আগামী মাস থেকে জনপ্রতি বরাদ্দ ১২ ডলার থেকে কমিয়ে ১০ ডলার করা হবে বলে জানিয়েছে জাতিসংঘের খাদ্য সংস্থা ওয়ার্ল্ড ফুড পোগ্রাম (ডাব্লিউএফপি)
তহবিল ঘাটতির কারণে জাতিসংঘ খাদ্য সহায়তা কমানোর যে পরিকল্পনা করেছে সেটা বিশ্বের বৃহৎ শরণার্থীদের শিবিরে খাদ্য নিরাপত্তার সংকট ও পুষ্টিহীনতা আরও ঘনীভূত করবে বলে শুক্রবার মানবাধিকার সংস্থাগুলো জানিয়েছে।
২০১৭ সালে মিয়ানমারের রাখাইন রাজ্যে সেনাবাহিনীর দমন-পীড়ন থেকে বাঁচতে প্রায় ৭ লাখ ৩০ হাজার রোহিঙ্গা মুসলিম সংখ্যালঘু জনগোষ্ঠী বাংলাদেশে আশ্রয় নেয়। গণহত্যার উদ্দেশ্যে সেই দমন-পীড়ন চালানো হয়েছিল বলে মনে করে জাতিসংঘ। তার আগে থেকেই বাংলাদেশে অবস্থান করছিল কয়েক লাখ রোহিঙ্গা। বর্তমানে ১২ লাখের বেশি রোহিঙ্গা কক্সবাজার, টেকনাফের ক্যাম্পগুলোতে বসবাস করছেন।
বিশ্বব্যাপী মহামারি অর্থনৈতিক মন্দা এবং সংকটের কারণে দাতাদের বাজেট কমিয়ে দেওয়ায় আগামী মাস থেকে খাদ্য সহায়তার বরাদ্দ কমিয়ে আনা হবে বলে জানিয়েছে ডাব্লিউএফপি।
আন্তর্জাতিক দাতা গোষ্ঠীর কাছে সাড়ে ১২ কোটি ডলারের জরুরি তহবিল চেয়ে ডাব্লিউএফপি বলেছে, ক্যাম্পগুলোর বাসিন্দাদের এক তৃতীয়াংশই শিশু। পুষ্টির অভাবে তাদের স্বাভাবিক বৃদ্ধি বাধাগ্রস্ত হচ্ছে। বেশিরভাগেরই ওজন স্বাভাবিকের তুলনায় কম। এই অবস্থায় তাদের খাদ্যের জন্য জরুরি তহবিল না পেলে তার প্রভাব হবে ব্যাপক ও সুদূরপ্রসারী।
বাংলাদেশে সেভ দ্য চিলড্রেনের কান্ট্রি ডিরেক্টর অনো ভ্যান ম্যানেন এক বিবৃতিতে বলেন, ‘আন্তর্জাতিক দাতারা যদি ৫ লাখের বেশি রোহিঙ্গা শিশু এবং তাদের পরিবারের দিক থেকে মুখ ফিরিয়ে নেয়, তাহলে তা হবে বিশ্বের সবচেয়ে ঝুঁকিতে থাকা এই জনগোষ্ঠীর প্রতি প্রতিশ্রুতির বরখেলাপ।’
জাতিসংঘের দুই বিশেষ দূত মাইকেল ফাখরি ও টম অ্যান্ড্রুজ এক যৌথ বিবৃতিতে বলেছেন, রোহিঙ্গাদের জন্য সহায়তার তহবিলে ঘাটতি হলে তার ফল হবে বিপর্যয়কর। তাদের ভাষায়, ‘রোজার মাসের আগে এভাবে রোহিঙ্গা মুসলমানদের রেশন কমিয়ে দেওয়ার ঘোষণা কোনোভাবেই গ্রহণযোগ্য হতে পারে না।’
কক্সবাজারে বাংলাদেশ সরকারের ত্রাণ ও প্রত্যাবাসন কমিশনার মোহাম্মদ মিজানুর রহমান বলছেন, এই পর্যায়ে এসে বরাদ্দ কমিয়ে দেওয়া হলে শরণার্থীরা কাজের খোঁজে আরো মরিয়া হয়ে উঠবে। তাতে তাদের ক্যাম্পের মধ্যে রাখা আরো কঠিন হয়ে পড়বে।
আইনগতভাবে বাংলাদেশে রোহিঙ্গাদের কাজের সুযোগ নেই। ক্যাম্পের নির্দিষ্ট এলাকার মধ্যেই তাদের থাকার কথা।
কিন্তু ক্যাম্প থেকে পালিয়ে অনেকেই প্রাণের ঝুঁকি নিয়ে ট্রলারে চেপে সাগরপথে মালয়েশিয়া বা ইন্দোনেশিয়ার মতো দেশে যাওয়ার চেষ্টা করছে। তাতে অনেকের সলিল সমাধি হচ্ছে।
ক্যাম্পে শিক্ষা ও কাজের সুযোগ না থাকায় এবং মিয়ানমারে মাতৃভূমিতে ফেরা নিয়ে গভীর অনিশ্চয়তায় রোহিঙ্গারা মাদক পাচারসহ বিভিন্ন অপরাধেও জড়িয়ে পড়ছে।
জাতিসংঘের শরণার্থী বিষয়ক সংস্থা জানিয়েছে, ৬৯ জন রোহিঙ্গাকে নিয়ে একটি নৌকা বৃহস্পতিবার ইন্দোনেশিয়ার আচেহ প্রদেশে পৌঁছেছে।
ডাব্লিউএফপির এশিয়া ও প্রশান্ত মহাসাগরীয় অঞ্চলের পরিচালক জনি আইলিয়েফ বলেন, ‘যে পরিস্থিতির মধ্যে দিয়ে এই জনগোষ্ঠীকে যেতে হয়েছে, যেখানে খুব বেশি সুযোগও তাদের সামনে নেই, সেখানে এভাবে তাদের রেশন কমিয়ে দেওয়া আমার কাছে অচিন্ত্যনীয়।’
কক্সবাজারের একটি ক্যাম্পের বাসিন্দা ১৫ বছর বয়সী নুসরাত জাহান অন্তুর বলেন, যে রেশন তাদের আগে দেওয়া হতো, তাতে তাদের কোনোক্রমে চলতো। ‘এখন যদি আরও কমিয়ে দেয়, আমরা তাহলে বাঁচব কীভাবে?’ প্রশ্ন অন্তুর।
Array