বিশ্বকাপ ক্রিকেটের প্রথম তিন আসরের ফাইনালে, তার মধ্যে শুরুর দুবারই চ্যাম্পিয়ন হয়েছিল ওয়েস্ট ইন্ডিজ। তৃতীয় আসরে তাদের কাছ থেকে শিরোপা ছিনিয়ে নিয়েছিল কপিল দেবের ভারত। ১৯৮৩ সালে লর্ডসের সেই ফাইনালের পর ক্যারিবীয় ক্রিকেটের অনেককিছু বদলে গেছে। ভাঙা-গড়ার মধ্য দিয়ে যাওয়া সেই দলটি আসন্ন ওয়ানডে বিশ্বকাপে খেলার যোগ্যতা পূরণ করতে পারেনি। বাছাইপর্বের লড়াইয়ে বিশ্বকাপ থেকে তাদের ছিটকে দিয়েছে দুর্বল স্কটল্যান্ড।
বিশ্বকাপ বাছাইপর্বের গ্রুপপর্বে জিম্বাবুয়ের কাছে পরাজিত হয়েছিল ক্যারিবীয়রা। সেই সময়ই তাদের বিশ্বকাপ খেলা সংশয়ে পড়ে যায়। তবে তার ষোলোআনা পূর্ণতা দিয়েছে স্কটল্যান্ড। বাছাইয়ের সুপার সিক্সের ম্যাচে তারা ড্যারেন সামির দলকে ৭ উইকেটের বড় ব্যবধানে হারিয়েছে।
জিম্বাবুয়ের হারারেতে ওয়েস্ট ইন্ডিজের হারের খবরটা নিয়ে আলোচনা হচ্ছিল লর্ডসেও। ইংল্যান্ড ও অস্ট্রেলিয়ার অ্যাশেজ টেস্টের চতুর্থ দিনের খেলায় ধারাভাষ্য দিতে আসা অস্ট্রেলিয়ার সাবেক অধিনায়ক রিকি পন্টিংয়ের এক চোখ ছিল হারারেতে। ওয়েস্ট ইন্ডিজের বিশ্বকাপ থেকে বাদ পড়া নিয়ে ইংল্যান্ডের সাবেক অধিনায়ক মাইক আথারটনের সঙ্গে তিনি আলাপ করছিলেন। আলোচনার ফাঁকে হতাশ হয়েই পন্টিং বললেন, ‘ওরা (ওয়েস্ট ইন্ডিজ) কত দ্রুত কতটা নিচে নেমে এসেছে, ভাবা যায়!’
পন্টিংয়ের মতো একই প্রশ্ন নিশ্চয়ই ক্রিকেট সমর্থকদের মনেও ঘুরপাক খাচ্ছে। তবে বিষয়টিকে হয়তো উইন্ডিজদের পতন বললে বাড়িয়ে বলা হবে। তবে কিছু বিষয়ে নজর রাখলে সেটিও অমূলক মনে হবে না। টি-টোয়েন্টি সংস্করণ বাদে বর্তমান ক্রিকেটে ক্যারিবীয়দের তেমন দাপট নেই বললেই চলে। অথচ এই উইন্ডিজরাই বিশ্ব ক্রিকেটে কত বাঘা বাঘা কিংবদন্তীর জন্ম দিয়েছে।
কোর্টনি ওয়ালশ, কার্টলি অ্যামব্রোস, ম্যালকম মার্শালের নাম শুনলে এখনও দুঃস্বপ্ন দেখেন ব্যাটারেরা। যাদের বাউন্সারের ভয়ে কাঁপতেন সবাই। ক্লাইভ লয়েড, ভিভ রিচার্ডসরা ব্যাট হাতে বিশ্ব শাসন করেছেন। ১৯৭৫ এবং ১৯৭৯ সালে বিশ্বকাপ জিতে তার প্রমাণও দিয়েছিলেন তারা। কিন্তু এখন কেমার রোচ, জেসন হোল্ডার, আলজারি জোসেফদের নাম কষ্ট করে মনে রাখতে হয়। ব্রেন্ডন কিং, জনসন চার্লসের মতো ব্যাটারদের আইসিসির ক্রমতালিকায়ও খুঁজে পাওয়া যায় না। সাদা বলের ক্রিকেটে কোনো ক্যারিবিয়ান ক্রিকেটার প্রথম ১০ জনে নেই। তবু পড়ে পাওয়া চোদ্দ-আনার মতো টেস্টে অলরাউন্ডারদের তালিকায় ষষ্ঠ এবং সপ্তম স্থানে রয়েছেন যথাক্রমে জেসন হোল্ডার এবং কাইল মায়ার্স। তারা ছাড়া আর কেউ সেই ক্রমতালিকায় নেই।
উইন্ডিজদের এমন দৈন্যদশার পেছনে বেশকিছু কারণ তুলে ধরেছে ভারতীয় সংবাদমাধ্যম আনন্দবাজার পত্রিকা। যেখানে সাবেক ভারতীয় ক্রিকেটার অরুণ লালের বরাত দিয়ে সেসবের বিস্তারিত ব্যাখ্যা করা হয়। ভারতের হয়ে ক্যারিবীয়দের বিপক্ষে নিজের শেষ ম্যাচ খেলা অরুণ জানান, ‘সেই সময় ওয়েস্ট ইন্ডিজ চ্যাম্পিয়ন দল ছিল। কী অসম্ভব প্রতিভাবান সব ক্রিকেটার। ব্যাটিংয়ে রিচার্ডস, লয়েডরা ছিল। বল হাতে ছিল মার্শাল, ওয়ালশের মতো ক্রিকেটাররা। যেকোনো দলকে ভয় ধরিয়ে দেওয়ার মতো শক্তিশালী। তারা পরপর দুবার বিশ্বকাপ জিতেছিল। অথচ এবার তারাই নেই!’
ইডেনে ২০১৬ সালে টি-টোয়েন্টি বিশ্বকাপ জিতেছিল ওয়েস্ট ইন্ডিজ। এবার ভারতের মাটিতে হতে যাওয়া ৫০ ওভারের বিশ্বকাপে তাদের খেলতেই যাওয়া হবে না। দীর্ঘদিন ধরে দলটি ভুগছে উল্লেখ করে অরুণ লাল বলেন, ‘এটা একদিনের ঘটনা নয়। দীর্ঘদিন ধরেই ওয়েস্ট ইন্ডিজ ক্রিকেট মানচিত্র থেকে পিছিয়ে যাচ্ছিল। ওদের দেশের তরুণেরা অ্যাথলেটিক্স ও বাস্কেটবলের মতো খেলার দিকে বেশি ঝুঁকছে। আর্থিকভাবে আমেরিকার দিকে তাকিয়ে থাকে ওরা। সেদেশে ক্রিকেট খুব বেশি গুরুত্ব পায় না। তাই ক্যারিবিয়ানরাও ক্রিকেট নয়, অন্য খেলায় মেতে থাকে।’
Array