- পাবনা জেলা প্রতিনিধি /
ভাইরাল হওয়ার নেশায় জীবন্ত সাপ, কেঁচো, বিচ্ছু, ব্যাঙসহ বিভিন্ন প্রাণী ও কীটপতঙ্গ খেয়ে আলোচনায় এসেছেন পাবনায় ভাঁড়ারা ইউনিয়নের আকরাম প্রামাণিক। ডিসকভারি চ্যানেলের বিয়ার গ্রিলস-এর মতো বিশ্বময় পরিচিতি পাওয়ার আশায় দর্শনার্থীদের নিয়মিত এসব খেয়ে দেখান আকরাম। এমন কাণ্ড স্বাস্থ্যের জন্য ক্ষতিকর উল্লেখ করে আকরামের মানসিক সুস্থতা নিয়েও প্রশ্ন তুলছেন স্থানীয়রা।
স্থানীয়রা জানান, আকরাম গাছ থেকে ছিঁড়ে খান যেকোনো পাতা। বাড়ির আশপাশের খালবিল থেকে ধরে খান কাঁচা মাছ। জীবন্ত ধরে খান তেলাপোকা, সাপ, বিচ্ছু, কাঁকড়া, ইঁদুর, ব্যাঙ। খেয়ে হজম করে ফেলেন কাঁচা মাংসও। বেশ কিছুদিন ধরে নিয়মিতই এমন কাণ্ড করছেন পাবনা সদর উপজেলার ভাঁড়ারা ইউনিয়নের আকরাম আলী। প্রায়ই আয়োজন করে গ্রামের দর্শনার্থীদের এসব খেয়ে দেখাচ্ছেন তিনি।
একসময় কাঠমিস্ত্রি ছিলেন আকরাম। ভাইরাল হয়ে আলোচনায় আসতে এখন সে কাজ ছেড়ে নিয়মিত পোকামাকড় খাচ্ছেন তিনি।
আকরাম আলী জানান, ২০০২ সালে টিভিতে এক ব্যক্তির পোকামাকড় খাওয়া দেখে প্রথমবারের মতো কাঁচা কাঠের পোকা খান আকরাম। এরপর থেকে একে একে কাঁচা মাছ, মাংস, কেঁচো, ইঁদুর সবকিছুই খেতে শুরু করেন তিনি। আকরামের দাবি এসব খেয়ে কখনোই শারীরিক অসুবিধা হয়নি। এসব খাওয়াকে বিশেষ যোগ্যতাও মনে করেন তিনি।
আকরাম বলেন, জ্যান্ত সাপ, ব্যাঙ, বিচ্ছু, কেঁচো, তাজা মাছসহ নানা রকমের পোকামাকড় খাওয়া শেখেন তিনি। ডিসকভারি চ্যানেলের মতো জ্যান্ত পোকামাকড় খেতে পারেন বলে সবার কাছে এখন তিনি ‘ডিসকভারি আকরাম’ নামে পরিচিত। এর মধ্যেই বিভিন্ন সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে ভাইরাল হয়েছেন তিনি।
তিনি বলেন, আমি একজন দরিদ্র মানুষ। খুব কষ্টে সংসার চলে। দুটো কন্যার বিয়ে দিয়েছি। আরও দুই কন্যা রয়েছে। তারা প্রাথমিক ও মাধ্যমিকে পড়ালেখা করে। নিজের সামর্থ্য নেই একটি স্মার্ট বা অ্যান্ড্রয়েড ফোন কেনার। সরকারি-বেসরকারিভাবে পৃষ্ঠপোষকতা পেলে এবং সঠিক গাইড লাইন পেলে দেশ থেকে বিদেশে আমার কাজ দিয়ে আলোড়ন তুলতে চাই।
তার স্ত্রী মুর্শিদা খাতুন বলেন, ‘৩০ বছরের সংসারজীবন। ২০-২২ বছর আগে তাকে এই নেশায় ধরে। কাজের ফাঁকে ফাঁকে তিনি টিভি চ্যানেলে পোকামাকড় খাওয়া দেখে অভ্যাস করতে থাকেন। এটা এখন তার ধ্যানজ্ঞানে পরিণত হয়েছে। পোকামাকড় খাওয়া নিয়ে আমার স্বামীর বা আমার কোনো সমস্যা হচ্ছে না।’
তবে, আকরামের এমন কাণ্ডকে খুব বেশি ভালো চোখে দেখছে না এলাকার মানুষ। তাকে মানসিক বিকারগ্রস্ত উল্লেখ করে চিকিৎসার প্রয়োজন আছে বলে মনে করেন স্থানীয় ইউপি চেয়ারম্যান। ‘অস্বাস্থ্যকর’ বলছেন চিকিৎসকরাও।
ভাঁড়ারা ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান সুলতান মাহমুদ খান বলেন, ‘আকরাম বেশ কিছুদিন ধরে এমন কাজ করছেন। কাঁচা মাছ মাংস খাওয়া অস্বাস্থ্যকর, বিষাক্ত প্রাণী, কীট পতঙ্গ স্বাস্থ্যের জন্য ক্ষতির কারণ। কিন্তু টিভিতে সংকটকালে কিভাবে টিকে থাকা যায় তা দেখাতে হয়তো কীটপতঙ্গ খেয়ে দেখানো হয়। আকরাম যেভাবে নির্বিচারে সব খাচ্ছে, তা একেবারেই পাগলামী। আমার মনে হয় তার দ্রুত মানসিক চিকিৎসা করা দরকার।’
পাবনা জেনারেল হাসপাতালের সিনিয়র কনসালট্যান্ট ডা. সালেহ মোহাম্মদ আলী বলেন, ভাইরাল হওয়ার জন্য আকরাম যা করছেন তা স্বাস্থ্যের জন্য ঝুঁকিপূর্ণ। বিষাক্ত প্রাণী কাঁচা খেয়ে তিনি বিষক্রিয়ায় আক্রান্ত হতে পারেন। মানুষ ডেকে সেটা দেখানোও অনুচিত। আমার মনে হয় এ বিষয়ে জনস্বাস্থ্য প্রশাসন ও জেলা প্রশাসন ব্যবস্থা নিতে পারেন।
Array