জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয় (জাবি) ও খুলনা বিশ্ববিদ্যালয়ের (খুবি) গবেষকগণ প্রত্নতাত্ত্বিক ঐতিহ্য সংরক্ষণে দেশে নতুন প্রযুক্তি উদ্ভাবনের যাত্রা শুরু করেছেন। ফলে, সংরক্ষিত হবে প্রাচীন প্রত্নতাত্ত্বিক ও সাংস্কৃতিক ঐতিহ্য।
মঙ্গলবার (১৩ ডিসেম্বর) বিশ্ববিদ্যালয়ের জহির রায়হান মিলনায়তনের সেমিনার কক্ষে এক সংবাদ সম্মেলনে জাবি ও খুবির প্রত্নতত্ত্ব ও স্থাপত্য বিভাগের যৌথ উদ্যোগে এবং আমেরিকান গ্রাফিক্স ডিজাইন ভিত্তিক প্রতিষ্ঠান ‘সাইয়ার্ক’-এর সহযোগিতায় প্রত্নতাত্ত্বিক ঐতিহ্য সংরক্ষণে দেশে প্রথমবারের মতো নতুন এ প্রযুক্তি উদ্ভাবনের কথা জানান তারা।
এ বিষয়ে খুলনা বিশ্ববিদ্যালয়ের স্থাপত্য বিভাগের অধ্যাপক এটিএম মাসুদ রেজা বলেন, ‘আমাদের দেশে রাজনৈতিক ও পারিপার্শ্বিক বিভিন্ন কারণে অনেক জায়গায় প্রত্নতাত্ত্বিক ভবন ভেঙে ফেলা হচ্ছে । যার ফলে আমাদের সাংস্কৃতিক ঐতিহ্য ও প্রত্নতাত্ত্বিক নিদর্শন চিরতরে হারিয়ে যাচ্ছে। এসব সংরক্ষণে সনাতন পদ্ধতিতে দ্রুত সময়ে ডকুমেন্টেশন তৈরি করা সম্ভব নয়। সময় স্বল্পতার জন্য আমরা এই নিদর্শনগুলোকে বাঁচাতে পারি না। আর এ সমস্যার উত্তরণ করতেই কিছু উন্নত প্রযুক্তির অ্যাপ ব্যবহার করে স্বল্প সময়ে যেকোন স্থাপনার কোনো রকম এরোর ছাড়াই থ্রিডি ডকুমেন্টেশন তৈরি করা সম্ভব হচ্ছে।’
তিনি আরও বলেন, ‘আমরা ইতিমধ্যে ২০২১ সালের ১৮ ডিসেম্বর থেকে প্রায় এক বছর যাবৎ দেশের বেশ কয়েকটি স্থাপনার থ্রিডি ডকুমেন্টেশনের কাজ করেছি। এর মধ্যে পাহারপুর সোমপুর বিহার, শ্যামসুন্দর মন্দির, খুলনা জিলা স্কুল ও ষাটগম্বুজ মসজিদ অন্যতম।’
এ সময় বিশ্ববিদ্যালয়ের কলা ও মানবিকী অনুষদের ডিন অধ্যাপক ড. মোজাম্মেল হক বলেন, ‘এর আগে সরকার দেশের প্রত্নতাত্ত্বিক স্থাপনা পুনরুদ্ধারের জন্য দেশের বাহিরে থেকে বিশেষজ্ঞদের এনে দৈনিক ৮০০ ডলার সমমানের অর্থ খরচ করে এ কাজ করাতো। এখন আমাদের দেশের শিক্ষার্থীদের প্রশিক্ষণ দিয়ে দেশের টাকা দেশে রেখে নিজস্ব প্রযুক্তি ব্যবহার করে স্বল্প খরচে বিশ্বমানের থ্রিডি ডকুমেন্টেশন তৈরি করা সম্ভব হচ্ছে। ফলে আমরা আমাদের ঐতিহ্য ও সংস্কৃতিকে সংরক্ষণ করতে পারছি।’
সংবাদ সম্মেলনে প্রত্নতত্ব বিভাগের সহযোগী অধ্যাপক নূরুল কবির বলেন, ‘বিভিন্ন প্রাকৃতিক দুর্যোগ, ভূমিকম্প বা কৃত্রিম ক্ষতিসাধনের ফলে কোনো প্রত্নতাত্ত্বিক স্থাপনার ক্ষতিসাধন হলে এই থ্রিডি ডকুমেন্টেশন ব্যবহার করে পুনরায় সেই স্থাপনার অবিকল প্রতিকৃতি তৈরি করা সম্ভব। এই প্রত্নতাত্ত্বিক পুনরুদ্ধারের কাজগুলো আগে আমরা হাতে করতাম। এতে অনেক সময় লাগতো। বর্তমানে এই উন্নত প্রযুক্তি ব্যবহারের মাধ্যমে একটি কাজ যেখানে ২ মাস লাগতো, সেটা ২ দিনে করা সম্ভব হবে।’
এসময় অন্যান্যদের মধ্যে উপস্থিত ছিলেন ‘সাইয়ার্ক’-এর ডিরেক্টর ক্যাসি হ্যাডিক, অস্ট্রেলিয়ার কার্টিন বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রত্নতাত্ত্বিক ড. হাফিজুর রহমান, খুলনা বিশ্ববিদ্যালয়ের স্থাপত্য বিভাগের অধ্যাপক এটিমএম মাসুদ রেজা প্রমুখ।
Array