• আজকের পত্রিকা
  • ই-পেপার
  • আর্কাইভ
  • কনভার্টার
  • অ্যাপস
  • পাঁচ বছরে বন্ধ ৭০ ভাগ কারখানা : হুমকির মুখে সাতক্ষীরার টালি শিল্প! 

     বার্তা কক্ষ 
    28th Nov 2022 9:08 pm  |  অনলাইন সংস্করণ
    • সাতক্ষীরা প্রতিনিধি

    নানা সংকটের কারণে হুমকির মুখে পড়েছে সাতক্ষীরার কলারোয়া পৌর সদরের মুরারিকাটি গ্রামের অত্যন্ত সম্ভাবনাময় মাটির তৈরি টালি শিল্প। উৎপাদন খরচ বিবেচনায় ন্যায্য রপ্তানি মুল্য না পাওয়ায় একের পর এক বন্ধ হয়ে যাচ্ছে কলারোয়ার রপ্তানিজাত টালি তৈরির করাখানা। গত ৫ বছরের ব্যবধানে অন্তত ৭০ শতাংশ কারখানা বন্ধ হয়ে গেছে।

    বর্তমানে যে কয়টি কারখানা উৎপাদনে আছে তারাও হয়তো প্রতিযোগিতায় টিকে থাকতে না পেরে বন্ধ হয়ে যেতে পারে— এমন আশংকার কথা জানিয়েছেন টালি করাখানা মালিকরা। খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, ৫/৬ বছর আগেও জেলার কলারোয়া উপজেলার মুরারিকাটি টালি পল্লী ছিলো নারী-পুরুষ শ্রমিকে মুখরিত। আশ পাশের অন্তত ৬/৭ হাজার শ্রমিকের কর্মসংস্থান হয়েছিলো রপ্তানিজাত মাটির টালি উৎপাদন করে। এখানে দেশের অনেক বড় বড় রপ্তানিকারক প্রতিষ্ঠান আসতো টালি সংগ্রহ করতে।

    মুরারিকাটির মাটির তৈরি টালি রপ্তানি হতো ইউরোপ-আমেরিকার অনেক দেশে। কিন্ত নানা সংকটের মুখে পড়ে ২০১৬ সালের পর থেকে মুরারিকাটির ৭০ শতাংশ টালি কারখানা একের পর এক বন্ধ হয়ে গেছে। ২০১৫ সাল পর্যন্ত যেখানে টালি তৈরি কারখানা ছিলো ৪৫-৫০ টি, বন্ধ হতে হতে বর্তমানে তা দাড়িয়েছে মাত্র ১২-১৪ টিতে।

    রপ্তানিজাত টালি উৎপাদনকারী মুরারিকাটি গ্রামের মেসার্স দীপা টালির ব্যবস্থপনা পরিচালক বাদল চন্দ্র পাল জানান, তার প্রতিষ্ঠানে কয়েক প্রকার টালি উৎপাদন হয়। এসব টালির মধ্যে রয়েছে ফেক্স এ্যাংগুলার টালি, হেড ড্রাগুলার, স্কাটিং, স্টেম্প, স্কয়ার, রুপ, ব্রিকস্ ও ফ্লোর টালি। বর্তমান তার প্রতিষ্ঠানে প্রতিদিন ৪ থেকে সাড়ে ৪ হাজার পিস টালি উৎপাদন হচ্ছে। এর আগে পরিমান ছিল আরও বেশি।

    বাদল চন্দ্র পাল আরও জানান, ২০১৬-১৭ সালের দিকেও তার উৎপাদনের পরিমান ছিল দৈনিক ১০-১২ হাজার পিস। সে সময় কারখানার সংখ্যাও ছিলো ৪৫-৫০টির মত। নানা সংকটের টিকে থাকতে না পেরে কমপক্ষে ৩০-৩২টি টালি কারখানা বন্ধ হয়ে গেছে। বর্তমান ১২/১৩টি কারখানাতে কোনো রকম উৎপাদন টিকিয়ে রেখেছে। তবে সেগুলোর অবস্থাও ভালো নয়।

    তিনি বলেন, ইটালিতে প্রতি টালির মুল্য দিচ্ছে সর্বোচ্চ ৭ থেকে সাড়ে ৭ টাকা। যার উৎপাদন খরচ পড়ে যায় ৬ থেকে সাড়ে ৬ টাকা। ফলে রপ্তানি মুল্য কম হওয়ার কারণে এক এক করে বন্ধ হয়ে গেছে অন্তত ৭০ শতাংশ টালি কারখানা।

    মুরারিকাটি গ্রামের আরও এক টালি উৎপাদনকারী প্রতিষ্ঠান মেসার্স শেখ ট্রেডার্সের ব্যবস্থাপনা পরিচালক ও কলরোয়া পৌর কাউন্সিলর মো. ইমদাদুল ইসলাম জানান, মুরারিকাটির টালি শিল্প শুরু থেকেই খুবই সম্ভাবনাময় হয়ে ওঠে রপ্তানিতে। এখানকার মাটির তৈরি টালির ইটালিতে ব্যাপক চাহিদা। সেসময় দেশের বিভিন্ন রপ্তানিকারক প্রতিষ্ঠান মুরারিকাটির টালি রপ্তানি করতে এগিয়ে আসে। কিন্ত মাত্র ৬/৭ বছরের ব্যবধানে এই টালি শিল্প প্রায় হারিয়ে যেতে বসেছে।

    এর কারণ হিসেবে তিনি বলেন, বর্তমান প্রেক্ষাপটে জ্বালানি ও শ্রমিকের মুল্য বেড়ে যাওয়ায় উৎপাদন খরচও বেড়ে গেছে আগের তুলনায়। কিন্তু করোনা মহামারির পর থেকে নানা কারণে উৎপাদিত পন্যের সঠিক দাম না পাওয়া যাচ্ছে না। একটি রপ্তানিযোগ্য মাটির টালি তৈরি করতে খরচ পড়ছে প্রায় ৭ টাকা। সেখানে বিক্রি মুল্য পাওয়া যাচ্ছে ৭ থেকে সাড়ে ৭ টাকা। ফলে টিকে থাকতে না পেরে অনেক কারখানা ইতিমধ্যে বন্ধ হয়ে গেছে। তিনি নিজেও হয়তো কারখানার উৎপাদন বন্ধ করে দিতে পারেন বলেন জানান।

    কারখানা মালিক বাদল চন্দ্র ও ইমদাদুল ইসলামের দেয়া তথ্য মতে, কলারোয়ার মুরারিকাটিতে বর্তমান বছরে ৮-৯ কোটি টালি উৎপাদন হচ্ছে। যার রপ্তানি মুল্য প্রায় ৫০-৫৫ কোটি টাকা। কয়েক বছর আগেও এর তিন থেকে চারগুন বেশি পরিমান উৎপাদন হয়েছে। তাদের দাবি এই টালি শিল্প টিকিয়ে রাখতে হলে সরকারের সহযোগিতা দরকার। তা না হলে এ সম্ভাবনাময় রপ্তানি শিল্পটি ক্রমশ শেষ হয়ে যাবে। ফলে এই শিল্প টিকিয়ে রাখতে হলে সরকারকে রপ্তানি মুল্য বৃদ্ধির ব্যাপারে উদ্যোগী হতে হবে বলে জানান তারা।

    টালি শ্রমিক আব্দুর রাজ্জাক, মিজানুর রহমান ও রুপা খাতুন জানায়, এখানকার টালি বিদেশ যাওয়া শুরু হওয়ার পর থেকে এই এলাকার আশ পাশের অন্তত ৬-৭ হাজার নারী-পুরুষের কর্মসংস্থানের ব্যবস্থা হয়েছিলো। এখানে মজুরীও ছিলো ভালো। টালি কারখানায় কাজ করে দৈনিক ৩৫০-৫০০ টাকা হারে মজুরী পাওয়া যায়। এতে করে এই এলাকার খেটে খাওয়া মানুষের মধ্যে আর্থিক স্বচ্ছলতা ফিরে আসে। কিন্ত অনেক কারখানা বন্ধ হয়ে যাওয়াতে বহু শ্রমিক বেকার হয়ে গেছে।

    খুলনার টালি রপ্তানিকারক প্রতিষ্ঠান মা কটোজ আইএনসির ব্যবস্থাপনা পরিচালক আলী আজগার রিপন জানান, কলরোয়ার মুরারিকাটি গ্রামের উৎপাদিত মাটির তৈরী টালি ইউরোপ আমেরিকাতে প্রচুর চাহিদা রয়েছে। তবে করোনা পরবর্তীতে চাহিদা কিছু কমে গেছে। তবে বর্তমানে তিনি ইটালিতে টালি রপ্তানি করছেন না। এখন ইটালি বাদে ইউরোপের অন্যান্য দেশসহ আমেরিকার প্রায় ২০টি দেশে টালি রপ্তানি করছেন।

    তিনি বলেন, যে টালির দাম ইটালীতে ৭ টাকা তা ইউরোপ-আমেরিকার বিভিন্ন দেশে ২২ থেকে ২৫ টাকা। ফলে মাটির টালি এখন ইটালিতে রপ্তানি করতে আগ্রহ হারাচ্ছেন অনেক রপ্তানিকারক প্রতিষ্ঠান। মা কটোজ আইএনসি ছাড়াও খুলনার জে কে ইন্টারন্যাশনাল, আরনো এক্সপোর্ট ইমপোর্টসহ দেশের বেশ কয়েকটি বড় বড় রপ্তানিকারক প্রতিষ্ঠান কলারোয়ার মুরারীকাটি গ্রামের মাটির তৈরি টালি ইউরোপ আমেরিকার বিভিন্ন দেশে রপ্তানি করছে।

    এ ব্যাপারে সাতক্ষীরা জেলা প্রশাসক মোহাম্মাদ হুমায়ুন কবির বলেন, সাতক্ষীরার কলারোয়ার মুরারিকাটি গ্রামের মাটির তৈরি টালি ইউরোপ আমেরিকার অনেক দেশে রপ্তানি হচ্ছে এটি এই জেলার জন্য অত্যন্ত সম্ভাবনাময় ও আনন্দের। এটি টিকে থাকলে এই জেলা আগামীতে দেশের বৈদেশিক মুদ্রা অর্জনে খুবই ভালো ভূমিকা রাখতে পারবে। সেজন্য সরকারের পক্ষ থেকে জেলা প্রশাসক হিসেবে তিনি প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহণ করবেন।

    Array
    We use all content from others website just for demo purpose. We suggest to remove all content after building your demo website. And Dont copy our content without our permission.
    আমাদের ইউটিউব চ্যানেলে সাবস্ক্রাইব করুন
    এই বিভাগের আরও খবর
     
    Jugantor Logo
    ফজর ৫:০৫
    জোহর ১১:৪৬
    আসর ৪:০৮
    মাগরিব ৫:১১
    ইশা ৬:২৬
    সূর্যাস্ত: ৫:১১ সূর্যোদয় : ৬:২১

    আর্কাইভ

    November 2022
    M T W T F S S
     123456
    78910111213
    14151617181920
    21222324252627
    282930