কুষ্টিয়া প্রতিনিধি:
কুষ্টিয়ার কুমারখালীর শিলাইদহে প্রায় পাঁচ একর জমিতে নির্মিত বিশ্বকবি রবীন্দ্রনাথ ঠাকুরের স্মৃতিবিজড়িত কাছারি বাড়ি ও দাতব্য চিকিৎসালয় অরক্ষিত অবস্থায় পড়ে আছে। স্থানীয়রা বাড়িটিতে রাখছেন গরু-ছাগল। ফলে মল-বিষ্ঠার ভাগাড়ে পরিণত হয়েছে ঐতিহাসিক এই স্থাপনাটি। অযত্ন আর অবহেলায় ইতোমধ্যে কাছারি বাড়ির আসবাবপত্র, দরজা, জানালা চুরি হয়ে গেছে।
ইতিহাস বলছে, রবীন্দ্রনাথ ঠাকুরের দাদা প্রিন্স দ্বারকানাথ ঠাকুর ১৮০৭ সালে কুষ্টিয়ার কুমারখালীর শিলাইদহ অঞ্চলের জমিদারি পান। ১৮৮৯ থেকে ১৯০১ সাল পর্যন্ত রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর এখানে জমিদারি পরিচালনা করেন। এই কাছারি বাড়িতে বসেই জমিদারির খাজনা আদায় করা হতো।
স্থানীয় সূত্রে জানা যায়, কয়েক বছর আগেও বাড়িটিতে শিলাইদহ ইউনিয়ন ভূমি অফিসের কার্যক্রম পরিচালিত হতো। শিলাইদহ ইউনিয়ন পরিষদ ভবন নির্মাণের পর ইউনিয়ন ভূমি অফিস সেখানে স্থানান্তর করা হয়েছে। এ কারণে কাছারি বাড়িটি এখন পরিত্যক্ত-জারাজীর্ণ অবস্থায় পড়ে আছে।
স্থানীয় সচেতন মহল মনে করেন, ঠিকমতো সংস্কার ও সংরক্ষণ করা হলে এই বাড়িটিও দর্শনীয় স্থানে পরিণত হতে পারে।
তাদের অভিযোগ, প্রত্নতত্ত্ব অধিদপ্তর “সংরক্ষিত পুরাকীর্তি” হিসেবে বাড়িটি অধিগ্রহণ করেছে। কিন্তু তারা শুধু একটি ঘোষণা নোটিশ টাঙিয়েই দায় সেরেছে। তাদের এই নোটিশ কেউ গ্রাহ্য করছে না।
সরেজমিনে দেখা যায়, বর্তমানে কাছারি বাড়িটিতে স্থানীয় লোকজন গোবরের কাঠি শুকাতে দেন। বাড়ির সামনের ফাঁকা জায়গায় গরু, ছাগল বেঁধে রাখা। দাতব্য চিকিৎসালয়ের ভাঙা চারটি কক্ষের মধ্যে দুটি কক্ষের ছাদ সংস্কার করা হলেও মূল বাড়িটির কোনো ধরনের সংস্কার করা হয়নি। অযত্নে বাড়ির পলেস্তারা, বারান্দাসহ কয়েকটি কক্ষের ছাদের কিছু অংশ ভেঙে পড়েছে। কিছু কিছু জায়গার ইট খসে পড়েছে। দেয়ালের গায়ে জন্মেছে বট, পাকুর গাছ, আগাছায় ছেয়ে গেছে চারপাশ।
স্থানীয় সংস্কৃতিকর্মী লিটন আব্বাস বলেন, “রবীন্দ্রনাথের স্মৃতিবিজড়িত কাছারি বাড়ি ও দাতব্য চিকিৎসালয়টি সংরক্ষণ করা উচিত। এসবের অর্থনৈতিক মূল্য না থাকলেও ঐতিহাসিক মূল্য রয়েছে।”
কুষ্টিয়া ইসলামী বিশ্ববিদ্যালয়ের (ইবি) কলা অনুষদের ডিন ও রবীন্দ্র গবেষক অধ্যাপক ড. সরোওয়ার মুর্শেদ বলেন, “রবীন্দ্রনাথ ঠাকুরের শিলাইদহ কাছারি বাড়ি ও মহৌষি দাতব্য চিকিৎসালয়টি সরকারের পুরাকীর্তি বিভাগ অধিগ্রহণ করেছে। তবে দুঃখের বিষয় পুরাকীর্তি হিসেবে সংরক্ষণে তারা তেমন কোনো পদক্ষেপ নেয়নি।”
এ বিষয়ে কুমারখালী উপজেলা নির্বাহী অফিসার (ইউএনও) বিতান কুমার মন্ডল বলেন, “রবীন্দ্রনাথ ঠাকুরের স্মৃতিবিজড়িত এই বাড়িটি সংরক্ষণের জন্য প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নিতে মন্ত্রণালয়ে আবেদন করা হয়েছে। খুব দ্রুতই কাছারি বাড়িটি সংরক্ষণের জন্য প্রত্নতত্ত্ব অধিদপ্তরের নির্দেশনা অনুযায়ী কাজ শুরু করা হবে।”
এ বিষয়ে প্রত্নতত্ত্ব অধিদপ্তরের খুলনার আঞ্চলিক পরিচালক আফরোজা খান মিতা জানান, শিলাইদহ কাছারি বাড়ি ও দাতব্য চিকিৎসালয় সংরক্ষণে প্রত্নতত্ত্ব অধিদপ্তর কাজ করছে। বাড়িটির মূল ভবনের কয়েকটি কক্ষ ও বারান্দার ছাদ ভেঙে গেছে। ২০২২-২৩ অর্থবছরের বরাদ্দ দিয়ে ভেঙে যাওয়া ছাদ সংস্কারের পাশাপাশি অন্যান্য কাজ করা হবে। পর্যায়ক্রমে পুরো ভবনটিকেই আগের রূপে ফিরিয়ে নেওয়া হবে।
প্রত্নতত্ত্ব অধিদপ্তরের এই কর্মকর্তা বলেন, “প্রত্নতত্ত্ব অধিদপ্তরকে শুধুমাত্র কাছারি বাড়ির ভবন ও দাতব্য চিকিৎসালয়টি দেওয়া হয়েছে। সীমানা প্রাচীর নির্মাণের জন্য আমরা আশপাশের আরও কিছু খাস জমি চেয়েছি। ইতিমধ্যে দাতব্য চিকিৎসালয়ের বেশ কিছু কাজ করেছি। খুব শিগগিরই বাড়িটিকেও আগের রূপে দেখতে পাওয়া যাবে।”
Array