স্পেনের এই শহরে বছরে একবার ঘড়ি যেন পিছিয়ে যায়। ফ্যাশন হোক, খাদ্য অথবা সংগীত– প্রায় সব ক্ষেত্রেই স্পেনের পূর্বে তর্তোসা শহর বছরে চার দিন রেনেসাঁস বা ইউরোপের পুনর্জাগরণের যুগে ফিরে যায়।
ইতিহাস ও ঐতিহ্য বাঁচিয়ে রাখতে স্পেনের এই শহর বছরে একবার ৫০০ বছর আগের সাজে সজ্জিত হয়ে দর্শকদের সামনে জাঁকজমকপূর্ণ সংগীত ও নৃত্য পরিবেশন করে।
পঞ্চদশ ও সপ্তদশ শতাব্দীর মাঝে শিল্প, সংস্কৃতি ও অর্থনীতির ক্ষেত্রে ইউরোপে এক নবজাগরণ ঘটেছিল। তর্তোসাও সেই উজ্জ্বল যুগের স্বাদ পেয়েছিল।
তর্তোসার বাসিন্দা আনা লুইস এর প্রেক্ষাপট বর্ণনা করে বলেন, “স্থাপত্যের ক্ষেত্রে তর্তোসার বিশেষ গুরুত্ব ছিল। ষোড়শ শতাব্দীতে নির্মিত অনেক ভবন আজও অক্ষত রয়েছে। নদীর তীরে অবস্থানের জন্য সহজেই পণ্য পরিবহণ করা যেত। তাই অর্থনীতি ও বাণিজ্যের ক্ষেত্রেও শহরটির যথেষ্ট প্রভাব-প্রতিপত্তি ছিল।”
আনা লুইস এই প্রথম শহরের পতাকা দোলানোর অনুষ্ঠানে অংশ নিচ্ছেন। তথাকথিত “আবান্দেরাদোস”-দের সঙ্গে তিনি যোগ দেবেন। কাতালুনিয়া অঞ্চলের এই শহরের জনসংখ্যা প্রায় ৩,০০০। প্রতি বছর শহরের মানুষ এই উৎসব আয়োজন করেন।
আনা বলেন, “তর্তোসার বাসিন্দাদের কাছে এই উৎসব খুবই জনপ্রিয়। জুলাই মাসে এই উৎসবের জন্য আমরা সব মুখিয়ে থাকি। তখন তর্তোসার প্রাচীন যুগ আবার জীবন্ত হয়ে ওঠে এবং বন্ধুদের সঙ্গে দেখা হয়।”
দিনে প্রায় ৬০টি অনুষ্ঠানের মাধ্যমে দর্শকরা রেনেসাঁ যুগের মধ্যে ডুব দিতে পারেন। খোয়ান্ডা রুইস সুবিরাটস ও খোয়ানা ডোমিংগো সপ্তদশ শতাব্দীর দুই সম্ভ্রান্ত ব্যক্তির চরিত্রে অভিনয় করছেন।
খোয়ান্ডা বলেন, “সে যুগে তর্তোসা কাতালুনিয়ার পঞ্চম বৃহত্তম শহর ছিল। সে সময়কার এক সম্ভ্রান্ত পরিবারের প্রতিনিধি হতে পেরে আমার বুক গর্বে ভরে যাচ্ছে। আজ আমরা যে সংগীত ও নৃত্য পরিবেশন করছি, ঐতিহাসিক নথিপত্রে সে সবের উল্লেখ রয়েছে।”
দুজনেই যথেষ্ট গুরুত্ব দিয়ে প্রস্তুতি নিয়েছেন। এই নিয়ে ১০ বার অংশ নিলেও তারা কয়েক মাস ধরে নিয়মিত নৃত্যের অনুশীলন করেছেন। নিজস্ব উদ্যোগে কস্টিউম তৈরি করা থেকে শুরু করে নৃত্যের অনুশীলনের জন্য যথেষ্ট সময় ব্যয় করতে হয়।
খোয়ানা ডোমিংগো ২০১৩ সাল থেকে এই উৎসবে সক্রিয় ভূমিকা পালন করছেন। তিনি বলেন, “আমার মা এই ড্রেস সেলাই করে তৈরি করেছেন। স্পেনের রেনেসাঁস যুগে কালো ও হালকা বাদামী রংয়ের যে আধিপত্য দেখা যেতো, সেটা মায়ের খুব পছন্দের ছিল।”
মঞ্চে আনা লুইসের আবির্ভাবের সময় এসে গেছে। স্পেনের একমাত্র পতাকা দোলানোর এই অনুষ্ঠান খুবই জনপ্রিয়। সে যুগের মতো আজও মূলত মনোরঞ্জনের জন্যই এমনটা করা হয়। গত কয়েক মাসে প্রতিদিন অনুশীলন চলেছে। প্রায় এক কিলো ওজনের পতাকা নাড়াচাড়া করা মোটেই সহজ নয়।
আনা বলেন, “চোখে সরাসরি রোদ পড়ায় আমরা দেখতে পাচ্ছি না পতাকা কীভাবে দুলছে। ভারসাম্য, অধ্যবসায় ও অনুশীলনই আসল বিষয়। শেষ পর্যন্ত অনুশীলনের উপর সবকিছু নির্ভর করে। আমরা অত্যন্ত ঘনঘন অনুশীলন করেছি। এটা সত্যিই বেশ কঠিন কাজ বটে। তবে কোনো কিছু করে আনন্দ পেলে যতটা সম্ভব ভালো করে সেটা করার তাগিদ জন্মায়।”
গভীর রাত পর্যন্ত ২৫তম রেনেসাঁস উৎসব উদযাপিত হলো। আগামী বছরও তর্তোসা ৫০০ বছর আগের জাঁকজমকপূর্ণ সময়কে আবার জীবন্ত করে তুলবে।
Array