- নওগাঁর প্রতিনিধি/
নওগাঁর রানীনগরে বেগুন গাছে গ্রাফটিং (কলম) পদ্ধতিতে টমেটো চাষ করে এলাকায় সাড়া ফেলেছেন কৃষক জহুরুল ইসলাম বাদল। ইউটিউব দেখে আগাম গ্রীষ্মকালীন সবজি হিসেবে ১২ কাঠা জমিতে কাঁটা বেগুনের গাছের সঙ্গে টমেটো গাছকে গ্রাফটিং (কাটিং কলম) পদ্ধতিতে বারি-৪ জাতের টমেটো চাষ করে সফলতা পেয়েছেন তিনি।
কৃষক জহুরুল ইসলাম বাদল নওগাঁর রানীনগর উপজেলার একডালা ইউনিয়নের শিয়ালা গ্রামের মৃত আজাহার আলীর ছেলে। প্রথমবারেই এই পদ্ধতিতে টমেটো চাষে আর্থিকভাবে লাভবান হবেন বলে মনে করছেন তিনি।
সরেজমিনে দেখা যায়, মালচিং পদ্ধতিতে তিনি এই টমেটো চাষ করেছেন। সারিসারি একেকটি গাছের উচ্চতা ৫ থেকে ৭ ফুট। উচ্চতা বেশি হওয়ায় বাঁশের মাচা দিয়ে আটকে রাখা হয়েছে। প্রতিটি বেগুন গাছে ৫-৬ কেজি করে সবুজ, হলুদ ও লাল রঙের টমেটো ঝুলছে। আধুনিক এ পদ্ধতিতে টমেটো চাষ করায় এলাকায় বেশ সাড়া পড়েছে। এই পদ্ধতিতে টমেটো চাষ দেখতে আসছেন স্থানীয় কৃষকরা। অসময়ে টমেটো। বাজারে চাহিদাও ও দাম ভালো থাকায় অনেক কৃষক ইতোমধ্যে এই পদ্ধতিতে টমেটো চাষ করতে আগ্রহী হচ্ছেন।
এ বিষয়ে কথা হয় কৃষক জহুরুল ইসলাম বাদলের সঙ্গে। তিনি এই প্রতিবেদকে বলেন, ‘দীর্ঘদিন আগে থেকে তিনি বিভিন্ন সবজি চাষ করে আসছেন। প্রতি বছর তিনি বিভিন্ন সবজির পাশাপাশি টমেটোও চাষ করে থাকেন। এরই মধ্যে ইউটিউবে কাঁটা বেগুন গাছে গ্রাফটিং কলম করে টমেটো চাষ পদ্ধতি দেখে কাঁটা বেগুনের বীজ সংগ্রহ শুরু করেন। শ্রাবন মাসের মাঝামাঝি (আগস্ট) সময়ে জমিতে কাঁটা বেগুনের চারা রোপণ করেন। রোপণ করা হয় বারি-৪ জাতের টমেটোর বীজ। টমেটোর গাছ বড় হওয়ার ১৫ দিন পর গ্রাফটিং (কাটিং কলম) পদ্ধতিতে কাঁটা বেগুনের গাছের সঙে যুক্ত করি। গাছ লেগে যাওয়ার পর কাঁটা বেগুনের গাছের ওপরের অংশ কেটে গোড়ার অংশ রেখে দেওয়া হয়। গাছের বয়স দুই মাস হলে ফল আসা শুরু হয়।’
তিনি আরও বলেন, ‘সাধারণ টমেটো গাছের চাইতে এই গাছের রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা অনেক বেশি। তাই রোগবালাইও কম। এতে কীটনাশক ও রাসায়নিক সারের খরচ কম হওয়ায় লাভও বেশি হবে। এ পদ্ধতিতে প্রায় ৮ মাস ফলন পাওয়া সম্ভব। অনেকেই এ পদ্ধতিতে টমেটো চাষ করতে দেখতে এবং পরামর্শ নিতে আসছেন।’
এবছর ১২ কাঠা জমিতে হালচাষ করে সার-ওষুধ দিয়ে প্রস্তুত করে মালচিং পদ্ধতিতে সেড তৈরি করা হয়। সবমিলে খরচ হয়েছে ৩৫-৪০ হাজার টাকা। ইতোমধ্যে ক্ষেত থেকে প্রতিদিন ৫০-৬০ কেজি করে টমেটো তুলে বাজারে বিক্রি করা হচ্ছে। বাজারে প্রতিকেজি টমেটো বিক্রি হচ্ছে ১১০-১১৫ টাকাতে। আশা করা হচ্ছে, প্রায় দুই লাখ টাকার টমেটো বিক্রি করা যাবে। অসময়ে ভালো ফলন ও দাম পেয়ে তিনি অনেক খুশি। আগামী বছর আরও বেশি জমিতে গ্রাফটিং পদ্ধতি আরও উন্নত জাতের টমেটো চাষের পরিকল্পনার কথা জানান তিনি।
স্থানীয় কৃষক রবিউল ইসলাম দেখতে এসেছেন বেগুন গাছের কাণ্ডে কিভাবে টমেটোর গাছ কলম-পদ্ধতিতে জোড়া লাগানো হয়। এসময় তিনি বলেন, ‘এই পদ্ধতিতে এতো বেশি ফলন দেয় তা জানা ছিল না। আগাম টমেটো চাষ করে বাজারে ভাল দাম পাচ্ছেন। কৃষি অফিস থেকে পরামর্শ পেলে আমি নিজেও এই পদ্ধতিতে টমেটো চাষ করবো।’
রানীনগর উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা শহিদুল ইসলাম জানান, রানীনগরে এই প্রথম কৃষক বাদল গ্রাফটিং কলম করে টমেটো চাষ করেছেন। উপজেলা কৃষি অফিস থেকে তাকে সার্বিকভাবে পরামর্শ দিয়ে সহযোগিতা করা হয়েছে। গ্রাফটিং কলম গাছের রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা বেশি এবং গোড়া অতি সহজে পচে না, তাই গাছ দীর্ঘজীবী হয়। ফলে দীর্ঘসময় ধরে ফল পাওয়া যায়। এছাড়া আগাম চাষ করার কারনে টমেটোর দামও ভালো পাওয়া যায়। এতে কৃষকরা অধিক লাভবান হবেন।
কৃষি কর্মকর্তা আরও জানান, ইতোমধ্যে কৃষি অফিস থেকে আধুনিক পদ্ধতিতে সবজি চাষাবাদ করতে ৪০ কৃষককে প্রশিক্ষণ দেওয়ার পাশাপাশি উদ্বৃদ্ধ করা হয়েছে। কৃষকদের মাঝে আধুনিক পদ্ধতিতে ভিন্নমাত্রায় চাষাবাদে আগ্রহ বাড়ানো গেলে অফসিজনে যেমন চাষাবাদ বাড়বে তেমনই লাভবান হতে পারবেন চাষিরা বলে জানান এই কর্মকর্তা।
উল্লেখ্য, এর আগেও ইন্টারনেটে দেখে পরীক্ষামূলক পরিত্যক্ত ছায়াযুক্ত ৬ কাঠা জমিতে ১ হাজার ৬০০ বস্তায় আদা চাষ করেও সাড়া ফেলেন কৃষক জহুরুল ইসলাম বাদল।
Array