দুর্নীতি ও মানবাধিকার লঙ্ঘন ইস্যুতে বিশ্বের ১১ দেশের ৩০ ব্যক্তির ওপর নিষেধাজ্ঞা ঘোষণা করেছে যুক্তরাজ্য। একই অভিযোগে ৯ দেশের ৪০ ব্যক্তি ও প্রতিষ্ঠানের ওপর নিষেধাজ্ঞা দিয়েছে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রও। তবে দুই দেশের নিষেধাজ্ঞায় থাকা ৭০ ব্যক্তি ও প্রতিষ্ঠানের মধ্যে নেই বাংলাদেশ।
শুক্রবার (৯ ডিসেম্বর) আন্তর্জাতিক মানবাধিকার দিবস ও শনিবার (১০ ডিসেম্বর) মানবাধিকার দিবস উপলক্ষে এমন ব্যবস্থা নেওয়ার কথা জানিয়েছে দেশ দুটি। প্রতিবছর এই দিবস উপলক্ষে তারা এমন ব্যবস্থা গ্রহণ করে থাকে।
মূলত নির্যাতন, যৌন সহিংসতা ও বিক্ষোভে দমনপীড়নের সঙ্গে সরাসরি জড়িত এমন ব্যক্তিকে এ নিষেধাজ্ঞা দিয়েছে যুক্তরাজ্য। এর মধ্যে রাশিয়া ও ইরানের কর্মকর্তারাও রয়েছেন।
নিষেধাজ্ঞা আরোপের ব্যাপারে ব্রিটিশ সরকার বলছে, আন্তর্জাতিক দুর্নীতিবিরোধী দিবস ও বিশ্ব মানবাধিকার দিবস উপলক্ষে আন্তর্জাতিক অংশীদারদের সঙ্গে নিষেধাজ্ঞাগুলো সমন্বিত করা হয়েছে। নিষেধাজ্ঞার তালিকায় এমন ব্যক্তিদের রাখা হয়েছে, যারা বন্দি নির্যাতন ও বেসামরিক নাগরিকদের ধর্ষণের জন্য সেনা মোতায়েনের মতো কর্মকাণ্ডে জড়িত।
ব্রিটিশ সরকারের পররাষ্ট্রমন্ত্রী জেমস ক্লেভারলি এক বিবৃতিতে তিনি বলেন, ‘যারা মানুষের মৌলিক অধিকারগুলোর জঘন্য লঙ্ঘনের সঙ্গে জড়িত, আমাদের এ নিষেধাজ্ঞা তাদের মুখোশ উন্মোচন করবে।’
বিশ্বের মোট ১১টি দেশের নাগরিককে এ নিষেধাজ্ঞার আওতায় আনা হয়েছে। মানবাধিকার লঙ্ঘনে ইরান ও রাশিয়ার সঙ্গে তালিকায় রয়েছে নিকারাগুয়া, পাকিস্তান ও উগান্ডার নাগরিকও। যৌন সহিংসতায় জড়িত থাকায় দক্ষিণ সুদানের স্থানীয় কর্মকর্তাকে নিষেধাজ্ঞা দেয়া হয়েছে।
এছাড়া কাতিবা ম্যাকিনা গ্রুপ নামে মালির একটি সশস্ত্র গোষ্ঠী ও মিয়ানমারের তিন সামরিক প্রতিষ্ঠানকে নিষেধাজ্ঞার তালিকায় রাখা হয়েছে। রাশিয়ার যেসব ব্যক্তিকে নিষেধাজ্ঞা দেয়া হয়েছে তার মধ্যে অন্যতম হচ্ছেন রামিল রাখমাতুলোভিচ ইবাতুলিন নামে রুশ সেনাবাহিনীর এক কর্নেল। ইউক্রেনে সামরিক অভিযানে রাশিয়ার ৯০তম ট্যাংক ডিভিশনের কমান্ডার হিসেবে দায়িত্ব পালন করছেন তিনি।
ইরানের কারা ব্যবস্থার সঙ্গে যুক্ত এমন ১০ কর্মকর্তাকে নিষেধাজ্ঞা দেয়া হয়েছে। এর মধ্যে ছয় জন ইরানি বিচার ব্যবস্থার সঙ্গে যুক্ত। যারা বিভিন্ন আন্দোলনে অংশ নেয়া বিক্ষোভকারীদের মৃত্যুদণ্ডের মতো শাস্তি দেয়ার জন্য দায়ী।
এদিকে মানবাধিকার লঙ্ঘন এবং দুর্নীতিতে জড়িত থাকার অভিযোগে বিশ্বের নয়টি দেশের ৪০ জনেরও বেশি ব্যক্তি ও প্রতিষ্ঠানের ওপর নিষেধাজ্ঞা আরোপ করেছে যুক্তরাষ্ট্রের ট্রেজারি বিভাগ।
যুক্তরাষ্ট্রের ট্রেজারি ফর টেরোরিজম অ্যান্ড ফিন্যান্সিয়াল ইন্টেলিজেন্সের আন্ডার সেক্রেটারি ব্রায়ান ই. নেলসন বলেন, দুর্নীতিবাজ ও মানবাধিকার লঙ্ঘনকারী উভয়ই তাদের কর্মকাণ্ড সম্পাদনে আন্তর্জাতিক আর্থিক ব্যবস্থার ত্রুটিগুলোর ওপর নির্ভর করে। এ ধরনের লোকদের জঘন্য আচরণ প্রকাশ করার মাধ্যমে আমরা তাদের কর্মকাণ্ড বাধাগ্রস্ত করতে, নেটওয়ার্কগুলো ভেঙে দিতে এবং সম্পদের অভাবে ফেলতে পারি।
যে নয়টি দেশের ব্যক্তি ও প্রতিষ্ঠানের ওপর নিষেধাজ্ঞা দেওয়া হয়েছে সেগুলো হলো- উত্তর কোরিয়া, এল সালভাদর, গুয়েতেমালা, গিনি, ইরান, মালি, ফিলিপাইন, রাশিয়া এবং চীন।
এর আগেও মার্কিন ট্রেজারি বিভাগ আলবেনিয়া, বসনিয়া, মন্টিনিগ্রো, কসোভো, উত্তর মেসেডোনিয়া, সার্বিয়া, বেলারুশ, লাইবেরিয়া, গুয়েতেমালা, রাশিয়া, মিয়ানমার এবং ইরানের বিভিন্ন ব্যক্তি ও প্রতিষ্ঠানের ওপর বছরব্যাপী নিষেধাজ্ঞা দিয়েছে।
এই নিষেধাজ্ঞার ফলে দেশ দুটিতে ভ্রমণ করতে পারবে না তালিকাভুক্ত ব্যক্তিরা। এমনকি ব্যক্তি বা প্রতিষ্ঠানের যেসব সম্পদ যুক্তরাষ্ট্র ও যুক্তরাজ্যে রয়েছে তা বাজেয়াপ্ত করা হবে।
গত বছরের এই দিনে মানবাধিকার লঙ্ঘনের অভিযোগ এনে বাংলাদেশ পুলিশের বিশেষ শাখা র্যাপিড অ্যাকশন ব্যাটালিয়ন (র্যাব) এবং এর ছয় কর্মকর্তার ওপর নিষেধাজ্ঞা দিয়েছিল যুক্তরাষ্ট্রের ট্রেজারি বিভাগ।
সেসময় মার্কিন সরকারি দফতরটি জানিয়েছিল, মাদকের বিরুদ্ধে বাংলাদেশ সরকারের যুদ্ধে অংশ নিয়ে র্যাব আইনের শাসন ও মানবাধিকার খর্ব করেছে। যুক্তরাষ্ট্রের জাতীয় নিরাপত্তার স্বার্থ এতে হুমকির মুখে পড়েছে।
সম্প্রতি দেশজুড়ে বেশ কয়েকটি সমাবেশ করেছে বাংলাদেশ জাতীয়তাবাদী দল (বিএনপি)। আজ শনিবার ঢাকায় হয়েছে তাদের এই কর্মসূচির শেষ সমাবেশ। এ উপলক্ষে কোথাও কোথাও সহিংস ঘটনা ঘটেছে। বিরোধীদলীয় নেতাদের গ্রেফতারের বিষয়ে আপত্তি জানিয়ে বিবৃতি দেন কয়েকটি দেশের রাষ্ট্রদূত।
সম্প্রতি আবারও আন্তর্জাতিক নিষেধাজ্ঞা আসতে পারে বলে আশঙ্কা প্রকাশ করে বিএনপির কয়েকজন নেতা। তবে পররাষ্ট্রমন্ত্রী শাহরিয়ার আলম চলতি মাসের শুরুতে জানিয়েছিলেন যে, যুক্তরাষ্ট্র আর কোনও নিষেধাজ্ঞা দেবে না। পররাষ্ট্র প্রতিমন্ত্রীর কথাই সত্যি হলো।
Array