- রাবি প্রতিনিধি/
বিয়ে মানেই আনন্দ অনুষ্ঠান। ধুমধাম করে মেহেদি, গায়ে হলুদ, বিয়ে, বৌভাত। জমকালোভাবে আয়োজন করা হয় বিভিন্ন অনুষ্ঠানের। আর সেখানে খাদ্যরসিক বাঙালির জন্য থাকবে নানা খাবারের আয়োজন।
কিন্তু বিয়ের অনুষ্ঠানে এতিম শিশুদের দাওয়াত দিয়ে এক ব্যতিক্রমী আয়োজন করেছেন রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ের (রাবি) এক ছাত্রী ও তার পরিবার। বিয়ের অনুষ্ঠানে অতিথিদের আমন্ত্রণের পাশাপাশি এতিম শিশুদেরকে একবেলা পেট ভরে খাওয়ালেন কনের পরিবার।
ঘটনাটি জয়পুরহাট পৌরশহরে গুলশান মোড় এলাকার একটি বিয়ের। শুক্রবার (১১ নভেম্বর) গুলশান মোড় পাড়ার মো. ইমরান হোসেন মণ্ডলের মেয়ে মোশামীমা নাসরিন এ্যানি বিয়ের পিঁড়িতে বসেছে। জামাই গাইবান্ধার গোবিন্দগঞ্জের মো. তাহমিদ রহমান। পেশায় তিনি মেরিন অফিসার। রাবির রাষ্ট্রবিজ্ঞানে স্নাতকোত্তর এই কনের স্বপ্ন ছিল তার বিয়ে যার সঙ্গেই হোক না কেন, সে তার বিয়েতে এতিমখানার শিশুদের খাওয়াবেন।
এ্যানির সেই স্বপ্ন পূরণ হয়েছে। ধূমধাম আয়োজনে বিয়ে হয়েছে তার। বিয়েতে আত্মীয় স্বজন, পাড়া প্রতিবেশী, বন্ধু-বান্ধবদের মত একই খাবারের মিনু ছিলো এতিম শিশুদের জন্য। এতে এতিম শিশুরা যেমন খুশি, তার সঙ্গে খুশি এ্যানির পরিবার ও তার নতুন শ্বশুর বাড়ির লোকজনও।
এ্যানি বলেন, ‘ছোট থেকেই স্বপ্ন দেখতাম আমার বিয়েতে আমি এতিম শিশুদের দাওয়াত দিবো। আমরা সবাই বিভিন্ন অনুষ্ঠানে যে পরিমাণ আয়োজন করি, তার সঙ্গে এই আয়োজন করতে বেশি অর্থের প্রয়োজন হয় না। যে পরিমাণ অর্থ খরচ হয় তার সামান্য অর্থ দিয়ে যদি না খেতে পাওয়া শিশুদের পেট ভরে, তবে সেটাই আসল স্বার্থকতা। তাতে করে এতিম শিশুরা একটু ভালো খেতে পারলো এবং তারা খুশিও হলো। আমার এই স্বপ্ন পূরণ করছে আমার পরিবার। আমি খুব খুশি।’
এ্যানির বড় ভাই সাজেদুর রহমান সুমন বলেন, ‘ছোট বোনের স্বপ্ন পূরণ করতে পেরেছি। সেই সঙ্গে আমরাও অনেক খুশি এই রকম আয়োজন করতে পেরে। আমরা চেয়েছিলাম রেস্টুরেন্টে দাওয়াত দেওয়া অতিথিদের সঙ্গে ওদের খাওয়ানোর জন্য। কিন্তু পরিবহন ও সড়কের নিরাপত্তা বিবেচনা করে তাদের সেখানে আনা হয়নি। তাই একই খাবার তাদের এতিম খানার আবাসিক হোটেলে পৌঁছে দেওয়া হয়েছিল। পেট পুরে খেয়েছে বাচ্চাগুলো। আমরা খুব খুশি।’
এ্যানির স্বামী মেরিন অফিসার মো. তাহমিদ রহমান বলেন, ‘যখন শুনেছি আমার স্ত্রী এতিমদের দাওয়াত দিয়েছে, তখন খুব খুশি হয়েছি। কারণ এই যুগে মেয়েরা বিয়েতে নিজের আনন্দ নিয়ে ব্যস্ত থাকে কিন্তু বিয়ে নিয়ে তার চিন্তাটাই আলাদা। আমি অনেক খুশি এই রকম শ্বশুর বাড়ি পেয়ে। আমাদের জন্য দোয়া চাই, আমরা যেনো সুখে শান্তিতে থাকতে পারি।’
সিদ্দিকীয়া কোরবানিয়া হাফিজিয়া মাদরাসা এতিমখানার শিশুরা বলেন, ‘আমরা যেদিন থেকে শুনেছি, ওই আপুর বিয়েতে দাওয়াত পেয়েছি। সেদিন থেকে আমরা খুশি। বিভিন্ন রকমের ভালো খাবার খেয়েছি আমরা। সবাই তাদের জন্য দোয়া করেছি, আল্লাহ তা’আলা আপুদেরকে সুখে রাখুক।’
এদিকে, ব্যতিক্রমী এই বিয়ের আয়োজনে এলাকাবাসীও খুশি। এলাকাবাসী হাবিবুর রহমান বলেন, ‘আমাদের পাড়ার মেয়ে এ্যানি এবং তার পরিবার অনেক ভালো। তারা বিয়েতে যে এতিম শিশুদের জন্য খাওয়ার আয়োজন করেছে, এটা দেখে আমরা খুশি। তাদের থেকে শিখলাম যে, এতিম বাচ্চাদের খাওয়ানোর মধ্যে অন্য রকমের ভালোলাগা বা শান্তি আছে।’
বিয়েতে ভিন্ন রকমের আয়োজনে ওই ওয়ার্ডের জনপ্রতিনিধি কাউন্সিলর ওলিউজ্জামান বাপ্পি বলেন, আমার ওয়ার্ডে এমন ভিন্ন বিয়ের আয়োজন হওয়াতে খুশি হয়েছি। শুধু বিয়েতে না, বিভিন্ন রকম অনুষ্ঠানে সুবিধা বঞ্চিত অসহায় দরিদ্র ও এতিম শিশুদের খাওয়ানো ও সাহায্য করতে সবার এগিয়ে আসা উচিত। আর এই পরিবারের লোকজন এই রকম সিদ্ধান্ত নেওয়ার জন্য তাদেরকে ধন্যবাদ জানাই।’
ইতোমধ্যেই সোশ্যাল মিডিয়ার বিভিন্ন গ্রুপে ভাইরাল হয়েছে এই আয়োজনে। অনেকেই প্রশংসা করছেন তাদের এমন ব্যতিক্রমী আয়োজনে।
Array