জাতীয় নির্বাচনকে কেন্দ্র করে বাংলাদেশিদের জন্য নতুন ভিসানীতি ঘোষণা এবং এর প্রয়োগ শুরু করেছে যুক্তরাষ্ট্র। দেশটির এমন পদক্ষেপের কারণে প্রশাসনের অনেক কর্মকর্তার কপালে চিন্তার ভাঁজ পড়েছে। বিষয়টি নিয়ে কর্মকর্তারা প্রকাশ্যে কোনো আলোচনায় অংশ না নিলেও ভেতরে ভেতরে চলছে কানাঘুষা।
প্রশাসনের সিনিয়র কর্মকর্তারা বলছেন, ভিসা নিষেধাজ্ঞা নিয়ে ‘জুনিয়র’ কর্মকর্তারা তাদের কাছে জানতে চাচ্ছেন। এটি নিয়ে অনেক কর্মকর্তা চিন্তা বা আতঙ্কে আছেন। আতঙ্কের কারণ হিসেবে তারা নির্বাচনকালীন দায়িত্ব পালনের কথা উল্লেখ করছেন। কারণ, অধিকাংশ কর্মকর্তাই উচ্চ শিক্ষা কিংবা পেশাগত বিভিন্ন শর্ট কোর্সে প্রশিক্ষণের জন্য যুক্তরাষ্ট্র ও ইউরোপে যান। ভিসানীতির কারণে তাদের সেই পথ বন্ধ হয়ে যাবে কি না, সেটি নিয়ে সংশয়ে আছেন!
আমেরিকার স্যাংশন ঘোষণার পর থেকে অনেক কর্মকর্তার মধ্যে টেনশন কাজ করছে। এর মধ্যে মাঠ প্রশাসনের কর্মকর্তারা বেশি। কারণ, তারাই নির্বাচনী কাজে সরাসরি সম্পৃক্ত থাকেন। বিষয়টি নিয়ে তাদের অনেকে আমাদের কাছে জানতে চাইছেন। তাদের মধ্যে এক ধরনের শঙ্কা সৃষ্টি হয়েছে। মোবাইলেও একে-অন্যকে বিষয়টি নিয়ে জিজ্ঞেস করছেন বলে আমরা শুনেছি
সরকারের একজন সচিব (নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক) সংশ্লিষ্ট সূত্রে জানা গেছে, যুক্তরাষ্ট্রের ভিসানীতি ঘোষণার পর থেকে প্রশাসনের কর্মকর্তাদের মধ্যে নানা আলোচনা হচ্ছে। এমনকি বিভিন্ন মহল মোবাইলে একে-অন্যকে জিজ্ঞেস করছেন, কারা কারা ভিসা নিষেধাজ্ঞার আওতায় পড়লেন এবং ভবিষ্যতে কারা পড়তে পারেন।
এ বিষয়ে নাম প্রকাশ না করার শর্তে সরকারের একজন সচিব ঢাকা পোস্টকে বলেন, আমেরিকার স্যাংশন ঘোষণার পর থেকে অনেক কর্মকর্তার মধ্যে টেনশন কাজ করছে। এর মধ্যে মাঠ প্রশাসনের কর্মকর্তারা বেশি। কারণ, তারাই নির্বাচনী কাজে সরাসরি সম্পৃক্ত থাকেন। বিষয়টি নিয়ে তাদের অনেকে আমাদের কাছে জানতে চাইছেন। তাদের মধ্যে এক ধরনের শঙ্কা সৃষ্টি হয়েছে। মোবাইলেও একে-অন্যকে বিষয়টি নিয়ে জিজ্ঞেস করছেন বলে আমরা শুনেছি।’
তিনি আরও বলেন, সচিবালয়ে যারা কর্মরত আছেন তারাও বিষয়টি নিয়ে আলোচনা করছেন। কেউ কেউ আমাদের জিজ্ঞেস করছেন, সামনে কী হতে চলেছে? আমরা বলছি, বিষয়টি নিয়ে চিন্তিত না হতে।’
নির্বাচনের সময় জেলা প্রশাসক (ডিসি) ও উপজেলা নির্বাহী অফিসাররা (ইউএনও) রিটার্নিং কর্মকর্তা ও সহকারী রিটার্নিং কর্মকর্তা হিসেবে দায়িত্ব পালন করেন। এ দায়িত্ব পালনই তাদের জন্য কাল হয়ে দাঁড়াল কি না, সেটি নিয়ে সন্দিহান তারা।
এ বিষয়ে নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক এক অতিরিক্ত সচিব ঢাকা পোস্টকে বলেন, নির্বাচনে ডিসি ও ইউএনওরা সরাসরি সম্পৃক্ত থাকেন। ভিসা নিষেধাজ্ঞা ঘোষণার কারণে তাদের কেউ কেউ আমাদের কাছে আতঙ্কের কথা জানাচ্ছেন। তবে আমরা তাদের অভয় দিচ্ছি।
চট্টগ্রাম বিভাগের এক ডিসি নাম প্রকাশ না করে ঢাকা পোস্টকে বলেন, ভিসানীতি ঘোষণার পর আমার স্ত্রী জিজ্ঞেস করছেন, এ নীতির কারণে আমার কোনো সমস্যা হতে পারে কি না। আমি বারবার বলেছি, নিজে ঠিক থাকলে সমস্যা হবে কেন? এ ছাড়া পরিবারের অনেক সদস্য এ নিয়ে নানা প্রশ্ন করছেন। সবমিলিয়ে একটা আতঙ্ক কাজ করে মাঝে-মধ্যে।’
ভিসানীতি ঘোষণার পর আমার স্ত্রী জিজ্ঞেস করছেন, এ নীতির কারণে আমার কোনো সমস্যা হতে পারে কি না। আমি বারবার বলেছি, নিজে ঠিক থাকলে সমস্যা হবে কেন? এ ছাড়া পরিবারের অনেক সদস্য এ নিয়ে নানা প্রশ্ন করছেন। সবমিলিয়ে একটা আতঙ্ক কাজ করে মাঝে-মধ্যে
চট্টগ্রাম বিভাগের এক ডিসি (নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক)
নিষেধাজ্ঞায় প্রবেশের পথ বন্ধ, হবে সম্মানহানিও
‘বিসিএস ক্যাডার কর্মকর্তাদের সক্ষমতা বৃদ্ধির মাধ্যমে সরকারকে শক্তিশালীকরণ’ শীর্ষক প্রকল্পের তথ্য পর্যালোচনা করে দেখা গেছে, পিএইচডি ফেলোশিপ, মাস্টার ফেলোশিপ, বিভিন্ন শর্ট কোর্সের জন্য মধ্যম ও শীর্ষ পর্যায়ের কর্মকর্তাদের ৮০ শতাংশের বেশির গন্তব্য যুক্তরাষ্ট্র ও ইউরোপ। এ ছাড়া পছন্দের মধ্যে রয়েছে অস্ট্রেলিয়া ও সুইডেনের মতো দেশ। ভিসা নিষেধাজ্ঞার ফলে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র ছাড়াও ইউরোপে ঢোকার পথও বন্ধ হয়ে যেতে পারে!
ওই ডিসি বলেন, ভিসা নিষেধাজ্ঞার ফলে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রে প্রবেশের পথ বন্ধ হবে। অন্যদিকে, যুক্তরাষ্ট্র কোনো একটি পদক্ষেপ নিলে ইউরোপ ও কানাডাও তাদের ফলো করে। সেটি হলে যারা নিষেধাজ্ঞায় পড়বেন, তাদের জন্য সেসব দেশে ঢোকার পথও বন্ধ হয়ে যেতে পারে। এ ছাড়া দেশে সম্মানহানি হবে। এজন্য এটি নিয়ে বেশি বেশি আলোচনা হচ্ছে।
সরকারের এক যুগ্মসচিব ঢাকা পোস্টকে বলেন, অনেক কর্মকর্তার সন্তান যুক্তরাষ্ট্রে পড়াশোনা করছেন। কেউ কেউ ওই দেশে স্থায়ী হতে চান। ভিসানীতি ঘোষণার পর তারাই সবচেয়ে বেশি চিন্তিত।
জনপ্রশাসনে যারা কাজ করেন তাদের মধ্যে কতজনের আমেরিকার ভিসা আছে বা যেতে চান অথবা তাদের ছেলে-মেয়েরা পড়ে অথবা বাড়িঘর আছে? খুব স্বল্প সংখ্যক মানুষ হতে পারে। নির্বাচনের কাজে যারা সংযুক্ত হবেন তারা যদি আইন অনুযায়ী কাজ করেন এবং সংবিধান মেনে চলেন, তাহলে তাদের আতঙ্কিত হওয়ার কোনো কারণ নেই সাবেক সচিব আবু আলম মো. শহিদ খান।
আইন ও সংবিধান মেনে চললে কারও আতঙ্কিত হওয়ার কোনো কারণ নেই বলে মনে করেন সাবেক সচিব আবু আলম মো. শহিদ খান। তিনি ঢাকা পোস্টকে বলেন, ‘জনপ্রশাসনে যারা কাজ করেন তাদের মধ্যে কতজনের আমেরিকার ভিসা আছে বা যেতে চান অথবা তাদের ছেলে-মেয়েরা পড়ে অথবা বাড়িঘর আছে? খুব স্বল্প সংখ্যক মানুষ হতে পারে। নির্বাচনের কাজে যারা সংযুক্ত হবেন তারা যদি আইন অনুযায়ী কাজ করেন এবং সংবিধান মেনে চলেন, তাহলে তাদের আতঙ্কিত হওয়ার কোনো কারণ নেই।’
উল্লেখ্য, গত ২২ সেপ্টেম্বর বাংলাদেশের গণতান্ত্রিক নির্বাচন প্রক্রিয়ায় বাধাদানকারী ব্যক্তিদের ওপর ভিসা নিষেধাজ্ঞা আরোপের বিষয়টি জানায় যুক্তরাষ্ট্রের স্টেট ডিপার্টমেন্ট। ওই দিন এক বিবৃতিতে মার্কিন পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের মুখপাত্র ম্যাথিউ মিলার জানান, স্টেট ডিপার্টমেন্ট আজ গণতান্ত্রিক নির্বাচন প্রক্রিয়া ক্ষুণ্ন করার জন্য দায়ী বা জড়িত থাকা বাংলাদেশি ব্যক্তিদের ওপর ভিসা বিধিনিষেধ আরোপ করার পদক্ষেপ নিচ্ছে। এর মধ্যে আইন প্রয়োগকারী সংস্থার সদস্য, ক্ষমতাসীন দল এবং রাজনৈতিক বিরোধী দলের সদস্যরা রয়েছেন।
Array