৈদেশিক মুদ্রার রিজার্ভ কমে যাওয়ার প্রসঙ্গে তিনি বলেন, করোনাভাইরাসের মহামারির সময় সব ধরনের ভারী যন্ত্রপাতি আমদানি, বিদেশ ভ্রমণ এবং অন্যান্য পণ্য আমদানি অনেকটা বন্ধ ছিল। সে সময় আমাদের রিজার্ভ বৃদ্ধি পেয়ে ৪৮ বিলিয়ন ডলারে উন্নীত হয়। এ বিপুল পরিমাণ অর্থ অলস অবস্থায় না রেখে সেখান থেকে কিছু পরিমাণ অর্থ দিয়ে আমরা একটা বিশেষ তহবিল গঠন করেছি। সে তহবিলের অর্থ দিয়ে কয়েকটি গুরুত্বপূর্ণ প্রকল্প বাস্তবায়ন করা হচ্ছে।
শেখ হাসিনা বলেন, সোনালী ব্যাংকের মাধ্যমে এ ঋণ দেওয়া হচ্ছে ২ শতাংশ হার সুদে। ঘরের টাকা সুদসহ ঘরেই ফেরত আসছে। এ অর্থ যদি বিদেশি ব্যাংক থেকে ঋণ হিসেবে নেওয়া হতো তাহলে ৪-৫ শতাংশ হারে সুদসহ ফেরত দিতে হতো। আর তা পরিশোধ করতে হতো রিজার্ভ থেকেই।
তিনি বলেন, আমাদের বৈদেশিক মুদ্রার রিজার্ভ হ্রাস পাওয়ার আরেকটি কারণ হচ্ছে আন্তর্জাতিক বাজার থেকে আমরা বেশি দামে জ্বালানি তেল, ভোজ্য তেল, গম, ডাল, ভুট্টাসহ অন্যান্য পণ্য ক্রয় করে স্বল্পমূল্যে সাধারণ মানুষের কাছে বিক্রি করছি।
রিজার্ভের ওপর ইউক্রেন-রাশিয়া যুদ্ধের প্রভাবের কথা তুলে ধরে প্রধানমন্ত্রী বলেন, ইউক্রেন-রাশিয়ার যুদ্ধ এবং পশ্চিমাদের অর্থনৈতিক অবরোধ এবং পাল্টা অবরোধের কারণে আমাদের মতো উন্নয়নশীল ও আমদানি-নির্ভর দেশগুলো সবচেয়ে বেশি বিপাকে পড়েছে। আন্তর্জাতিক বাজারে জ্বালানি তেল, ভোজ্য তেল, গম, চিনি, ভুট্টা, ডাল, রাসায়নিক সারসহ প্রায় সব ভোগ্যপণ্যের দাম অস্বাভাবিক হারে বৃদ্ধি পেয়েছে।
তিনি বলেন, সরবরাহ ব্যবস্থা ভেঙে পড়েছে। পরিবহন খরচ বহুগুণ বৃদ্ধি পেয়েছে। যে জাহাজ ভাড়া ছিল ৮০০ ডলার তার ভাড়া এখন ৩ হাজার ৮০০ ডলার, যে গম টন প্রতি ২০০ ডলারে পাওয়া যেতো, তা ৬০০ ডলারে কিনতে হচ্ছে। আবার নিজস্ব চাহিদা মেটানোর জন্য কোনো কোনো দেশ বিনা নোটিশে পণ্য রফতানি বন্ধ করে দিচ্ছে। সাধারণ মানুষের কথা চিন্তা করে আমরা পৃথিবীর যেখানেই আমাদের চাহিদার পণ্য পাওয়া যাচ্ছে, সেখান থেকেই তা সংগ্রহ করছি এবং জোগান দিচ্ছি।
Array