নিজস্ব প্রতিবেদক:
একসময়ের ব্যস্ততম উদ্যান ছিল রাজধানীর মিরপুরের বোটানিক্যাল গার্ডেন। শহুরে জীবনের মাঝখানে এক টুকরো সবুজ এই উদ্যানে বিভিন্ন ছুটির দিনে মানুষ প্রিয়জন ও পরিবার নিয়ে ছুটে যেত। বিনোদনের এই অতিপ্রিয় জায়গাটুকু দিন দিন তার সকীয়তা হারাচ্ছে। কমতে শুরু করেছে দর্শনার্থীর সংখ্যা। কিন্তু কেন এই অবস্থা হলো, তা জানা যায় দর্শনার্থী ও কর্তৃপপক্ষ।
বাংলাদেশে উদ্ভিদ প্রজাতি সংরক্ষণ, গবেষণা ও প্রদর্শনের সবচেয়ে বড় কেন্দ্র ন্যাশনাল বোটানিক্যাল গার্ডেন (জাতীয় উদ্ভিদ উদ্যান)। ১৯৬১ সালে রাজধানীর মিরপুরে প্রায় ২০৮ একর জায়গার ওপর উদ্যানটি প্রতিষ্ঠিত হয়। উদ্যানটির আধুনিকায়নে গত বছরের ৭ জুলাই সরকার মাস্টারপ্ল্যানের অনুমোদন দিলেও এখন পর্যন্ত উল্লেখযোগ্য কোনও পরিবর্তন আসেনি। তাই এর প্রভাব পড়েছে দর্শনাথীদের ওপর।
কেন দর্শনার্থী কমেছে বোটানিক্যাল গার্ডেনে?
শুক্রবার (১৪ অক্টোবর) সরেজমিনে বোটানিক্যাল গার্ডেনে সেই চিত্রই যেন দেখা গেলো। ছুটির দিন হলেও উদ্যানে দর্শনার্থীদের উপস্থিতি ছিল কম। বিকালের দিকে দর্শনার্থীর সংখ্যা কিছুটা বাড়লেও তা আশানুরূপ ছিল না বলে জানিয়েছেন টিকিট বিতরণের দায়িত্বে থাকা নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক এক ব্যক্তি।
তিনি বলেন, শুক্রবার বলে কিছুটা দর্শনার্থী এসেছেন। অন্যান্য দিন তা-ও আসেন না। উদ্যানের পাশেই চিড়িয়াখানা থাকায় ওখানে যেতেই দর্শনার্থীদের আগ্রহ বেশি।
জানা গেছে, বিশাল এ উদ্যানে নাগরিক নানা সুবিধার অভাব থাকায় এখানে আগের মতো ভিড় জমে না। বিশ্রামের জায়গার অভাব, নিরাপত্তারক্ষীর স্বল্পতা, পাবলিক টয়লেটের অভাবের কারণে দর্শনার্থীরা এ উদ্যানমুখী হন না।
শুক্রবার বিকালে ফয়সাল ইসলাম নামে এক দর্শনার্থীর সঙ্গে কথা হয়। তিনি বাংলা ট্রিবিউনকে বলেন, ‘উদ্যানের বিভিন্ন জায়গায় লেখা, বসার স্থান ছাড়া অন্য কোথাও বসবেন না। কিন্তু বসার স্থানই তো নেই। যা আছে তা খুঁজে বের করতে হয়। তার ওপর সেগুলোর বেশির ভাগই বসার উপযোগী না।’
কেন দর্শনার্থী কমেছে বোটানিক্যাল গার্ডেনে?
শিপন রায় নামে আরেকজন বলেন, ‘বসার জন্য উদ্যানের রাস্তার পাশে কিছু বেঞ্চ আছে। তবে তা যথেষ্ট নয়। আরও বাড়ানো উচিত।’ উদ্যানে পরিবেশের সঙ্গে সামঞ্জস্য রেখে বসার ব্যবস্থা করারও পরামর্শ দেন তিনি।
উদ্যানে পিকনিকের সুব্যবস্থা রাখার আবদার জানিয়ে শিপন রায়ের স্ত্রী অঞ্জু বলেন, ‘বাগানের ভেতরে কিছু জায়গা রাখা দরকার, যেখানে পরিবার নিয়ে বসা যায়। চারপাশ একেবারে জঙ্গলও ভালো না। জায়গা তো আছেই।’
সরেজমিনে আরও দেখা যায়, শুধু বসার স্থান নয়, উদ্যানে পাবলিক টয়েলেটের স্বল্পতাও রয়েছে। যেগুলো রয়েছে, সেগুলোর আরও মেরামত প্রয়োজন। চারপাশের পরিবেশটাও পরিচ্ছন্ন নয়, যা দর্শনার্থীদের বিরক্তির কারণ হয়ে দাঁড়ায়।
উদ্যানের ভেতরে আগের মতো বিভিন্ন হকার বা ব্যক্তি দ্বারা হয়রানির শিকার না হওয়ায় স্বস্তি প্রকাশ করেন কোনও কোনও দর্শনার্থী। তবে তাদের অভিযোগ আছে দর্শনার্থীবান্ধব পরিবেশ নিয়ে।
উদ্যানের কর্মীরা জানান, সকালের দিকে স্থানীয় বাসিন্দারা হাঁটাহাটির জন্য এলেও বিকালে বিভিন্ন স্থান থেকে দর্শনার্থীরা উদ্যান দেখতে আসেন। এসব দর্শনার্থীর বেশির ভাগ রাজধানীর বাইরে থেকে আসেন। ঢাকায় বেড়াতে এসে সুযোগ করে চলে আসেন উদ্যানে। নানা প্রজাতির গাছপালা দেখে আর সুন্দর সতেজ পরিবেশে ভ্রমণপিপাসা মিটলেও তাদের মাঝে রয়েছে বেশ অসচেতনতা।
খোঁজ নিয়ে জানা যায়, এর মূল কারণ হলো, উদ্যানের সচেতনতামূলক বিভিন্ন নির্দেশিকা তারা খেয়াল করেন না বা বোঝেন না। এ ছাড়া নির্দেশনা মানতে বাধ্য বা সতর্ক করার মতো পর্যাপ্ত লোকবলও নেই উদ্যান কর্তৃপক্ষের।
কেন দর্শনার্থী কমেছে বোটানিক্যাল গার্ডেনে?
টাঙ্গাইল থেকে আসা শায়লা আক্তারকে সন্তানসহ উদ্যানের শিশুপার্কে দোলনায় চড়তে দেখা যায়। তার সঙ্গে কথা হলে তিনি বলেন, ‘জায়গাটা অনেক সুন্দর, নিরিবিলি। অনেক নতুন গাছপালা দেখতে পাচ্ছি। ভালো লাগছে।’
শিশুদের দোলনায় বসার কারণ জানতে চাইলে তিনি বলেন, ‘শিশুরা একা বসতে চায় না, তাই তাদের সঙ্গে আমিও বসছি।’
উদ্যানে সার্বক্ষণিক নিরাপত্তার দায়িত্বে থাকেন আনসার সদস্যরা। এত বড় উদ্যান দেখভাল করার জন্য সদস্য সংখ্যা আরও বাড়ানো দরকার বলে তারা মতামত জানান।
Array