ঈদুল আজহার সময় দেশজুড়ে কোরবানিযোগ্য পশুর চাহিদা থাকে ব্যাপক। ঈদকে কেন্দ্র করে প্রতি বছর রাজধানীর বিভিন্ন জায়গায় পশুর হাট বসলেও অনেকে ফার্ম থেকে কোরবানিযোগ্য পশু কিনতে পছন্দ করেন। অনেক ক্রেতা আগেই এসব ফার্মে গিয়ে কোরবানির পশু পছন্দ করে অগ্রিম টাকা পরিশোধ করে বুকিং দিয়ে রাখেন। তাই কোরবানি ঘিরে কয়েক মাস আগে থেকেই প্রস্তুতি নেন খামার সংশ্লিষ্টরা।
গত কয়েক বছরে রাজধানীর বিভিন্ন জায়গায় ব্যক্তি উদ্যোগে গড়ে উঠেছে অসংখ্য পশুর খামার। এসব খামারে মূলত ঈদুল আজহাকে কেন্দ্র করেই পশু লালনপালন করা হয়। তবে বছরের অন্য সময়ও এসব খামার থেকে পশু কিনতে পারেন ক্রেতারা। দেশের বিভিন্ন স্থান থেকে ছোট গরু সংগ্রহ করে এসব খামারে লালনপালন করে ঈদের সময় বিক্রি করা হয়।
শনিবার (১১ মে) সন্ধ্যায় রাজধানীর রামপুরার ডিআইটি রোডের ‘আলইকুয়া ক্যাটল ফার্ম’ ঘুরে দেখা যায়, ফার্মে থাকা পশু পালনের জন্য প্রতিটি স্লট বিভিন্ন জাতের গরুতে ভরা। পশু পরিচর্যায় ব্যস্ত সময় পার করছেন কর্মীরা। কর্মীদের কেউ কেউ পশুগুলোকে খাবার খাওয়ানোসহ নানাভাবে কাজে ব্যস্ত সময় পার করছে।
ফর্মের তত্ত্বাবধায়ক মহিউদ্দিন ভূইয়া সনি ঢাকা পোস্টকে বলেন, আশপাশে ক্যাটল ফার্ম তেমন নেই। তাই রামপুরা এলাকার লোকজন গরু দেখতে আসেন। আমার এখানে রামপুরা ও শাহজাহানপুর এলাকার লোকজন বেশি আসেন।
জানতে চাইলে তিনি বলেন, আমরা পাবনা, কুড়িগ্রাম ও চুয়াডাঙ্গাসহ বেশ কয়েকটি এলাকা থেকে গরু সংগ্রহ করি। এবারের প্রস্তুতি আমরা আরও কয়েক মাস আগে থেকেই নিয়েছি। তবে বাজারে গো-খাদ্যের দাম বেশি। কোরবানির পশু প্রস্তুত করতে এই বাজারে খরচা বেড়ে গেছে। সাইজ অনুযায়ী এবার গরুর দাম গতবারের চেয়ে কিছুটা বেশি মনে হতে পারে ক্রেতাদের। দাম বৃদ্ধির জন্য ফার্মের মালিকদের দোষ দিয়ে লাভ নেই।
মহিউদ্দিন বলেন, আমার ফার্মে বেশ কয়েকটি জাতের ৩০টির বেশি গরু রয়েছে। এগুলো আমাদের ফার্মেই প্রস্তুত করা। এছাড়াও ২/৩ দিনের মধ্যে দেশের বিভিন্ন প্রান্ত থেকে আরও গরু আসবে। বর্তমানে আমার ফার্মে ৮০ থেকে ৮০০ কেজি ওজনের গরু রয়েছে। ক্রেতারা চাইলে ৪০ হাজার টাকা বুকিং দিয়ে কোরবানির আগ পর্যন্ত আমাদের এখানে গরু রাখতে পারবেন। তারা চাইলে আমরা কোরবানির আগে তাদের কাছে পৌঁছে দেওয়ার সুবিধা দেব।
রাজধানীসহ আশপাশের এলাকায় অর্ধশত গরুর খামার রয়েছে। পশুর বাজারের পাশাপাশি কোরবানির ঈদে এসব খামারে ক্রেতাদের ভিড় থাকে চোখে পড়ার মতো। বিশেষ করে ঈদের আগের রাতে তো কথাই নেই। মূলত যারা পশুর হাটের ঝামেলা এড়াতে চান, তাদেরই বেশি দেখা মেলে এসব খামারে।
এদিকে মৎস্য ও প্রাণিসম্পদ মন্ত্রণালয় মনে করছে, দেশে চাহিদার চেয়ে বেশি কোরবানির পশু বিক্রির জন্য প্রস্তুত রয়েছে। তারা বলছে, এ বছর কোরবানির জন্য ১ কোটি ৩০ লাখের বেশি পশু রয়েছে। তাই এবার বিদেশ থেকে পশু (গরু-মহিষ) আমদানির অনুমতি দেওয়া হবে না।
প্রাণিসম্পদ অধিদপ্তরের মহাপরিচালক (ডিজি) ডা. মোহাম্মদ রেয়াজুল হক ঢাকা পোস্টকে বলেন, দেশে চাহিদা অনুযায়ী কোরবানির পশু রয়েছে। এ নিয়ে আমাদের ব্যাপক প্রস্তুতি রয়েছে। পশু আমদানির প্রশ্নই ওঠে না। যদি কেউ আমদানি করে তাহলে লোকসানে পড়বে।
গত বছর সারা দেশে কোরবানিযোগ্য গবাদি পশুর সংখ্যা ছিল ১ কোটি ২৫ লাখ ৩৬ হাজার ৩৩৩টি। তার মধ্যে ১ কোটি ৪১ হাজার ৮১২টি পশু কোরবানি করা হয়েছিল।
কোরবানি হওয়া গবাদিপশুর মধ্যে গরু ৪৫ লাখ ৮১ হাজার ৬০টি, মহিষ ১ লাখ ৭ হাজার ৮৭৫টি, ছাগল ৪৮ লাখ ৪৯ হাজার ৩২৮টি, ভেড়া ৫ লাখ ২ হাজার ৩০৭টি এবং অন্যান্য পশু ছিল ১ হাজার ২৪২টি।
Array