ইসলামিক ডেস্কঃ
উম্মুল মুমিনিন খাদিজা (রা.), যিনি সিরাতের আকাশে এক উজ্জ্বল নক্ষত্র। যিনি রাসুলের সঙ্গে দীর্ঘ ১৫ বছর কাটিয়েছেন। প্রিয় নবীর সন্তুষ্টির আশায় নিজের সব কিছু বিলিয়ে দিয়েছেন অকাতরে। রাসুলের দাওয়াতি কাজে অসামান্য অবদান রেখে ইতিহাসের পাতায় চিরভাস্বর হয়ে রয়েছেন।
ইসলামের প্রাথমিক দিনগুলোতে চতুর্মুখী বিপদের মোকাবেলা করে প্রিয় নবীর সহযোগিতায় নিজের সবটুকু বিলিয়ে দিয়েছেন। ছায়ার মতো সঙ্গী হয়ে তাঁর সাহস জুগিয়েছেন। মক্কার মানুষ যখন রাসুল (সা.)-এর কথা মানতে অস্বীকৃতি জানিয়েছে, তখন খাদিজা সবার আগে ঈমান এনেছেন। নবুয়ত নিয়ে মানুষ যখন মিথ্যাচার করছে, তখন খাদিজা (রা.) নবুয়তের সত্যায়ন করেছেন। মানুষ যখন রাসুল (সা.)-কে বিভিন্নভাবে বাধা দিচ্ছিল, তখন খাদিজা (রা.) প্রিয় স্বামীকে সম্পদ দিয়ে ভরসা জুগিয়েছেন।
নবীজি (সা.)-এর সেই কঠিন সময়ে শুধু সম্পদ দিয়ে সহযোগিতা করেননি; বরং উৎসাহ দিয়ে মনোবল বৃদ্ধি করেছেন। সর্বপ্রথম ওহি অবতীর্ণ হওয়ার পর হেরা গুহা থেকে নবীজি (সা.) ভীতসন্ত্রস্ত হয়ে ফেরার পর খাদিজা (রা.) ঐতিহাসিক পাঁচটি বাক্য দ্বারা রাসুল (সা.)-কে সমবেদনা জানিয়েছেন। সান্ত্বনার বাণী শুনিয়েছিলেন পরম মমতা দিয়ে।
আপনি আত্মীয়তার হক রক্ষা করেন;
নবুয়ত-প্রাপ্তির আগেই রাসুল (সা.)-এর মাঝে এই বৈশিষ্ট্য বিদ্যমান ছিল যে তিনি আত্মীয়-স্বজনের সঙ্গে সদ্ব্যবহার করতেন। আর খাদিজা (রা.) জানতেন, যাদের মাঝে এই গুণ আছে তাদের আল্লাহ তাআলা কখনো ধ্বংস করতে পারেন না। তাই তিনি রাসুল (সা.)-এর এই গুণ উচ্চারণ করে রাসুলকে শক্তভাবে সাহস যুগিয়েছেন।
আপনি দুর্বলদের দায়িত্ব গ্রহণ করেন;
প্রিয় নবী (সা.) ছোটবেলা থেকেই সমাজে যারা দুর্বল, অসহায়, আর বিপন্ন রয়েছে, তাদের প্রতি ছিলেন ভিন্ন রকম। তাদের সাহায্য-সহযোগিতা করা, তাদের বিভিন্ন দায়িত্ব গ্রহণ করার ব্যাপারে রাসুল (সা.) সোচ্চার ছিলেন। খাদিজা (রা.) রাসুলকে রাসুলের সেই মহান গুণের কথা স্মরণ করিয়ে দিলেন।
আপনি সত্য কথা বলেন;
খাদিজা (রা.) রাসুলুল্লাহ (সা.)-কে তাঁর সততা-আদর্শের কথা স্মরণ করিয়ে দিলেন যে আপনি জীবনে কারো সঙ্গে মিথ্যা কথা বলেননি। আপনি সত্যবাদী আল্লাহ আপনাকে কখনো ধ্বংস করতে পারেন না।
আপনি অতিথিপরায়ণ;
মেহমানদারি অতিথি প্রধানত এমন গুণ, যা মানুষকে মনুষ্যত্বের শ্রেষ্ঠ শিখরে নিয়ে যায়। বিশ্বনবীর অন্যতম বৈশিষ্ট্য ছিল, মেহমানকে আদর-সমাদরের সঙ্গে আপ্যায়ন করা। আরবদের মধ্যে অতিথিপরায়ণ হিসেবে তিনি ছিলেন সবার ঊর্ধ্বে। তাঁর দরবারে কোনো মেহমান এলে তিনি সমাদর ও মর্যাদার সঙ্গে আপ্যায়ন করতেন। তার সেবা-যত্নে বিন্দুমাত্র কুণ্ঠাবোধ করতেন না।
আপনি দুর্দশাগ্রস্তকে সাহায্য করেন;
সমাজে যারা বঞ্চিত, নিপীড়িত তাদের প্রতি ছিলেন রাসুল (সা.)-এর সজাগ দৃষ্টি। সত্যের পথে আগত লোকদের বিপদাপদে সাহায্য করে থাকেন। এসব গুণ ভালো মানুষ ব্যতীত অন্য কারো মাঝে থাকে না। সে জন্য খাদিজা (রা.) রাসুল (সা.)-কে সেদিকে ইঙ্গিত করলেন।
আর রাসুলুল্লাহ (সা.) খাদিজা (রা.)-এর ব্যাপারে বলেছেন, আলী ইবনে আবি তালিব (রা.) বলেন, রাসুলুল্লাহ (সা.)-কে আমি বলতে শুনেছি, খাদিজা বিনতে খুয়াইলিদ হলেন এই উম্মতের নারীদের মধ্যে শ্রেষ্ঠ। আর মারয়াম বিনতে ইমরান ছিলেন (তৎকালীন উম্মতের) নারীদের মধ্যে শ্রেষ্ঠ। (জামে তিরমিজি, হাদিস : ৩৮৭৭)
আজকালের বার্তা/ ইসলামিক
Array