মসজিদে নববী মুসলামনদের কাছে অন্যতম পবিত্র স্থানগুলোর একটি। মক্কার মসজিদুল হারামের পরই এই মসজিদের অবস্থান। আল্লাহর রাসূল সা. মক্কা থেকে মদিনায় হিজরতের পরেই সর্বপ্রথম মসজিদ নির্মাণের কাজে মনোযোগ দেন।
মদিনায় এসে আল্লাহর রাসূলের উটটি যেখানে বসেছিল সেখানেই তিনি মসজিদে নির্মাণের উদ্যোগ নেন। এই জায়গাটি দুইজন এতিম বালকের ছিল। তিনি তাদের ন্যায্য মূল্য পরিশোধ করে জায়গাটি মসজিদের জন্য কিনে নেন।
মসজিদে নির্মাণের কাজে তিনি নিজেও অংশ নিয়েছিলেন। তিনি নিজ হাতে মসজিদের ইট-পাথর বহন করেছিলেন।
মসজিদ নির্মাণের আগে সেই জমিতে পৌত্তলিকদের কয়েকটি কবর ছিল। কিছু অংশ ছিল বিরান, উঁচু-নিচু। খেজুর এবং অন্যান্য কয়েকটি গাছও ছিল।
নবীজি সা. পৌত্তলিকদের কবর খোঁড়ালেন, উঁচু-নিচু জায়গা সমতল করলেন। খেজুর এবং অন্যান্য গাছ কেটে কেবলার দিকে লাগিয়ে দিলেন। তখন কেবলা ছিল বায়তুল মাকদিস।
মসজিদে তিনটি দরজা লাগানো হলো। দেয়ালগুলো কাঁচা ইট এবং কাদা দিয়ে গাঁথা হয়েছিল। ছাদের ওপর খেজুর শাখা এবং পাতা বিছিয়ে দেওযা হলো। কেবলার সামনের দেয়াল থেকে পেছনের দেয়াল পর্যন্ত একশ হাত দৈর্ঘ ছিল। প্রস্থ ছিল এর থেকে কম। ভিত্তি ছিল প্রায় তিন হাত গভীর।
নবীজি সা. মসজিদের অদূরে কয়েকটি কাঁচা ঘর তৈরি করলেন। এসব ঘরের দেয়াল খেজুর পাতা ও শাখা দিয়ে তৈরি। এই ঘরগুলো প্রিয় নবী সা.-এর সহধর্মীনীদের বসবাসের জন্য বানানো হয়েছিল।
নবীজির নিজ হাতে নির্মিত মসজিদ, মসজিদে নববী শুধু নামাজ আদায়ের জন্য ছিল না। এই মসজিদ ছিল সাহাবিদের মিলনস্থল। তারা এখানে একত্রিত হতেন। এখান থেকে ধর্মীয় বিষয়াদী শিখতেন।
এই মসজিদে একত্রিত হয়ে তারা গোত্রীয় দ্বন্দ্ব-সংঘাত, ঘৃণা-বিদ্বেষ সব ভুলে পারস্পরিক সম্প্রীতি ও সৌহার্দ্যপূর্ণভাবে অবস্থান করতেন।
এই মসজিদকে কেন্দ্র করে নবগঠিত মদিনা রাষ্ট্রের যাবতীয় কাজ কর্ম পরিচালিত হতো। এখান থেকেই বিভিন্ন অভিযান পরিচালনার জন্য বাহিনী পাঠানো হতো।
এই মসজিদের অবস্থান ছিল একটি সংসদের মতো। এতে মজলিশে শুরা এবং মজলিশে এন্তেযামিয়ার অধিবেশন বসতো।
নিরাশ্রয়, বাড়ী ঘর, পরিবার-পরিজন, সহায়-সম্পত্তি নেই এমন মুহাজির মুসলমানদের আশ্রয়স্থলও ছিল মসজিদে নববী।
(আর রাহীকুল মাখতুম, ১২৩)
Array