ব.বি ক্যাম্পাস প্রতিনিধি:
নরম মেঘের ভেলার মতো কাশফুল। বাংলার মুখ আমি দেখিয়াছি, তাই আমি পৃথিবীর রূপ/ খুঁজিতে যাই না আর’- বহুকাল আগেই লিখেছেন রূপসী বাংলার কবি জীবনানন্দ দাশ। জন্মভূমি বরিশাল হয়তো কবিকে এতটাই মুগ্ধ করেছে, তিনি আর পৃথিবী দেখার প্রয়োজন মনে করেননি। তাঁর অনবদ্য পঙ্ক্তির পর বয়ে গেছে বহু সময়। তবু বাংলার রূপ এখনও অপরূপ। নানা রূপে নানা সাজে সেজে ওঠে নদীমাতৃক সবুজ বাংলা। প্রকৃতির রূপ-রস আর আমাদের জীবনযাপন হয়ে ওঠে একাকার। শরৎ ঋতু তাতে ভিন্ন মাত্রা দিয়ে করে বিমোহিত। শরৎ উপভোগের অপার অনুষঙ্গ হলো কাশফুল। দক্ষিণের জনপদ বরিশালের পথে পথে এখন হাসছে কাশফুল। সবুজের বুকে সাদা মেঘের ছোঁয়া প্রকৃতিতে ছড়াচ্ছে মুগ্ধতা।
নদীনালা, খালবিলের তীরে কাশফুল; বাদ নেই খোলা জায়গাও। সর্বত্র কাশফুলের সমাহারই জানান দিচ্ছে প্রকৃতিতে এখন ভরা শরৎ। স্বচ্ছ নীল আকাশে সাদা মেঘের সৌন্দর্য সুধা নিতে কাশবনে ভিড় করছেন প্রকৃতিপ্রেমীরা। বিকেল হলেই তরুণ-তরুণীর ভিড় চোখে পড়ার মতো। কাশফুলের রূপে ঢাকা পড়েছে বরিশাল বিশ্ববিদ্যালয়ের বিস্তৃত এলাকা। ক্যাম্পাস সংলগ্ন কীর্তনখোলার তীর, বরিশাল-ভোলা ও বরিশাল-কুয়াকাটা মহাসড়কের দু’পাশ ছেয়ে গেছে কাশফুলে, যেন প্রকৃতি নিজ হাতে রঙে ঢেলে সাজিয়েছে ক্যাম্পাস।
নগরীর উন্মুক্ত স্থানেও বাতাসে দুলছে কাশফুল। শুধু বরিশাল নগর নয়, দক্ষিণের সর্বত্র এখন এমন দৃশ্য। সৌন্দর্যপিপাসুরা সপরিবারে ঘুরতে যাচ্ছেন বাড়ির পাশের কাশবনে।
‘আজি কি তোমার মধুর মুরতি
হেরিনু শারদ প্রভাতে!
হে মাত বঙ্গ, শ্যামল অঙ্গ
ঝলিছে অমল শোভাতে।
পারে না বহিতে নদী জলধার,
মাঠে মাঠে ধান ধরে নাকো আর-
ডাকিছে দোয়েল গাহিছে কোয়েল
তোমার কাননসভাতে!
মাঝখানে তুমি দাঁড়ায়ে জননী,
শরৎকালের প্রভাতে’
বেড়াতে আসাদের নিঃসন্দেহে শরৎ নিয়ে কবিগুরুর এমন পঙ্ক্তিমালা মন ছুঁয়ে দিচ্ছে!
বরিশাল বিশ্ববিদ্যালয়ের কাশ-সৌন্দর্য উপভোগ করতে বিকেল হলেই শিক্ষার্থী দলে দলে নেমে পড়েন। নগরীর বাসিন্দারাও আসেন অপেক্ষাকৃত এই নিরিবিলিতে। বিশ্ববিদ্যালয়ের রসায়ন বিভাগের ছাত্রী কানিজ ফাতিমা মাহী বলেন, ক্যাম্পাসে সবুজ ঘাসের ডগায় থোকায় থোকায় কাশফুল সবাইকে হাতছানি দিয়ে ডাকছে। ক্যাম্পাস ঘুরে কাশফুলের ছোঁয়ায় হলে ফিরি অফুরান প্রাণশক্তি নিয়ে।
পরিবার নিয়ে ঘুরতে আসা ফরিদ পাটোয়ারী বলেন, প্রতিবছর এই সময়ে বিশ্ববিদ্যালয় এলাকায় কাশফুল ফোটে। স্ত্রী-সন্তানদের দেখাতে নিয়ে এসেছি। সবাই খুব খুশি। কাশফুল ছনগোত্রীয় ঘাস। এটি উচ্চতায় ৩ মিটার বা তার কমবেশি হয়। চিরর পাতার দু’পাশ বেশ ধারালো। নদীতীর, জলাভূমি, চরাঞ্চল, শুকনো এলাকা, পাহাড় কিংবা গ্রামের উঁচু জায়গায় কাশের ঝাড় বেড়ে ওঠে। তবে নদীতীরেই বেশি জন্মে।
সৌন্দর্যের পাশাপাশি কাশফুলের বেশ কিছু ঔষধি গুণ রয়েছে। গাছের মূলসহ অন্যান্য উপাদান দিয়ে তৈরি ভেষজ ওষুধ নিয়মিত সেবনে পেটের জটিলতা কমে। কাশমূল বেটে চন্দনের মতো শরীরে মাখলে দূর হয় দুর্গন্ধ। কাশ দিয়ে ঝাড়ূ, ডালি, মাদুর তৈরি করেন গ্রামের নারীরা। কাশফুল মনের কালিমা দূর করে এমন বিশ্বাসে অনেকে শুভ কাজে এটির ফুল ও পাতা ব্যবহার করেন।
Array