সিরাজগঞ্জ প্রতিনিধিঃ
নিয়োগ বাণিজ্য, দুর্নীতি, স্বজনপ্রীতিসহ নানা অনিয়ম ও অব্যবস্থাপনার মধ্য দিয়ে চলছে সিরাজগঞ্জের কামারখন্দ উপজেলার কোনাবাড়ি ইসহাক উচ্চ বিদ্যালয়টির কার্যক্রম। সম্প্রতি এ ধরনের ১২টি বিষয় চিহ্নিত করে জেলা মাধ্যমিক শিক্ষা কর্মকর্তাসহ বিভিন্ন সপ্তরে লিখিত অভিযোগ করেছেন কয়েকজন অভিভাবক।
এদের মধ্যে স্থানীয় ইউনিয়ন পরিষদ সদস্য কোরবান আলীও রয়েছেন।
অভিযোগে উল্লেখ করা হয়েছে, কোনাবাড়ি ইসহাক উচ্চ বিদ্যালয়ে টানা চারবার সভাপতির দায়িত্বে থাকা হুমায়ুন কবির সোহেল প্রভাব বিস্তার করে ১৭ লাখ টাকার বিনিময়ে নিজের পছন্দের প্রার্থীকে প্রধান শিক্ষক নিয়োগ দিয়েছেন। ভূমিদাতাদের না জানিয়েই নিজের আত্মীয়দের যাতায়াতের সুবিধার জন্য বিদ্যালয়ের জায়গা ছেড়ে দিয়েছেন। গাছপালা বাইরে রেখেই নির্মাণ করেছেন বিদ্যালয়ের নিরাপত্তা দেয়াল। সম্প্রতি ওই বিদ্যালয়ের ৫টি শূন্য পদে লোকবল নিয়োগের জন্য বিজ্ঞপ্তি দেন সোহেল।
সেখানে নিরাপত্তা কর্মী পদে একই পরিবারের তিন সদস্যকে দিয়ে আবেদন করিয়েছেন। এ পাঁচটি পদে নিয়োগের জন্য মোটা অংকের অর্থ হাতিয়ে নেওয়ারও পায়তারা করছেন ম্যানেজিং কমিটির সভাপতি ও প্রধান শিক্ষক। এছাড়া রশিদ ছাড়া শিক্ষার্থীদের কাছ থেকে পরীক্ষার ফি, মাসিক বেতন ও সেশন ফি নিয়ে অর্থ নয়-ছয় করার অভিযোগও রয়েছে তাদের বিরুদ্ধে।
লিখিত অভিযোগের ভিত্তিতে সম্প্রতি সরেজমিনে গিয়ে দেখা যায়, স্কুলটিতে উত্তোলন করা জাতীয় পতাকাটি ছেঁড়া ও নোংরা। মাঠের মাঝখানে গরু চরানো হচ্ছে এবং জরাজীর্ণ শহীদ মিনারটির ঝাড়-জঙ্গলে ভরপুর। শিক্ষা প্রতিষ্ঠানটির পশ্চিম পাশে নির্মিত নতুন নিরাপত্তা দেয়ালটি করা হয়েছে অন্তত ১০ ফুট জায়গা ও গাছপালা বাইরে রেখে।
স্কুলের শিক্ষার্থীদের অভিযোগ, ফাইনাল পরীক্ষায় অ্যাসাইনমেন্ট জমা নিতে প্রতি জনের কাছ থেকে ৩০০ টাকা করে নেওয়া হলেও কোনো রশিদ দেয়া হয় না। ভর্তির সময় অন্যান্য বিদ্যালয় থেকে দ্বিগুণ ফি নেওয়ার অভিযোগও করে শিক্ষার্থীরা।
কোনাবাড়ি ইসহাক উচ্চ বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক আব্দুস সবুরকে এ সময় পাওয়া যায়নি। তবে স্কুলে সে সময় উপস্থিত ছিলেন ম্যানেজিং কমিটির সভাপতি হুমায়ুন কবির সোহেল। অভিযোগের বিষয়ে প্রশ্ন করা হলে তিনি বলেন, প্রধান শিক্ষক নিয়োগে কোনো প্রকার অর্থ লেনদেন হয়নি। পাশের কলেজে যাওয়ার জন্য রাস্তা ছেড়ে দিয়ে নিরাপত্তা দেয়াল নির্মাণ করা হয়েছে। ছেঁড়া পতাকা পরিবর্তন করার অঙ্গীকার করেন এবং শহীদ মিনার পুনর্নির্মাণ করা হবে বলে জানান।
নিরাপত্তা কর্মী পদে একই পরিবারের তিন সদস্যের আবেদন করা প্রসঙ্গে সোহেল বলেন, যোগ্যতা থাকলে সবাই আবেদন করতে পারে। এখানে কোনো বিধি নিষেধ নেই। পাঁচটি শূন্য পদে নিয়োগের পেতে প্রায় ৫০ জনের মতো আবেদন করেছেন। নিয়োগপ্রাপ্ত প্রার্থীর কাছ থেকে বিদ্যালয়ের উন্নয়ন কাজের জন্য কিছু নগদ অর্থ নেওয়ার পরিকল্পনার রয়েছে বলেও স্বীকার করেন তিনি।
১২টি বিষয় চিহ্নিত করে অভিভাবকরা জেলা মাধ্যমিক শিক্ষা কর্মকর্তাসহ বিভিন্ন সপ্তরে যে লিখিত অভিযোগ করেছেন, তার পরিপ্রেক্ষিতে তদন্ত করেছেন কামারখন্দ উপজেলা চেয়ারম্যান এস.এম শহীদুল্লাহ সবুজ। তিনি বলেন, অভিযোগের কপি পেয়ে ঘটনাস্থল পরিদর্শন করেছি। যে কয়েকটি পয়েন্টে অভিযোগ করা হয়েছে তার মধ্যে কমিটির বিষয়টি বোর্ডের এখতিয়ার। কিছু অর্থনৈতিক বিষয়ে অভিযোগ করা হয়েছে সেটিও বোর্ডের তদন্তের বিষয়। স্কুলের জায়গা ও গাছপালা ছেড়ে দিয়ে নিরাপত্তা দেয়াল নির্মাণ হওয়ার বিষয়টি আমি দেখে গেলাম। পরবর্তীতে এটার যৌক্তিকতা নিয়ে সিদ্ধান্ত দেওয়া হবে। আর নিয়োগ প্রক্রিয়া আইন কানুনের মধ্য দিয়েই হওয়া উচিত।
গত ২৭ সেপ্টেম্বর এ সংক্রান্ত অভিযোগ পত্রটি সিরাজগঞ্জ জেলা মাধ্যমিক শিক্ষা অফিসে রিসিভ করা হলেও অফিস প্রধান জেলা শিক্ষা কর্মকর্তা মো. শহীদুল্লাহ বিষয়টি এখনও (১ অক্টোবর) অবগত নন বলে জানান। তবে অভিযোগটি হাতে পেলে তদন্ত কমিটি গঠন করবেন বলে আশ্বস্ত করেন তিনি।
আজকালের বার্তা/ এফ.জে
Array