জাতীয় পার্টির চেয়ারম্যান হিসেবে গোলাম মোহাম্মদ (জিএম) কাদের আপাতত দায়িত্ব পালন করতে পারবেন বলে হাইকোর্টের দেয়া আদেশ স্থগিত করেননি আপিল বিভাগের চেম্বার আদালত। একইসঙ্গে বিষয়টি আপিল বিভাগের নিয়মিত বেঞ্চে শুনানির জন্য আগামী ২৭ ফেব্রুয়ারি দিন নির্ধারণ করেছেন আদালত।
বুধবার চেম্বার আদালতের বিচারপতি এম ইনায়েতুর রহিম এ আদেশ দেন।
আদালতে জিএম কাদেরের পক্ষে শুনানি করেন অ্যাডভোকেট শেখ মুহাম্মদ সিরাজুল ইসলাম। রিটের পক্ষে ছিলেন অ্যাডভোকেট সাঈদ আহমেদ রাজা।
গত ৯ ফেব্রুয়ারি জাতীয় পার্টির চেয়ারম্যান হিসেবে গোলাম মোহাম্মদ (জিএম) কাদের দায়িত্ব পালন করতে পারবেন বলে হাইকোর্টের আদেশ স্থগিত চেয়ে আবেদন করা হয়।
এর আগে গত ৫ ফেব্রুয়ারি গঠনতন্ত্র অনুযায়ী জাতীয় পার্টির চেয়ারম্যান হিসেবে গোলাম মোহাম্মদ (জিএম) কাদের দায়িত্ব পালন করতে পারবেন না বলে নিম্ন আদালতের দেয়া রায় স্থগিত করেন হাইকোর্ট। বিচারপতি মো. আব্দুল হাফিজের একক হাইকোর্ট বেঞ্চ এ আদেশ দেন।
গত ১৯ জানুয়ারি গঠনতন্ত্র অনুযায়ী জাতীয় পার্টির চেয়ারম্যান হিসেবে গোলাম মোহাম্মদ (জিএম) কাদেরের দায়িত্ব পালনে নিষেধাজ্ঞার আদেশের বিরুদ্ধে আপিল খারিজ করে দেন জেলা জজ আদালত। পরে এই আদেশের বিরুদ্ধে আপিল বিভাগে আবেদন করেন জিএম কাদের। এরপর গত ১৩ জানুয়ারি গঠনতন্ত্র অনুযায়ী জাতীয় পার্টির চেয়ারম্যান হিসেবে গোলাম মোহাম্মদ (জিএম) কাদের দায়িত্ব পালন করতে পারবেন না বলে আদেশ দিয়েছিলেন আপিল বিভাগ। একইসঙ্গে এ বিষয়ে নিম্ন আদালতে চলমান মামলা ৯ জানুয়ারির মধ্যে নিষ্পত্তির নির্দেশ দেন সর্বোচ্চ আদালত।
গত ২৯ নভেম্বর গঠনতন্ত্র অনুযায়ী জাতীয় পার্টির চেয়ারম্যান হিসেবে গোলাম মোহাম্মদ (জিএম) কাদেরের দায়িত্ব পালনে নিষেধাজ্ঞার আদেশ স্থগিত করেন হাইকোর্ট। পাশাপাশি রুলও জারি করেন আদালত। বিচারপতি শেখ আবদুল আউয়ালের একক হাইকোর্ট বেঞ্চ এ আদেশ দেন।
পরবর্তীতে এই আদেশ স্থগিত চেয়ে আবেদন করা হয়।
গত ৪ অক্টোবর জাপা থেকে বহিষ্কৃত নেতা দলটির সাবেক এমপি জিয়াউল হক মৃধা জাতীয় পার্টির চেয়ারম্যান হিসেবে গোলাম মোহাম্মদ (জিএম) কাদেরের দায়িত্ব পালনে নিষেধাজ্ঞা চেয়ে মামলা করেন। মামলায় বলা হয়, জাতীয় পার্টির প্রতিষ্ঠাতা সাবেক রাষ্ট্রপতি হুসেইন মুহম্মদ এরশাদ ২০১৯ সালের ১৪ সেপ্টেম্বর মৃত্যুবরণ করেন। এরপর বিবাদী জিএম কাদের হাইকোর্ট বিভাগের একটি রিট মামলা বিচারাধীন থাকার পরও জাল-জালিয়াতির মাধ্যমে ওই বছরের ২৮ ডিসেম্বর কাউন্সিল করে নিজেকে চেয়ারম্যান হিসেবে ঘোষণা করেন।
মামলায় আরও বলা হয়, চেয়ারম্যান হওয়ার পর জিএম কাদের গত ৫ মার্চ জাতীয় পার্টির গাজীপুর মহানগর কমিটির উপদেষ্টা আতাউর রহমান সরকার, সাংগঠনিক সম্পাদক সবুর শিকদার, মুক্তিযোদ্ধা বিষয়ক রফিকুল ইসলাম ও কেন্দ্রীয় কমিটির সদস্য ডা. মো. আজিজকে বহিষ্কার করেন। এছাড়া গত ১৪ সেপ্টেম্বর মশিউর রহমান রাঙ্গাকে জাতীয় পার্টির প্রেসিডিয়াম সদস্য পদ থেকে বহিষ্কার করেন তিনি। অন্যদিকে গত ১৭ সেপ্টেম্বর অ্যাডভোকেট জিয়াউল হক মৃধাকেও জাতীয় পার্টি থেকে বহিষ্কার করেন। যা সম্পূর্ণ অবৈধ।
তাই ২০১৯ সালের ২৮ ডিসেম্বর অনুষ্ঠিত জাতীয় পার্টির কাউন্সিলসহ চলতি বছর (২০২২) ১৭ সেপ্টেম্বর পর্যন্ত সব বহিষ্কার আদেশ অবৈধ ঘোষণা করতে এবং হাইকোর্ট বিভাগের রিট ১৫০৫১/২০১৯ নিষ্পত্তি না হওয়া পর্যন্ত জাতীয় পার্টির পরবর্তী কাউন্সিল স্থগিত রাখতে মামলায় আদেশ চাওয়া হয়েছে।
জিয়াউল হক মৃধার এ আবেদনের প্রেক্ষিতে গত ৩১ অক্টোবর ঢাকার প্রথম যুগ্ম জেলা জজ আদালত জাতীয় পার্টির চেয়ারম্যান হিসেবে জিএম কাদেরের দলীয় যাবতীয় কার্যক্রমে নিষেধাজ্ঞার অস্থায়ী আদেশ দেন।
এ আদেশ স্থগিত চেয়ে আবেদন করেন শেখ সিরাজুল ইসলাম, কলিম উল্যাহ মজুমদারসহ বেশ কয়েকজন আইনজীবী। ২৪ নভেম্বর আবেদনটির ওপর শুনানির জন্য জেলা জজ আদালতে মিস আপিল দায়ের করা হয়। সেই আবেদন নামঞ্জুর করেন আদালত।
পরে আদালতের আদেশের বিরুদ্ধে হাইকোর্টে রিভিশন আবেদন করেন জিএম কাদের। ওই আবেদনের প্রেক্ষিতে গত ২৯ নভেম্বর নিম্ন আদালতের আদেশ স্থগিত করেন হাইকোর্ট।
কিন্তু পরদিন বাদীপক্ষের আবেদনে সাড়া দিয়ে হাইকোর্টের আদেশ স্থগিত করে বিষয়টি শুনানির জন্য আপিল বিভাগে পাঠিয়ে দেন চেম্বার আদালত। ফলে তখন পর্যন্ত নিম্ন আদালতের আদেশ বহাল থাকে।
প্রধান বিচারপতির নেতৃত্বাধীন আপিল বিভাগে বিষয়টির ওপর বেশ কয়েকদিন শুনানি অনুষ্ঠিত হয়। আজ (১৪ ডিসেম্বর) আপিল বিভাগ মামলাটি নিম্ন আদালতে নিষ্পত্তি করার আদেশ দেন।
Array