সরকারের অনুমোদন ছাড়াই রাজশাহী সিটি করপোরেশনে (রাসিক) ৯টি শাখা খুলেছিলেন সাবেক মেয়র এএইচএম খায়রুজ্জামান লিটন। এসব শাখায় প্রায় ২০০ দলীয় নেতাকর্মীকে নিয়োগ দেন তিনি। এসব কর্মচারী দপ্তর ছেড়ে লিটনের রাজনৈতিক হুকুম তামিলেই ব্যস্ত থাকতেন বেশি। এখন এসব অপ্রয়োজনীয় শাখাকে বিলুপ্ত করতে চায় কর্তৃপক্ষ। এরই মধ্যে এগুলো বন্ধে নীতিগত সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছে। সিটি করপোরেশন কর্তৃপক্ষ বলছে, এ শাখাগুলোর কোনো প্রয়োজন নেই।
বিভাগগুলো হলো সামাজিক বিরোধ নিষ্পত্তি শাখা, ধর্মবিষয়ক শাখা, দুর্যোগ ব্যবস্থাপনা ও ত্রাণ শাখা, শিক্ষা ও আইসিটি বিভাগ, আইসিটি শাখা, সিটি মিউজিয়াম ও আর্কাইভ শাখা, আইন ও বিচার বিভাগ, আইন শাখা এবং নারী ও শিশু কল্যাণ শাখা।
সিটি করপোরেশনের তথ্যমতে, রাসিকে অনুমোদিত শাখা আছে ১১টি। এগুলো হলো সচিবালয় বিভাগ, সাধারণ প্রশাসন বিভাগ, নিরাপত্তা শাখা, জনসংযোগ শাখা, ম্যাজিস্ট্রেসি শাখা, অ্যানফোর্সমেন্ট অ্যান্ড মনিটরিং শাখা, সম্পত্তি শাখা, মসজিদ শাখা, ভান্ডার শাখা, শহীদ এএইচএম কামারুজ্জামান বোটানিক্যাল গার্ডেন ও চিড়িয়াখানা এবং ক্রীড়া ও সংস্কৃতি শাখা। এর বাইরে ২০১৮ সালে নির্বাচিত হওয়ার পর নতুন করে ৯টি শাখা চালু করেন মেয়র লিটন। এসব শাখার কোনো অনুমোদন না থাকলেও বাজেট অনুমোদন দিয়ে কাজ হতো। এসব কাজ ও কর্মকর্তা-কর্মচারীদের বেতন-ভাতা দেওয়া হতো সিটি করপোরেশনের নির্ধারিত বার্ষিক বাজেট থেকে।
সিটি করপোরেশন সূত্র জানায়, শাখাগুলো অনুমোদনের জন্য মন্ত্রণালয়ে পাঠানো হয়েছিল। কিন্তু শেষপর্যন্ত অনুমোদন পাওয়া যায়নি। অনুমোদন না পেলেও তৎকালীন মেয়র খায়রুজ্জামান লিটন বিভাগগুলো পরিচালনা করেছেন। বিভাগ চালুর নামে বড় অঙ্কের অর্থ অপচয়ের পথ সৃষ্টি করেছেন তিনি। এমনকি কিছু বিদেশিকে ডেকে এনে বড় বড় অনুষ্ঠান করে অর্থ অপচয় করেছেন মেয়র।
সিটি করপোরেশনের একজন শীর্ষ কর্মকর্তা জানান, শাখাগুলোতে মেয়র লিটন তার অনুসারী নেতাকর্মীদের দৈনিক মজুরি ভিত্তিতে নিয়োগ দেন। ওই অনুমোদন ছাড়া কোনো শাখা খোলার বিষয়ে কর্মকর্তারা আপত্তি জানালেও তিনি কানে তোলেননি। মেয়র যা বলতেন, তাই করতে হতো। তারা করপোরেশন থেকে বেতন নিতেন, কিন্তু কোনো কাজ ছিল না। মিটিং-মিছিলই তাদের বড় কাজ।
এ বিষয়ে রাসিকের প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তা ড. এবিএম শরীফ উদ্দিন বলেন, করপোরেশনের ৬টি সাংগঠনিক বিভাগ রয়েছে। এই ৬টি বিভাগ ছাড়া আরও ৬টি বিভাগ সাবেক মেয়র এএইচএম খায়রুজ্জামান লিটন খুলেছিলেন। বিভাগগুলোর অধীনে অনেক শাখা প্রস্তাব করা হয়েছিল। এগুলোর অনুমোদন দেয়নি সরকার। তাই বাজেট অনুমোদিত হিসেবে এটি পরিচালিত হয়েছে।
তিনি আরও বলেন, পরিবর্তিত পরিস্থিতিতে সিটি করপোরেশনের জায়গা বৃদ্ধি না হওয়া পর্যন্ত করপোরেশনের অনুমোদনের বাইরে কোনো শাখা আর ধারণ করতে চাচ্ছি না। পর্যায়ক্রমে এই শাখাগুলো বন্ধ করে দেওয়ার বিষয়ে নীতিগত সিদ্ধান্ত হয়েছে।
বেসরকারি সংস্থা সুশানের জন্য নাগরিক-সুজনের রাজশাহী জেলা শাখার সমন্বয়ক মিজানুর রহমান বলেন, এ বিভাগগুলো রাজনৈতিক পুনর্বাসনের জন্য তৈরি করা হয়েছিল। তাদের বেতন জনগণের ট্যাক্সের টাকা থেকেই দেওয়া হতো। ভবিষ্যতে এরকম কোনো কিছু যাতে সিটি করপোরেশন হাতে না নেয়, এ জন্য আইনি ব্যবস্থা নেওয়া উচিত।
Array