মোঃজেহান উদ্দিন মৃধা, খুলনা বিশ্ববিদ্যালয়: পড়ন্ত বিকেল, খুলনা বিশ্ববিদ্যালয়ের ক্যাফেটেরিয়ার সামনে দিয়ে শিক্ষার্থী ভর্তি সব বাস চলে যাচ্ছে নিজ নিজ গন্তব্যে। যারা বাসে যাবেনা তাদের কেউবা পায়ে হেঁটে, কেউবা নিজ বাহনে চলমান। এ সময় দেখা গেল বিশ্ববিদ্যালয়ের শহিদ মিনার প্রাঙ্গণে দাঁড়িয়ে একজন হাত নাড়িয়ে নাড়িয়ে কীসব বলছে, পাশে থাকা বাকিরা খুব মনোযোগ দিয়ে শুনছে। কিছুক্ষণ পর সে বসে যায়, আরেকজন দাঁড়িয়ে হাত নাড়িয়ে, মাথা দুলিয়ে কথা বলতে থাকে। কাছে গিয়ে ওরা কারা জানতে চাইলে বলে, ওরা নৈয়ায়িক।
নৈয়ায়িক হল খুলনা বিশ্ববিদ্যালয়ের একমাত্র বিতর্ক বিষয়ক সংগঠন। ২০০১ সালের জুলাই মাসে গুটিকয়েক স্বপ্নবাজ শিক্ষার্থী নিয়ে শুরু হওয়া নৈয়ায়িক আজ এক বিড়াট সংঘবদ্ধ পরিবার।
নৈয়ায়িক এর শুরুটা হয়েছিলো কিছুটা ভিন্নভাবে। এর প্রতিষ্ঠাকালীন সভাপতি, বর্তমানে বাংলাদেশ সরকারের কৃষি মন্ত্রণালয়ের তথ্য কর্মকর্তা হিসেবে নিয়োজিত মোহাম্মদ জাকির হাসনাৎ এর ভাষ্যমতে, প্রতিষ্ঠার ১০ বছর পর্যন্ত খুলনা বিশ্ববিদ্যালয়ে কোনো বিতর্ক বিষয়ক সংগঠন ছিলোনা। তিনি ২০০১ সালে জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ের একটি সাংস্কৃতিক প্রতিযোগিতায় অংশগ্রহণ করে ফেরার সময় বিশ্ববিদ্যালয়ে একটি বিতর্ক বিষয়ক সংগঠনের প্রচন্ড রকমের প্রয়োজনীয়তা অনুভব করেন। এরপর তিনি ও তাঁর কয়েকজন সহপাঠী মিলে আদা জল খেয়ে নেমে পড়েন। ফলস্বরূপ ২০০১ সালের ১ জুলাই আত্মপ্রকাশ ঘটে নৈয়ায়িকের।
নৈয়ায়িকের কাজ সম্পর্কে এর বর্তমান সভাপতি ও বিশ্ববিদ্যালয়ের গণিত বিভাগের শিক্ষার্থী অর্পা আফরিনের কাছে জানতে চাইলে তিনি বলেন, এটি একটি বিশ্ববিদ্যালয় কেন্দ্রীক বিতর্ক চর্চার সংগঠন। বাংলা ও ইংরেজি উভয় ভাষায় বিভিন্ন প্রকারের বিতর্ক চর্চা করা হয় এখানে। সেই জন্মলগ্ন থেকে প্রতি সপ্তাহে অন্তত একদিন করে হলেও এর সদস্যরা শহিদ মিনার প্রাঙ্গণে উপস্থিত হয়ে যুক্তির ঝাঁপি খুলে বসে।
তিনি আরো বলেন, বিতর্ক চর্চায় নৈয়ায়িকের একমাত্র উদ্দেশ্য নয়। নৈয়ায়িক চেষ্টা করে চিন্তায় ও মননশীলতায় এর সদস্যদের পরিপূর্ণ একজন মানুষ হিসেবে তৈরি করতে। ব্যাক্তিগত ও কর্মক্ষেত্রে যাতে একজন নৈয়ায়িক নিজেকে আলাদাভাবে তুলে ধরতে পারে সেভাবেই তাকে তৈরি করা হয়।
বিতর্কের মাঠে নৈয়ায়িকের সাফল্যগাঁথা এখন দেশের বিভিন্ন কোণায় ছড়িয়ে পড়েছে।
বিতর্কের মাঠে নৈয়ায়িকের সাফল্যগাঁথা এখন দেশের বিভিন্ন কোণায় ছড়িয়ে পড়েছে। এর মধ্যে ২০১৭ সালে কুয়েট আয়োজিত আন্তঃবিশ্ববিদ্যালয় বিতর্ক প্রতিযোগিতায় চ্যাম্পিয়ন, এনডিএফ কর্তৃক আয়োজিত ৯ম জাতীয় বিতর্ক উৎসবে সেরা সংগঠন, আইইঊবি অ্যসেনশন ২০১৮ তে ট্যাব রাউন্ডে চ্যাম্পিয়ন, রুয়েট ন্যাশনালস এ কোয়ার্টার ফাইনাল, আমেরিকান কর্নার ইন্টার ইউনিভার্সিটি বিতর্ক প্রতিযোগিতায় চ্যাম্পিয়ন, কাঠমুন্ডু ওয়ার্ল্ড ডিবেট চ্যাম্পিয়নশিপে কোয়ার্টার ফাইনালিস্ট হওয়ার মতো গৌরব অর্জন করে।শুধু বিতর্কের মাঠই নয়, দেশে বড় বড় পর্যায়ের গুরুত্বপূর্ণ পদ দখল করা নৈয়ায়িকের সংখ্যা হাতে গোনার বাইরে।
এছাড়াও বিভিন্ন জায়গায় বিতর্ক প্রতিযোগিতায় অংশগ্রহণ করা ছাড়াও, নৈয়ায়িক নিজেরাও প্রতি বছর ৪ থেকে ৫ টি প্রতিযোগিতার আয়োজন করে থাকে। করোনাকালিন প্রভাব নৈয়ায়িককে এনে দিয়েছে এক নতুন মাধ্যম। এখন অনলাইনেও নৈয়ায়িকের কাজ বেশ সমৃদ্ধ। ভবিষ্যতে নৈয়ায়িককে আরো এগিয়ে নেওয়ার প্রত্যাশা এর প্রত্যেক সদস্যের।
Array