কথায় আছে- যুদ্ধ আর প্রেমে সবকিছুই বৈধ। কথাটা আদতে সত্যিই। সত্যিকারের প্রেমে পড়লে জাত, ধর্ম, প্রথা কোনোকিছুই আর বিবেচ্য বিষয় হয় না। লিঙ্গও যে ভালোবাসার পথে কোনো বাধা হয়ে দাঁড়াতে পারে না, মীরা কুন্তল নামে ভারতের রাজস্থানের এক স্কুলশিক্ষিকা সেটিই প্রমাণ করলেন।
মীরা কুন্তল রাজস্থানের ভরতপুর জেলার ডিগ শহরের সরকারি মাধ্যমিক বিদ্যালয়ের শারীরিক শিক্ষা বিভাগের শিক্ষক। একসময়ে তিনি একই বিদ্যালয়ের ছাত্রী কল্পনার প্রেমে পড়েন। কিন্তু পশ্চিমা বিশ্বের একই লিঙ্গের মধ্যে বিবাহবন্ধনে আবদ্ধ হওয়ার রীতি থাকলেও ভারতে সেই বিধান নেই। ফলে তাদের প্রেমের পরিণতি পাওয়া নিয়ে সংশয় জাগে।
তবে প্রেমকে মীরা হারাতে চাননি। তাই তিনি লিঙ্গ পরিবর্তনের জন্য অস্ত্রোপচার করেছেন। লিঙ্গ পরিবর্তন করে পুরুষ হওয়ার পর তিনি কল্পনাকে বিয়ে করে নেন। লিঙ্গ পরিবর্তন করে পুরুষ হওয়া মীরা কুন্তলকে এখন সবাই চেনে আরভ কুন্তল নামে। এক প্রতিবেদনে এ কথা জানিয়েছে ভারতীয় সংবাদমাধ্যম জি নিউজ।
প্রেমের সম্পর্ক নিয়ে কথা বলতে গিয়ে কল্পনা এএনআইকে বলেন, আমি তাকে প্রথম থেকেই ভালোবাসতাম। এমনকি সে যদি লিঙ্গ পরিবর্তনের এই অস্ত্রোপচার নাও করতো, আমি তাকে বিয়ে করতাম। অস্ত্রোপচারের সময়ে আমি তার সঙ্গে গিয়েছিলাম।
লিঙ্গ পরিবর্তন প্রসঙ্গে কুন্তল জানান, তার পক্ষে নিজের শারীরিক পরিবর্তন মেনে নেওয়া অসম্ভব ছিল। মনে হচ্ছিল নিজের শরীরের মধ্যে তিনি বন্দি হয়ে আছেন। সংবাদপত্রের মাধ্যমে ২০১০ সালে তিনি সর্বপ্রথম লিঙ্গ পরিবর্তনের অস্ত্রোপচার সম্পর্কে জেনেছিলেন। এরপর থেকেই তিনি সেটি করাতে ইচ্ছুক ছিলেন। শেষ পর্যন্ত অনেক গবেষণার পর দিল্লির ওলভেক হাসপাতালের ডা. নরেন্দ্র কৌশিক কুন্তলের লিঙ্গ পরিবর্তনের অস্ত্রোপচার করেন।
এএনআইয়ের সঙ্গে কথা বলার সময়ে আরভ কুন্তল বলেন, আমি সবসময় লিঙ্গ পরিবর্তনের অস্ত্রোপচার করতে চেয়েছিলাম। ২০১৯ সালের ২৫ ডিসেম্বর আমার প্রথম অস্ত্রোপচার হয়েছিল। এরপর তিন বছর ধরে পর্যায়ক্রমে লিঙ্গ পরিবর্তনের অস্ত্রোপচার পরিচালিত হয়। অবশেষে ২০২১ সালের ডিসেম্বরে অস্ত্রোপচার শেষ হয়।
নিজের ছেলে সম্পর্কে আরভের বাবা ভিরি সিং বলেন, আরাভকে কখনোই তিনি মেয়ের চোখে দেখেননি। আরভ (মীরা) সবসময় খেলাধুলার সঙ্গে যুক্ত ছিল। তাছাড়া, সে কখনও তথাকথিত মেয়েদের পোশাক পরেনি। এসব বিষয়ে আমরা সবসময় তাকে সমর্থন করেছি। এমনকি আমার অন্য চার মেয়ের সন্তানরাও আরভকে খালা না, বরং মামা বলেই ডাকে।
কল্পনা যে স্কুলের ছাত্রী ছিলেন, আরভ (আগের মীরা) সেই স্কুলের কাবাডি দলের প্রশিক্ষক ছিলেন। মীরার কাছ থেকে দীক্ষা নিয়ে টুর্নামেন্টে দারুণ নৈপুণ্য দেখিয়েছিলেন কল্পনা। তখনই দুজনের মধ্যে প্রেমের সম্পর্ক গড়ে ওঠে। মীরার নির্দেশনা অনুযায়ী সিনিয়র সেকেন্ডারিতে থাকার সময়ে কল্পনা জাতীয় পর্যায়ের কাবাডিতে অংশ নেন। বর্তমানে কল্পনা একজন আন্তর্জাতিক পর্যায়ের কাবাডি খেলোয়াড়। তিন বছরব্যাপী লিঙ্গ পরিবর্তনের অস্ত্রোপচারের সময়ে নির্ভরযোগ্য সঙ্গীর মতো আরভের পাশে ছিলেন কল্পনা।
অবশেষে হাজার প্রতিকূলতাকে জয় করে ৪ নভেম্বর তারা বিয়ে করেন। দুই পরিবারও খুশি মনেই তাদের বিয়ে মেনে নিয়েছে। আগামী জানুয়ারিতে দুবাইতে অনুষ্ঠিতব্য আন্তর্জাতিক প্রো-কাবাডি টুর্নামেন্টে ভারতে হয়ে খেলতে প্রস্তুত কল্পনা।
Array