নানা উদ্বেগ-উৎকণ্ঠা শেষে সোমবার (১৩ মে) বিকেলে বঙ্গোপসাগরের কুতুবদিয়া চ্যানেলে পৌঁছেছে জলদস্যুর কবল থেকে মুক্ত হওয়া জাহাজ এমভি আবদুল্লাহ। সুস্থভাবেই ফিরেছেন জাহাজে থাকা ২৩ নাবিক। তারা মঙ্গলবার (১৪ মে) বিকেলে চট্টগ্রাম বন্দরের এনসিটি কনটেইনার টার্মিনালে পৌঁছাবেন।
বিষয়টি নিশ্চিত করে এমভি আবদুল্লাহর মালিকপক্ষ কেএসআরএম শিল্পগ্রুপের এসআর শিপিংয়ের প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তা মেহেরুল করিম ঢাকা পোস্টকে বলেন, নাবিকরা বিকেল ৪টায় পৌঁছাবেন। তারা বর্তমানে লাইটারেজ জাহাজেই রয়েছেন। নাবিকদের বরণে এরইমধ্যে মালিকপক্ষ প্রস্তুতি নিয়েছে। বন্দর কর্তৃপক্ষও আলাদা কর্মসূচি নিয়েছে।
এদিকে এমভি আবদুল্লাহর দায়িত্ব গ্রহণ করেছেন ২৩ জন নাবিকের নতুন একটি টিম।
অন্যদিকে এমভি আবদুল্লাহ কুতুবদিয়ায় কিছু মালামাল খালাস শেষে বুধবার (১৫ মে) বন্দরের বহির্নোঙরে পৌঁছাবে। সেখানে বাকি মালামাল খালাস হবে। এর আগে ৫৬ হাজার টন চুনাপাথর বোঝাই করে গত ২৯ এপ্রিল জাহাজটি সংযুক্ত আরব আমিরাতের মিনা সাকার বন্দর ত্যাগ করে।
কার্গো নিয়ে আফ্রিকার মোজাম্বিকের মাপুতো বন্দর থেকে সংযুক্ত আরব আমিরাত যাওয়ার পথে গত ১২ মার্চ দুপুরে এমভি আবদুল্লাহকে জিম্মি করে সোমালিয়ান দস্যুরা। অস্ত্রের মুখে দস্যুরা সেখানে থাকা ২৩ নাবিককে একটি কেবিনে আটকে রাখে। আটকের পর জাহাজটিকে সোমালিয়ার উপকূলে নিয়ে যাওয়া হয়। সেখানে জিম্মিকালীন সময়ে মালিকপক্ষের তৎপরতায় সমঝোতা হয় জলদস্যুদের সঙ্গে।
১৩ এপ্রিল বাংলাদেশ সময় দিবাগত রাত ৩টা ৮ মিনিটের দিকে এমভি আবদুল্লাহ থেকে দস্যুরা নেমে যায়। এর আগে একই দিন বিকেলে দস্যুরা তাদের দাবি অনুযায়ী মুক্তিপণ বুঝে নেয়। একটি বিশেষ উড়োজাহাজে মুক্তিপণ বাবদ ৩ ব্যাগ ডলার এমভি আবদুল্লাহর পাশে সাগরে ছুড়ে ফেলা হয়। স্পিড বোট দিয়ে দস্যুরা ব্যাগ ৩টি কুড়িয়ে নেয়। দস্যুমুক্ত হয়ে ১৩ এপ্রিল দিবাগত রাতে সোমালিয়ার উপকূল থেকে আরব আমিরাতের পথে রওনা দেয় এমভি আবদুল্লাহ।
২১ এপ্রিল এমভি আবদুল্লাহ সংযুক্ত আরব আমিরাতের আল হামরিয়াহ পৌঁছে। সেখানে কার্গো খালাস করে জাহাজটি একই দেশের মিনা সাকার থেকে কার্গো লোড করে দেশের উদ্দেশ্যে রওনা দেয়।
কবির গ্রুপের অঙ্গপ্রতিষ্ঠান এসআর শিপিংয়ের মালিকানাধীন ‘এমভি আবদুল্লাহ’ আগে ‘গোল্ডেন হক’ নামে পরিচিত ছিল। ২০১৬ সালে তৈরি বাল্ক কেরিয়ারটির দৈর্ঘ্য ১৮৯ দশমিক ৯৩ মিটার এবং প্রস্থ ৩২ দশমিক ২৬ মিটার। গত বছর জাহাজটি এসআর শিপিং কিনে নেয়। বিভিন্ন ধরনের পণ্য নিয়ে আন্তর্জাতিক রুটে চলাচলকারী এরকম মোট ২৩টি জাহাজ আছে কবির গ্রুপের বহরে।
২০১০ সালের ডিসেম্বরে আরব সাগরে সোমালি জলদস্যুদের কবলে পড়েছিল বাংলাদেশি জাহাজ জাহান মণি। ওই সময় জাহাজের ২৫ নাবিক এবং প্রধান প্রকৌশলীর স্ত্রীকে জিম্মি করা হয়। নানাভাবে চেষ্টার পর ১০০ দিনের চেষ্টায় জলদস্যুদের কবল থেকে মুক্তি পান তারা।
Array