শনিবার সন্ধ্যায় রাজধানীর একটি হাসপাতালে বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের সমন্বয়ক নাহিদ একটি শীর্ষস্থানীয় ইংরেজী সংবাদমাধ্যমকে বলেন, জ্ঞান হারানোর আগ পর্যন্ত তাকে মারধর করা হয়েছিল।
তিনি বলেন, ‘শুক্রবার রাতে হঠাৎ কারফিউ জারি হওয়ায় আমি বাসায় ফিরতে পারিনি, বন্ধুর বাসায় থেকে যাই। রাত ২টার দিকে গেট ভেঙে পুলিশ পরিচয়ে একদল লোক ওই ভবনে ঢোকে। আমি তখন ছাদে চলে যাই। কয়েকজন ছাদে এসে আমাকে তাদের সঙ্গে যেতে বলে। চার-পাঁচজন জোর করে নিচে নামিয়ে গাড়িতে তোলে। নিচে তিন-চারটি পুলিশ ও বিজিবির গাড়ি ছিল। তারা তিন-চার স্তরের কাপড় দিয়ে আমার চোখ বেঁধে ফেলে।’
‘গাড়িটা ৩০-৪০ মিনিটের মতো চলে। চোখ খোলার পর আমি দেখি যে আমাকে একটা রুমে আনা হয়েছে। সেখানে কয়েকজন আমাকে আন্দোলন সম্পর্কিত কয়েকটি প্রশ্ন জিজ্ঞাসা করেন। আমরা কেন আন্দোলন করছি, উদ্দেশ্য কী, কর্মসূচি কেন প্রত্যাহার করছি না, বাইরে থেকে কারা মদদ দিচ্ছে, এই আন্দোলনের পেছনে কারা আছে—এসব প্রশ্ন জিজ্ঞেস করা হয়। আমার উত্তরে তারা সন্তুষ্ট হচ্ছিলেন না। এক পর্যায়ে শুরু হয় মারধর। শারীরিক ও মানসিক নির্যাতন শুরু করে।’
নাহিদ ইসলাম আরও বলেন, ‘লোহার কিছু একটা দিয়ে আমাকে আঘাত করা হয়। একটা পর্যায়ে আমি জ্ঞান হারাই।’শনিবার ভোরবেলায় জ্ঞান ফেরার পর রাস্তার পাশে ওভারব্রিজের নিচে নিজেকে আবিষ্কার করেন নাহিদ।
তিনি বলেন, ‘ভোরের কোনো একটা সময়ে আমার জ্ঞান ফিরে আসে। সাইনবোর্ড দেখে বুঝতে পারি যে এটা পূর্বাচল এলাকা। সেখান থেকে একটা সিএনজি ভাড়া করে আমি বাসায় চলে আসি। পরে আমার পরিবারের সদস্যরা আমাকে হাসপাতালে নিয়ে যায়।’
দুপুর ১২টার দিকে ঢাকার একটি হাসপাতালে ভর্তি হন নাহিদ। তার দুই বাহুতে, পিঠে ও বাম পায়ের উরুতে গুরুতর জখমের চিহ্ন আছে।
রোববার সকালে নাহিদ ঐ সংবাদম্যাধ্যমকে বলেন, ‘হাসপাতালে ভর্তি হওয়ার পর খবর পেয়ে সাংবাদিকসহ আরও অনেকে আসতে শুরু করেন। সে কারণে হাসপাতালেও ঝামেলা হয়। হাসপাতাল থেকে আমার ভর্তি বাতিল করা হয়। এক প্রকার নিরাপত্তাহীনতায় চিকিৎসা নিতে হচ্ছে।’
জানতে চাইলে হাসপাতালের চিকিৎসক বলেন, ‘তার শরীরের বিভিন্ন স্থানে অভ্যন্তরীণ রক্তক্ষরণ আছে। এক্স-রে রিপোর্ট পেলে জানতে পারব তার শরীরে কোনো ফ্রাকচার আছে কি না। তবে তিনি মানসিকভাবে শক্ত আছেন।’
Array