তীব্র তাপপ্রবাহে হাঁসফাস অবস্থা। বৃষ্টির জন্য চাতক পাখির মতো সবাই তাকিয়ে আছেন আকাশের দিকে। সবাই নিজের পাপের কথা স্মরণ করে ক্ষমা চাইছেন রবের কাছে। বৃষ্টির জন্য মানুষকে নিয়ে নামাজ আদায় করছেন দেশের বিভিন্ন অঞ্চলের ইমাম-খতিবরা।
তীব্র তাপমাত্রার মাঝেই স্বাভাবিক নিয়ম মেনেই জীবনযাত্রার সব ব্যস্ততা ঠিক রাখতে হচ্ছে। পেশা ঠিক রাখতে হচ্ছে সবাইকে। কেউ অফিস করছেন, কেউ মাঠে ফসলের কাজ করছেন, কেউবা তীব্র তাপপ্রবাহের মাঝেই জীবিকার তাগিদে রিক্সা নিয়ে বের হচ্ছেন পিচঢালা রাস্তায়। বৈরি আবহাওয়াতেও থেমে কারো জীবনযাত্রা।
গ্রীষ্মকালে পানি পানের চাহিদা বেশি দেখা দেয়। কাজকর্মের জন্য ঘরের বাইরে বেড়ানো মানুষদের পিপাসার চাহিদা বেশি থাকে অন্যদের তুলনায়। তীব্র তাপপ্রবাহের মাঝে তাদের পানি পান করারনো বিশেষ ফজিলত রয়েছে। আল্লাহর রাসূল সা. এই কাজকে সর্বোত্তম সদকা বলেছেন।
হজরত সাদ ইবনে উবাদা রা. বলেন, (এক দিন) আমি (নবীজিকে) বললাম, ইয়া রাসুলুল্লাহ! কোন সদকা উত্তম? তিনি বলেন, পানি পান করানো। (নাসায়ি, হাদিস : ৩৬৬৫)
অন্য বর্ণনায় এসেছে, রাসুল (সা.) বলেন, ‘পানি পান করানো অপেক্ষা অধিক সওয়াবপূর্ণ সাদকা আর নেই।’ -(সহিহ আত-তারগিব ৯৬০)
পানি পানের ফজিলত সম্পর্কে আরেক হাদিসে হজরত সাদ বিন উবাদাহ রা. থেকে বর্ণিত। তিনি বলেন, ‘হে আল্লাহর রাসুল! উম্মে সাদ মৃত্যুবরণ করেছেন। (তার পক্ষ থেকে) কোন সাদকা সর্বোত্তম হবে? তিনি বললেন, পানি পান করানো। বর্ণনাকারী বলেন, তিনি একটি কূপ খনন করে বললেন, এটা উম্মে সাদের (কল্যাণের) জন্য ওয়াকফ করা হলো।’ (সুনানে আবি দাউদ ১৬৮৩)
রাসূল সা. আরও বলেন, ‘যে ব্যক্তি পানির কূপ খনন করল আর সে কূপ থেকে মানুষ বা কোনো পাখি পানি পান করল, এর বিনিময়ে আল্লাহ তাকে কিয়ামতের দিন সওয়াব প্রদান করবেন।’ (সহিহ ইবনু খুজায়মা ১২৯২)
রাসূল সা. বলেছেন, ‘আদম সন্তানের দেহে তিনশ ষাটটি হাড় বা গ্রন্থি রয়েছে। এগুলোর প্রতিটির জন্য প্রত্যেক দিন সদকা রয়েছে। প্রতিটি উত্তম কথাই সদকা। এক ভাইয়ের পক্ষ থেকে অন্য ভাইকে সাহায্য করা সাদকা। এক ঢোক পানি পান করানো সাদকা। পথ থেকে কষ্টদায়ক বস্তু সরিয়ে দেওয়াও সাদকা।’ -(আল-আদাবুল মুফরাদ ৪২২)
তীব্র গরমে অন্যকে পানি পান করানো ফজিলত বর্ণনার পাশাপাশি কেউ পানি পান করতে চাইলে তাকে বারণ করতে নিষেধ করছেন তিনি।
এক হাদিস শরিফে ইরশাদ হয়েছে, আয়েশা রা. বলেন, ইয়া রাসুলুল্লাহ! এমন কী জিনিস আছে, যা সংগ্রহে বাধা দেওয়া হালাল নয়? তিনি বলেন, পানি, লবণ ও আগুন।
আয়েশা রা. বলেন, আমি বললাম, ইয়া রাসুলুল্লাহ! এই পানি সম্পর্কে তো আমরা জানি, কিন্তু লবণ ও আগুনের ব্যাপারে কেন বাধা দেওয়া যাবে না? তিনি বলেন, হে হুমায়রা! যে ব্যক্তি আগুন দান করল, সে যেন ওই আগুন দিয়ে রান্না করা যাবতীয় খাদ্যই দান করল। যে ব্যক্তি লবণ দান করল, ওই লবণে খাদ্য যতটা সুস্বাদু হলো তা সবই যেন সে দান করল।
যে ব্যক্তি কোনো মুসলমানকে এমন স্থানে পানি পান করালো, যেখানে তা সহজলভ্য, সে যেন একটি গোলামকে দাসত্বমুক্ত করল এবং যে ব্যক্তি কোনো মুসলমানকে এমন স্থানে পানি পান করালো, যেখানে তা দুষ্প্রাপ্য, সে যেন তাকে জীবন দান করল। (ইবনে মাজাহ, হাদিস : ২৪৭৪)
Array