পর্তুগালের জন্য ম্যাচটা ছিল পরীক্ষা নিরীক্ষার। কারণ গ্রুপ পর্বের প্রথম দুই ম্যাচ জিতে এরই মধ্যে নকআউট রাউন্ডে পৌঁছে গেছে ক্রিস্টিয়ানো রোনালদোর পর্তুগাল। অন্যদিকে দক্ষিণ কোরিয়ার জন্য ম্যাচটা বাঁচামরার।
সেই বাঁচামরার ম্যাচে শেষ মুহূর্তে সং হিউং মিন ম্যাজিকে পর্তুগালকে ২-১ গোলে হারিয়েছে দক্ষিণ কোরিয়া। কোরিয়ার শুধু এই ম্যাচ জিতলেও হতো না, গ্রুপের অন্য ম্যাচের দিকেও থাকতে হতো। গ্রুপের অন্য ম্যাচে উরুগুয়ে জয় পেলেও গোলব্যবধানে এগিয়ে থেকে দ্বিতীয় রাউন্ডে গেল দক্ষিণ কোরিয়া।
ম্যাচের ৯১ মিনিট পর্যন্তও ম্যাচে সমতা ছিল। তখন পর্যন্ত গ্রুপ এইচের সমীকরণ অনুযায়ী উঠে যেত উরুগুয়ে ও পর্তুগাল। তবে সেই মুহূর্তে সং হিউং মিন ম্যাজিকই পাল্টে দিয়েছে কোরিয়ানদের ভাগ্য। না, তিনি গোল করেননি। তবে তিনি নিজের ডি বক্সের সামনে থেকে একা বল নিয়ে ছুটে যান প্রতিপক্ষের ডি বক্সের দিকে।
সেখান থেকে নাটমেগ করে বল পাস দেন সতীর্থ হোওয়াং হি চানকে। হি চানের গোলেই জয় নিশ্চিত করে কোরিয়া। জয়ের পরও উদ্যাপন করার সুযোগ ছিল না কোরিয়ার। কারণ উরুগুয়ে-ঘানার ম্যাচ তখনো চলছিল।
তখন উরুগুয়ে আর গোল দিলে বাদ পড়ে যেতে তারা। তবে উরুগুয়ে আর গোল দিতে না পারায় তাদের শেষ ষোলো নিশ্চিত হয়। তবে এমন জয় ডাগআউটে বসে দেখতে পারেননি কোরিয়া কোচ পাওলো বেন্তো। গত ম্যাচে লাল কার্ড দেখায় তার থাকতে হয় গ্যালারিতে।সহজ সমীকরণের ম্যাচে পর্তুগাল কোচ ফার্নান্দো সান্তোস ছয় পরিবর্তন নিয়ে মাঠে নামে। কাতার বিশ্বকাপে পর্তুগালের সেরা তারকা ব্রুনো ফার্নান্দেজকে রাখা হয় বিশ্রামে। তবে দলে ছিলেন গত দুই দিন ধরে দলের সঙ্গে অনুশীলন না করা ক্রিস্টিয়ানো রোনালদো। ম্যাচের শুরুটা হয় পর্তুগালের ডমিনেশনের মাধ্যমে।
ম্যাচে নিজেদের প্রথম আক্রমণেই গোল পেয়ে যায় পর্তুগাল। আক্রমণের শুরুটা করেন দিয়াগো দালোত। তার পাসে গোলপোস্ট থেকে ৬ গজ দূরে বল পেয়ে যান রিকার্দো হোর্তা। হোর্তা দারুণ ফিনিশিংয়ে মাত্র ৫ মিনিটেই এগিয়ে দেন পর্তুগালকে। কোনো মেজর টুর্নামেন্টে এটাই এই পর্তুগিজের প্রথম গোল।
দক্ষিণ কোরিয়ার জন্য জয় ছাড়া অন্য কোনো পথ ছিল না। এক গোলে পিছিয়ে পড়ার পর তাই দক্ষিণ কোরিয়া সমতায় ফেরার জন্য মরিয়া হয়ে ওঠে। ম্যাচের ২৯ মিনিটে পর্তুগাল রক্ষণের তালা ভাঙতে সক্ষম হয় দক্ষিণ কোরিয়া। কর্নার থেকে উড়ে আসা বল রোনালদো ক্লিয়ার করতে না পারলে, সেই বল পেয়ে যান কিম ইয়ং গোওয়ান। সহজ সুযোগ নষ্ট করেননি এই ডিফেন্ডার।
২০১৮ বিশ্বকাপে জার্মানদের হারানোর ম্যাচেও গোল করেছিলেন এই ফুটবলার। আক্রমণ-পাল্টা আক্রমণের এই ম্যাচে পর্তুগাল আরও একটি সুযোগ পায় ৩৩ মিনিটে। দালোতের দূরপাল্লার শট অবশ্য কিম সিয়ুং গিয়ুর জন্য খুব বেশি কঠিন হয়নি। তবে তাঁর চিন্তার কারণ হয় দাঁড়ায় পর্তুগাল মিডফিল্ডার ভিতিনিয়া। যদিও তার আক্রমণে সফলতা পায়নি পর্তুগাল। প্রথমার্ধ শেষ হয় ১-১ গোলে।
প্রথমার্ধের মতো দ্বিতীয়ার্ধেও আক্রমণাত্মকভাবে শুরু করে রোনালদোরা। অন্যদিকে দক্ষিণ কোরিয়াও সুযোগ বুঝে পাল্টা আক্রমণের চেষ্টা করে। বিরতির পর নিজের খোলস ছেড়ে বের হন সন হিউং মিন। ৫৬ মিনিটে তার করা আক্রমণ আন্তোলিও সিলভার ব্লক করলেও কর্নার আদায় করে নেন সন। তার করা কর্নার থেকে লি জে সুং বল পেলে শট গোলপোস্টে রাখতে পারেননি।
ম্যাচের ৬৪ মিনিটে রোনালদোকে তুলে নেন কোচ ফার্ন্দাদো সান্তোস। গোলের জন্য মরিয়া সনরা একের পর এক আক্রমণ করলেও প্রতিপক্ষের রক্ষণ ভাঙতে পারছিল না। সেট পিস থেকে গোল প্রথম গোল করা কোরিয়া সেটা পিস থেকে পাওয়া কয়েকটি সুযোগ নষ্ট করে। ম্যাচ যখন সমতার দিকে এগোচ্ছিল, তখন সন ম্যাজিকেই জয় পেয়েছে কোরিয়া।
Array