প্রতিটি দাম্পত্য সম্পর্কই নানা উত্থান-পতনের মধ্য দিয়ে সামনে এগিয়ে যায়। প্রতিকূলতা সফলতার সঙ্গে মোকাবিলা করতে পারলে সম্পর্ক দীর্ঘস্থায়ী হয়।
যখন একজন মানুষ বৈবাহিক সম্পর্কের মাধ্যমে জীবনসঙ্গীকে পেয়ে যায় তখন হঠাৎ করেই তার সমস্ত পৃথিবী বদলে যায়। এ সময়ে সে মনে করে, তার মানসিক পরিতৃপ্তি হবে অসীম এবং সে কখনও একাকী বোধ করবে না বা অসুখী হবে না।
কিন্তু যখন এই সম্পর্কের দায়িত্বগুলো যখন ধীরে ধীরে সামনে আসে, তখন তার ভাবনায় বদল আসে; যা থেকে বেশিরভাগ ক্ষেত্রে তাকে মানসিকভাবে পীড়া দেয়। এর মূল কারণ হলো- প্রথম থেকেই বৈবাহিক সম্পর্ক নিয়ে সে ভুল ধারণা পোষণ করেছে।
মূলত ভুল ধারণাগুলোর কারণেই ধীরে ধীরে তাদের মনে হয় যে বৈবাহিক সম্পর্ক ব্যর্থ। ফলশ্রুতিতে অনেকক্ষেত্রেই বৈবাহিক সম্পর্ক দীর্ঘস্থায়ী হয় না। তাই স্বামী-স্ত্রী দুজনেরই বৈবাহিক সম্পর্ক নিয়ে প্রচলিত ভুল ধারণাগুলো জানা দরকার।
তাদের বুঝতে হবে যে স্বামী স্ত্রীর মধ্যে শুধু অন্তরঙ্গতার সম্পর্ক থাকে না। উভয়কেই নানা ধরণের উত্থান পতনের মধ্য দিয়ে বৈবাহিক সম্পর্ককে সফল করে তুলতে হয়। নিচে এমন কিছু ভুল ধারণা সম্পর্কে আলোচনা করা হল যা দূর করা প্রয়োজন-
দুজনকে সব সময় একমত হতে হবে:
বৈবাহিক সম্পর্কে এটি অনেক প্রচলিত একটি ভুল ধারণা। আমাদের মনে রাখতে হবে যে, পৃথিবীতে প্রতিটি মানুষই ভিন্ন মানসিকতা এবং ব্যক্তিত্ব সম্পন্ন। তাই দুজনের মত ভিন্ন হওয়াই স্বাভাবিক। অস্বাভাবিক হলো- একের মত অন্যের ওপর চাপিয়ে দেওয়া। এক্ষেত্রে দুজনকে দু’জনার মতের অমিলকে মেনে নেওয়ার মানসিকতা রাখতে হবে।
অন্তরঙ্গতা মানেই যৌন সম্পর্ক:
অনেকেই শুধুমাত্র যৌনতাকে সঙ্গীর সঙ্গে অন্তরঙ্গ সম্পর্ক বজায় রাখার মাধ্যম মনে করেন। যা খুবই ভ্রান্ত একটি ধারণা। অন্তরঙ্গতা শুধুমাত্র যৌন সম্পর্কের মাধ্যমেই আসে না। একত্রে আনন্দের সঙ্গে মজার কিছু রান্না করা, টিভি দেখা, বই পড়া, একসঙ্গে বসে কথা বলা ইত্যাদির মাধ্যমেও অন্তরঙ্গতা সৃষ্টি হয়।
দুজনের ইচ্ছে এবং পছন্দ একই হবে:
এটি অনেক বড় একটি ভুল ধারণা। দুজন ভিন্ন ব্যক্তিত্ব এবং মানসিকতা সম্পন্ন মানুষের ইচ্ছে এবং ভালোলাগা মন্দ লাগা ভিন্ন হবে এটাই স্বাভাবিক। একে অপরকে এই স্বতন্ত্রতা প্রদান করেই একটি অর্থপূর্ণ সম্পর্ক গঠন করা সম্ভব।
বৈবাহিক সম্পর্ক মানেই যৌন সম্পর্ক:
সামাজিক জীবনেই শুধু-উত্থান পতন আসে তাই নয় বরং যৌন সম্পর্কেও এ ধরণের অবস্থা আসতে পারে। যৌন সম্পর্কে সব সময় আগ্রহ না থাকলেই সে সম্পর্ক অর্থপূর্ণ নয় এমনটি ভাবা একেবারেই উচিত নয়। স্বামী-স্ত্রীর সম্পর্ক শারীরিকের চেয়ে বেশি মানসিক।
মানসিকতা না মিললেই সম্পর্ক ছিন্ন করা উচিত:
বর্তমান সময়ে এটি সব থেকে বেশি গুরুতর একটি ভ্রান্ত ধারণা, যা সম্পর্কে ভাঙনের মাত্রা অনেকটাই বাড়িয়ে দিয়েছে। একে অপরকে শুধু মতের মিলের মাধ্যমে নয় বরং মিল বা অমিল দুটির সমন্বয়েই আপন করে নিতে হবে। বৈবাহিক সম্পর্ক ছিন্ন করা কোনো সমাধান নয়।
যখন বৈবাহিক সম্পর্কে আবদ্ধ দুজন মানুষের মধ্য থেকে এই ভ্রান্ত ধারণাগুলো দূর হয়ে যাবে তখনই দুজন মানুষ স্বতন্ত্র থেকেও একে অপরের সঙ্গে আত্মিক বন্ধনে আবদ্ধ থাকতে পারবে এবং একটি অর্থপূর্ণ ও দীর্ঘ দাম্পত্য সম্পর্ক গড়ে উঠবে।
Array