যুক্তরাষ্ট্রে নতুন করে চাকরি হচ্ছে ২৬ লাখ মানুষের। নিয়োগকর্তারা গত অক্টোবরেই দ্রুততার সাথে নতুন এ নিয়োগ দিয়েছেন।
নিয়োগ প্রক্রিয়ায় আরো ২৬ লাখ ১ হাজার মানুষ নতুন পদে চাকরিতে যোগ দেবেন। দুই বছরের মহামারীর মন্দা শেষ হওয়ার পর, গত মাসের এই নিয়োগ অর্থনীতিতে ব্যাপক গতির চিহ্ন বহন করে।
মহামারীর সময়ে বেকারত্ব ৩.৫ শতাংশ থেকে বেড়ে ৩.৭ শতাংশ হয়ে যায়, যা গত ৫ বছরের মধ্যে সবচেয়ে বেশি। এই নিয়োগ এ কথাই প্রমাণ করে যে, নির্বাচন এগিয়ে আসার সাথে সাথে অর্থনীতি একটা দৃঢ় প্রবৃদ্ধির মধ্য দিয়ে যাচ্ছে। তবে বেদনাদায়ক মুদ্রাস্ফীতি রয়ে গেছে।
এই শক্তিশালী কর্মবাজার ফেডারেল রিজার্ভে চ্যালেঞ্জগুলোকে আরও বাড়িয়ে তুলছে। এই পরিস্থিতি তখন সৃষ্টি হলো যখন, সবচেয়ে উচ্চমাত্রার মুদ্রাস্ফীতি নিয়ন্ত্রণের লক্ষ্যে ফেডারেল রিজার্ভ, ১৯৮০ সালের পর সবচেয়ে দ্রুততার সাথে সুদহার বাড়িয়েছে। নিয়মিত নিয়োগ, যথাযথ মজুরি প্রদান এবং কম মাত্রার বেকারত্ব শ্রমশক্তির জন্য মঙ্গলকর। তবে এই প্রবণতা নিত্যপণ্যের দাম বৃদ্ধিতে ভূমিকা রাখছে।
নির্বাচনের আগে, অক্টোবরের এই নিয়োগ-সংখ্যাই হলো সবশেষ গুরুত্বপূর্ণ অর্থনৈতিক প্রতিবেদন। ভোটাররা এই মাধ্যমে অর্থনৈতিক অবস্থা এবং নিজের অর্থনৈতিক জীবনের দিকে মননিবেশ করতে পারবে। দীর্ঘস্থায়ী মুদ্রাস্ফীতি অনেক পরিবারের অর্থনৈতিক পরিকল্পনায় আঘাত হানছে। আর মঙ্গলবার শেষ হতে যাওয়া মধ্যবর্তী কংগ্রেস নির্বাচন ভোটারদের আরো উদ্বিগ্ন করে তুলেছে। দেশজুড়ে রিপাবলিকান প্রার্থীরা কংগ্রেসের নিয়ন্ত্রণ ফিরে পাওয়ার লক্ষ্যে মুদ্রাস্ফীতি নিয়ে ডেমোক্রেটদের আক্রমণ করছেন।
মন্দা শেষ হওয়ার পর নিয়োগকর্তারা যে কাজের জায়গা সৃজন করেছেন, তা উচ্চ মুদ্রাস্ফীতির মধ্যেও ভোক্তাদের ক্রয়ক্ষমতা বাড়িয়েছে। এমন কি উচ্চ মূল্যস্ফীতির মধ্যেও ক্রয়ক্ষমতা বাড়িয়েছে। অনেক ক্ষেত্রেই শ্রমিকের ঘাটতি রয়েছে। আর এটা ব্যবসায়ীদেরকে শ্রমিকদের আকৃষ্ট করতে এবং তাদের ধরে রাখার জন্য আরও বেশি অর্থ ব্যয় করতে বাধ্য করছে।
প্রেসিডেন্ট জো বাইডেন এবং ডেমোক্রেট কংগ্রেশনালরা নিয়োগের এই জোরালো গতিকে তাদের নীতির ইতিবাচক প্রভাব বলে ইঙ্গিত করেছেন। তাদের নীতিগুলি আমেরিকানদের মন্দার পরে আগের চেয়ে দ্রুত কাজ পেতে সহায়তা করেছে। কিন্তু এই বার্তাটি মধ্যবর্তী রাজনৈতিক প্রচারাভিযানে মুদ্রাস্ফীতি বৃদ্ধির কারণে কাজে আসেনি। অনেক আমেরিকাবাসী ডেমোক্রেটদের পরিচালিত কংগ্রেস ও হোয়াইট হাউসের নেতৃত্ব চলমান অর্থনৈতিক পরিস্থিতি নিয়ে হতাশা প্রকাশ করেছেন। সুদের হার বৃদ্ধির জোরালো ফেডারেল নীতির কারণে, ঋণের খরচ বেড়েছে। এর ফলে অর্থনীতিতে বিরূপ প্রবণতা দেখা দিচ্ছে। এমন অবস্থায় আবাসন ও প্রযুক্তি খাতে নিয়োগ কমছে ব্যাপকভাবে।
বিশেষ করে আবাসন এবং প্রযুক্তির মতো শিল্পে, নিয়োগ হ্রাস পেয়েছে। কিছু প্রযুক্তি কোম্পানি, যেমন- রাইড-হেইলিং ফার্ম লিফ্ট এবং পেমেন্ট কোম্পানি স্ট্রাইপ, তারা শ্রমিকদের ছাঁটাই করার পরিকল্পনা ঘোষণা করেছে। অ্যামাজন চলতি সপ্তাহে বলেছে যে এটি তার করপোরেট নিয়োগ স্থগিত করবে। উদাহরণ হিসেবে পরিবহন পরিষেবা কোম্পানি লিফট এবং আর্থিকসেবা প্রতিষ্ঠান স্ট্রাইপের নাম উল্লেখ করা যায়। তারা ছাঁটাই পরিকল্পনা ঘোষণা করেছে। অ্যামাজন বলছে যে তারা তাদের করপোরেট নিয়োগ বন্ধ রাখবে।
বড় কোম্পানিগুলোর এরকম ঘোষণা সত্ত্বেও বৃহত্তর অর্থনীতিজুড়ে ছাঁটাই অস্বাভাবিকভাবে কম। বরং নিয়োগ বাড়ছে। ভ্রমণ, রেস্তোরাঁ, উৎপাদন ও স্বাস্থ্য খাতে এখনো নিয়োগ চলছে অব্যাহতভাবে। সাউথ-ওয়েস্ট এয়ারলাইন্স তার বিনিয়োগকারীদের গত সপ্তাহে জানিয়েছে যে, এই বছর তারা আরো ১০ হাজার কর্মী নিয়োগের পথে আছে। এর মধ্যে ১২০০ পাইলন রয়েছে। ল্যাবরেটরি করপোরেশন অব আমেরিকা বলেছে যে, তারাও নিয়োগের পরিকল্পনা করছে।
গত ২ নভেম্বর এক সংবাদ সম্মেলনে ফেডারেল চেয়ার জেরোম পওয়েল বলেছেন, শক্তিশালী শ্রমবাজার মুদ্রাস্ফীতির ওপর চাপ বাড়াচ্ছে, যেহেতু ব্যবসা বড়ছে, এর জন্য মূল্য পরিশোধও বাড়ছে।
অর্থনীতি এখনো ঊর্ধ্বমুখী। জুলাই-সেপ্টেম্বর প্রান্তিকে এটা বছরে ২.৬ হারে বেড়েছে। এই বৃদ্ধির মধ্যেও মূল্যস্ফীতি আশঙ্কাজনকহারে বেশি। আর ফেডারেল নীতি ভোক্তা ও ব্যবসায়ীদের জন্য ঋণের খরচ বাড়িয়ে দিচ্ছে। অনেক অর্থনীতিবিদ মনে করছেন আগামী বছরের শুরু দিকে আর একটি মন্দা আসছে।
Array