বঙ্গবন্ধু হত্যাকাণ্ডের পর বিএনপি প্রতিষ্ঠাতা জিয়াউর রহমান অপরাধীদের জড়ো করে পাহাড়ের পরিবেশ অশান্ত করেছেন বলে মন্তব্য করেছেন সংস্কৃতিবিষয়ক মন্ত্রণালয়ের প্রতিমন্ত্রী কেএম খালিদ। পার্বত্য শান্তিচুক্তির ২৫ বছর উদযাপনে গতকাল শুক্রবার রাজধানীর সিরডাপ মিলনায়তনে ‘পাহাড়ের সম্প্রীতি’ শীর্ষক আলোচনা সভায় তিনি এ মন্তব্য করেন।
কেএম খালিদ বলেন, তারা পাহাড়ের পরিবেশ অশান্ত করতে কাজ করেছে। পাহাড়ে ভারতীয় বিচ্ছিন্নতাবাদী উলফাকে আশ্রয় ও আর্থিক সহায়তা দিয়েছেন জিয়াউর রহমান। এ নিয়ে দীর্ঘদিন ভারতের সঙ্গে বাংলাদেশের সম্পর্কের টানাপড়েন চলেছে।
জিয়া-এরশাদ শাসনামলের প্রসঙ্গ টেনে তিনি বলেন, গণতান্ত্রিক সরকার না থাকায় সামরিক শক্তিগুলো পাহাড়কে অশান্ত করে তোলে। প্রধানমন্ত্রীর ঐকান্তিক প্রচেষ্টায় এখন পাহাড়ে শান্তির সুবাতাস বইছে। তবে পাহাড়িদের নিজেদের মধ্যে সংঘাত রয়েছে। আনসারুল্লাহ বাংলাটিমসহ বিভিন্ন সন্ত্রাসীগোষ্ঠী পাহাড়ে আশ্রয় নিয়ে দেশের পরিস্থিতি অস্থিতিশীল করছে।
জিয়া পরিবারের সবাইকে খুনি আখ্যা দিয়ে খালিদ বলেন, বঙ্গবন্ধুসহ জাতীয় চার নেতাকে হত্যায় জিয়াউর রহমানের প্রত্যক্ষ পরিকল্পনা ও অংশগ্রহণ ছিল। তারেক রহমানের হাতে আওয়ামী লীগ পরিবারের ২৪ জনের রক্ত লেগে আছে। তারেকের পরিবারের সবার হাতে খুনের রক্ত।
অনুষ্ঠানে বিশ্ববিদ্যালয় মঞ্জুরি কমিশনের সাবেক চেয়ারম্যান এবং শান্তিচুক্তি প্রক্রিয়ার সঙ্গে সরাসরি সম্পৃক্ত অধ্যাপক আব্দুল মান্নান বলেন, পাহাড়ে জমি সংক্রান্ত সবচেয়ে বড় বিরোধ ছিলো। তা অনেকটাই কেটে গেছে। পাহাড়বাসী মেনে নিয়েছেন, বরং বাঙালিদের কিছু আপত্তি থাকলেও তা নিয়ে বাজে কোনো প্রতিক্রিয়া কেউ দেখাননি। তিনি বলেন, আজ কেবল পাহাড়ে সম্প্রীতির কথা না বলে আমাদের সবার দেশের সম্প্রীতির কথা বলা উচিত। পাহাড়ের পরস্থিতি ঘোলাটে করে ফায়দা লোটার জন্য একটি মহল তৎপর আছে বলে মন্তব্য করে অধ্যাপক আব্দুল মান্নান বলেন, ওখানে কেএনএফ নামের একটি বিচ্ছিন্নতাবাদীর জন্ম হয়েছে। সেখানে আমাদের দেশেরই বাঙালি সত্তা তাদের জঙ্গিবাদের ট্রেনিং দিচ্ছে অর্থের বিনিময়ে। আমাদের জঙ্গিবাদে জড়িত যারা তাদের ট্রেনিং দিতে দোকান খুলে বসেছে। কত যুবক বাড়ি থেকে চলে যায়, পরে পার্বত্য চট্টগ্রামে গিয়ে গ্রেপ্তার হয়।
পার্বত্যাঞ্চলে কেন এখনো শান্তি বিরাজ করতে পারে না, তার নানাবিধ কারণ আছে দাবি করে অধ্যাপক আব্দুল মান্নান বলেন, আগে খুব বেশি অশান্ত ছিল না। পরবর্তীকালে এত আত্মঘাতী হয়ে উঠল, এর দায়দায়িত্ব বিএনপি প্রতিষ্ঠাতা জিয়াউর রহমানকে নিতে হবে। রাতারাতি ট্র্যাক-বাস ভর্তি করে নদীভাঙা মানুষদের পুনর্বাসন করার নামে সেখানে তিনি নামিয়ে দিয়েছিলেন। এসব মানুষকে কঠিন এক পরিস্থিতির মধ্যে ফেলে দিয়েছেন।
অনুষ্ঠানে সভাপতির বক্তব্যে সম্প্রীতি বাংলাদেশের আহ্বায়ক পীযূষ বন্দ্যোপাধ্যায় বলেন, পাহাড়ের শান্তি চুক্তির ২৫ বছর কেটে গেছে । চুক্তির ৭২টি ধারার মধ্যে বাস্তবায়ন হয়েছে ৪৮টি আর ১৫টি আংশিক, আটটি বাস্তবায়নের কাজ চলছে। হয়েছে রাস্তাসহ অবকাঠামো উন্নয়ন।
চুক্তির নানা দিক তুলে ধরে পীযূষ বন্দ্যোপাধ্যায় বলেন, এই চুক্তির ফলে পাহাড়ের রাজনৈতিক স্বস্তি প্রকাশ্যে এসেছে। পাহাড়ের শান্তি ফেরাতে শুধু সরকার কিংবা সেনাবাহিনীর ওপর নির্ভর করে থাকলে হবে না। সকলকে একসঙ্গে কাজ করার কথাও জানান তিনি। তিনি আরো বলেন, এই সরকারের দূরদর্শিতায়ই পাহাড়ে এখনো শান্তি আছে। যারা প্রোপাগাণ্ডা করছে, তাদেরকে প্রতিহত করতে হবে।
সম্প্রীতি বাংলাদেশের সদস্য সচিব অধ্যাপক ডা. মামুন আল মাহতাব স্বপ্নীলের সঞ্চালনায় অনুষ্ঠানে আরো বক্তব্য রাখেন সাবেক সচিব ও সম্প্রীতি বাংলাদেশের যুগ্ম আহ্বায়ক নাসির উদ্দিন আহমেদ। বক্তব্য রাখেন সম্মিলিত সাংস্কৃতিক জোটের নির্বাহী সদস্য শেখ এনায়েত হোসেন বাবলু, রাজনৈতিক বিশ্লেষক সুভাষ সিংহ রায় প্রমুখ।
Array