নিজস্ব প্রতিবেদক, ময়মনসিংহ/
চকচকে সোনালি রঙের বনেদি মাছ মহাশোল। উপমহাদেশের ‘স্পোর্ট ফিশ’ হিসেবে সমাদৃত এ মাছটি কালের বিবর্তনে বিলুপ্তপ্রায়। তবে ২০১৫ সালে ময়মনসিংহে অবস্থিত বাংলাদেশ মৎস্য গবেষণা ইনস্টিটিউট (বিএফআরআই) মহাশোল মাছের কৃত্রিম প্রজনন উদ্ভাবন করে চাহিদার যোগান দেয়। এবার প্রাকৃতিকভাবেই মাছটির নতুন প্রজাতির খোঁজ পেয়েছে বিএফআরআই।
বান্দরবান জেলার সাংগু নদীতে ইনস্টিটিউটের বিজ্ঞানীরা এ প্রজাতিটির সন্ধান পেয়েছেন। যার বৈজ্ঞানিক নাম Tor barakae। এর আগে দেশে মহাশোল মাছের দুটি প্রজাতি ছিল। নতুন এই প্রজাতির সন্ধান পাওয়ায় দেশে মিঠাপানির মাছের সংখ্যা হবে ২৬১টি।
বিএফআরআই সূত্রে জানা গেছে, বছর খানেক আগে খবর পেয়ে বিএফআরআই রাঙ্গামাটি উপকেন্দ্র মৎস্যজীবীদের সহযোগিতায় সমীক্ষা পরিচালনা করে। পরে সন্ধান মিলে মহাশোল আকৃতির মাছের। মাছ সংগ্রহের পর এর বাহ্যিক গঠন এবং অন্যান্য দিক পরীক্ষা-নিরীক্ষা করা হয়।
গবেষণায় দেখা যায়, এর আঁশ মহাশোল মাছের মতো হলেও পাখনার রং দেশের অন্যান্য প্রজাতির মহাশোলের মতো হলদে নয় এবং মুখটি অপেক্ষাকৃত সরু। পরবর্তীতে প্রজাতি শনাক্তের জন্য ডিএনএ বারকোডিং করা হয়। পরে কৌলিতাত্ত্বিক গবেষণায় ওই নমুনায় Tor barakae নামক মহাশোলের রেফারেন্স জিনোমের সঙ্গে শতভাগ মিল পাওয়া যায়।
বিজ্ঞানীরা বলছেন, আগের মহাশোলের দুটি প্রজাতির একটি ছিল সোনালি মহাশোল (Tor tor), অন্যটি লাল-পাখনা মহাশোল (Tor putitora)। নেত্রকোণার কংস ও সোমেশ্বরী নদীতে ছিল এদের আবাস। এ দুই প্রজাতির মহাশোল মূলত পাহাড়ি ঝরনা প্রবাহিত স্রোতস্বিনী জলাশয়ে বাস করে। পাথরের শরীরে লেগে থাকা শেওলা জাতীয় খাবার খেয়ে বেঁচে থাকে।
নতুন এ প্রজাতিটি বান্দবানের থানচি উপজেলার সাংগু নদীর আন্দারমানিক, বোরো মদক ও লিগরি এলাকার যেসব স্থানে পানির গভীরতা এবং তলদেশে পাথরের পরিমাণ বেশি, সেখানে মাছটি পাওয়া যায়। স্থানীয়ভাবে ফড়ং বা মিকিমাউ নামেও পরিচিত। এটি ওজনে ১০-১৫ কেজি পর্যন্ত হয়ে থাকে।
প্রধান বৈজ্ঞানিক কর্মকর্তা ডা. আজহার আলীর নেতৃত্বে বিজ্ঞানী দলে আরও ছিলেন ঊর্ধ্বতন বৈজ্ঞানিক কর্মকর্তা ড. জুনাইরা রশিদ ও বৈজ্ঞানিক কর্মকর্তা ইমদাদুল হক।
বিএফআরআইয়ের মহাপরিচালক ড. ইয়াহিয়া মাহমুদ জানান, মহাশোলের নতুন এ প্রজাতির প্রজনন ও চাষাবাদ নিয়ে শিগগিরই গবেষণা কার্যক্রম শুরু করা হবে। মাছটি দামি ও আকারে বড় হওয়ায় এর বাণিজ্যিক গুরুত্ব রয়েছে। মহাশোলের অন্যান্য প্রজাতি নিয়ে ইনস্টিটিউটের দীর্ঘ দিনের অভিজ্ঞতা এক্ষেত্রে কাজে লাগানো যাবে।
Array