নিজস্ব প্রতিবেদক: দেশের চাহিদা ও প্রধানমন্ত্রীর সদিচ্ছা থাকা সত্বেও শিক্ষামন্ত্রীর বিশেষ নজরদারির অভাবে সিন্ডিকেটের রোষানলে কারিগরি শিক্ষা। প্রায় ৩-৫ বছর ধরে কারিগরি শিক্ষা অধিদপ্তর নিয়ন্ত্রণ করছে একটি শক্তিশালী সিন্ডিকেট। কারিগরি শিক্ষকদের ন্যায্য সেবা পেতে অধিদপ্তরে এই সিন্ডিকেটকে আর্থিক সুবিধা না দিলে সেবা মিলছে না। এই সিন্ডিকেটের বিরুদ্ধে বিভিন্ন সময়ে কারিগরি শিক্ষা অধিদপ্তরের সামনে মানববন্ধন করতে দেখা গেছে কারিগরি শিক্ষকদের।
বর্তমান সময়ে প্রযুক্তির সান্নিধ্যে থেকে বাস্তবধর্মী ও হাতেকলমে শিক্ষাই হলো কারিগরি শিক্ষা। যে শিক্ষার মাধ্যমে শিক্ষার্থীকে তথ্যপ্রযুক্তি, শিল্প, কৃষি ও কলকারখানার যন্ত্রপাতি ব্যবহারের জন্য আধুনিক ও বিজ্ঞান সম্মতভাবে প্রশিক্ষণ দেয়া হয়। অর্থাৎ আমাদের শ্রমবাজারকে আধুনিকায়নের মাধ্যমে দক্ষ শ্রমিকে রূপান্তর ও দেশের শিল্পায়নের পথে কারিগরি শিক্ষা গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে।
বর্তমান সময়ে “দাদা” সিন্ডিকেট নিয়ন্ত্রণ করছে দেশের এই গুরুত্বপূর্ণ শিক্ষা ব্যবস্থা।
অনুসন্ধানে জানা যায়, শিক্ষা উপমন্ত্রীর ব্যাক্তিগত কর্মকর্তা অমিত কুমার এবং কারিগরি শিক্ষা অধিদপ্তরের সংযুক্ত কর্মকর্তা শিশির ধর, এমপিও কর্মকর্তা বিমল মিশ্রসহ গুটিকয়েকজনের হাতে জিম্মি কারিগরি শিক্ষা।
বদলী, পদোন্নতি, এমপিও বানিজ্য এমনকি অধিদপ্তরের মহাপরিচালককেও জিম্মি করে রাখে এই সিন্ডিকেট।
প্রায় গত ৩-৫বছর ধরে অদৃশ্য ক্ষমতায় টিকে থাকা এই সিন্ডিকেট ভাঙতে না পারার কারনে ডুবতে বসছে কারিগরি শিক্ষা।
এসএসসি-২০২৩ সালের ফলাফল প্রকাশ অনুষ্ঠানে কারিগরি শিক্ষার প্রসারে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা কারিগরি শিক্ষার গুরুত্ব তুলে ধরে বলেন, “বর্তমান ৪র্থ শিল্প বিপ্লবের যুগে আমাদের দেশে কারিগরি শিক্ষার গুরুত্ব এতটাই বেশি যে শতভাগ কর্মসংস্থাই তার প্রমাণ। আমাদের প্রয়োজন দক্ষ কারিগর ও দক্ষ অপারেটর সবাইকে বিএ, এমএ পাস করার দরকার নেই। কারণ এসব সার্টিফিকেটধারীকে চাকরি দেয়ার সুযোগ আমাদের এই দেশে নেই এবং বিষয়ভিত্তিক প্রশিক্ষণ প্রাপ্ত না হলে বিদেশেও চাকরির সুযোগ নেই বললেই চলে”।
প্রধানমন্ত্রী বলেন, “বর্তমান বিশ্বে চাকরির বাজারে উৎপাদনশীল খাতই সবচেয়ে বেশি কর্মসংস্থানের সুযোগ সৃষ্টি করে থাকে। বর্তমানে উন্নত বাংলাদেশ বিনির্মাণে শিল্পায়নের ফলে নতুন নতুন শিল্পাঞ্চল গড়ে উঠছে আর তাতে বিনিয়োগ করছে পৃথিবীর তাবত বড় বড় পণ্য ও সেবা উৎপাদনকারী প্রতিষ্ঠান। এসব কারণেই আমাদের দেশে বর্তমানে কারিগরি শিক্ষার গুরুত্ব প্রতিনিয়ত বৃদ্ধি পাচ্ছে”।
সাধারণ শিক্ষায় এমপিও পেতে শিক্ষকদের ১/২মাস অপেক্ষা করতে হয়। কিন্তু কারিগরি শিক্ষকরা আবেদনের ৩/৪বছরেও এমপিও পান না। বদলী,বেতনস্কেল বৃদ্ধিসহ কয়েক ডজন জটিলতায় জর্জরিত কারিগরি শিক্ষা অধিদপ্তর।
এবিষয়ে কারিগরি শিক্ষা অধিদপ্তরে সহকারী পরিচালক বিমল কুমার মিশ্র বলেন, “লোকবল না থাকার কারনে অধিদপ্তরে এসব জটিলতার সৃষ্টি হয়েছে। গত ২/৩ বছর ধরেই লোকবল নেই। ঠিক কবে এই সমস্যা সমাধান হবে আমরাও জানি না”।
প্রধানমন্ত্রীর সদিচ্ছা থাকা সত্বেও দ্বায়িত্বশীলদের অনিহার কারনে অবহেলিত দেশের গুরুত্বপূর্ণ এই সেক্টর। গত একদশকে শিক্ষা প্রতিষ্ঠান বাড়লেও কারিগরি শিক্ষকদের সুযোগ-সুবিধা তেমন বৃদ্ধি পায় নি।
কারিগরি শিক্ষার অগ্রসরে সবচেয়ে বেশি ভূমিকা পালন করছে বেসরকারি প্রতিষ্ঠানগুলো। বেসরকারি খাতের উন্নয়ন ছাড়া কারিগরি শিক্ষা এগিয়ে নেওয়া সম্ভব নয়।
গত একযুগ ধরে যে সকল দ্বায়িত্বশীলরা কারিগরি শিক্ষার হাল ধরেছেন তারা সবসময় সরকারি প্রতিষ্ঠানগুলোর প্রতি নজর দিলেও বেসরকারি প্রতিষ্ঠানগুলোর দিকে তেমন কোন নজর দেন নি।
কারিগরি শিক্ষক নেতাদের দাবি, বিভিন্ন সুত্রে একাধিক বার শিক্ষামন্ত্রীকে এবিষয়ে অবগত করেও কোন প্রতিকার মেলে নি। সরকারের এই শেষ মুহূর্তে হলেও কারিগরি শিক্ষা অধিদপ্তরে দক্ষ মানবসম্পদ তৈরির মানসিকতা সম্পন্ন দ্বায়িত্বশীল মহাপরিচালক দিয়ে কারিগরি খাতকে এগিয়ে নিয়ে বঙ্গবন্ধুর স্বপ্নের সোনার বাংলা তৈরীতে অগ্রগামী হওয়া।