• আজকের পত্রিকা
  • ই-পেপার
  • আর্কাইভ
  • কনভার্টার
  • অ্যাপস
  • ‘আমি প্রধানমন্ত্রীর কাছে আমার ছেলে হত্যার বিচার চাই’ 

     ajkalerbarta 
    18th May 2023 9:55 am  |  অনলাইন সংস্করণ

    সন্তানকে হারিয়ে পাগল প্রায় বৃদ্ধা মা নুরজাহান বেগম (৬৫)। আশপাশের লোক দেখলেই ভয়ে ভাঙা ঘরে ঢুকে দরজা বন্ধ করে দেন। যখন কেউ থাকে না তখন দুহাত তুলে সৃষ্টিকর্তার কাছে সন্তান হত্যার বিচার চেয়ে কাঁদতে থাকেন। এদিকে তাকে জিম্মি করে তার ছেলে হত্যার ঘটনায় মিথ্যে অভিযুক্তদের নামে মামলা করিয়ে নিয়েছেন প্রতিপক্ষরা। যার ফলে ছেলে হত্যার বিচার নিয়েও শঙ্কায় পড়েছেন তিনি। তাই এখন নিরুপায় হয়ে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার কাছে বিচারের দাবি জানিয়েছেন এই বৃদ্ধা।

    বৃদ্ধা নুরজাহান বেগম উপজেলার কাকিনা ইউনিয়নের হরবানিনগর গ্রামের মৃত মতিয়ার রহমানের স্ত্রী। গত ২৩ এপ্রিল লালমনিরহাটের কালীগঞ্জ উপজেলার কাকিনা ইউনিয়নের হরবানিনগর গ্রামে বাঁশকাটাকে কেন্দ্র করে বৃদ্ধার ছেলে আব্দুর রাজ্জাকের উপর হামলা হয়। পরে টানা ৪ দিন রংপুর মেডিকেল কলেজে চিকিৎসাধীন থাকা অবস্থায় তিনি মারা যান। ওই ঘটনায় রাজ্জাক মারা গেলেও বেশয়কজন আহত হয়ে হাসপাতালে ভর্তি হয়ে চিকিৎসা নিচ্ছেন।

    রোববার (১৭ মে) সকালে বৃদ্ধা নুরজাহান বেগমের বাড়িতে গেলে অঝোরে কাঁদতে থাকেন তিনি। কাঁদতে কাঁদতে বলেন, আমার ছেলের যতক্ষণ মৃত্যু না হয় ততক্ষণ তারা মাথায় আঘাত করেছেন। হত্যাকারীদের পা ধরে জীবন ভিক্ষা চাইলেও তারা আঘাত করতে ছাড়েনি। এ হত্যার বিচার চাই। সন্তান হারার বেদনা নিয়ে এই পৃথিবীতে থাকতে চাই না।

    ওই দিন বৃদ্ধাকে জিম্মি করে থানায় নিয়ে টিপসই নিয়ে হত্যা মামলায় প্রতিপক্ষকে ফাঁসানোর অভিযোগ উঠেছে দালাল চক্রের বিরুদ্ধে। হত্যা মামলায় মিথ্যে অভিযুক্তদের নাম কেটে নিতে বিভিন্ন দপ্তরে ঘুরছেন বাদী বৃদ্ধা নুরজাহান বেগম।

    পুলিশ ও স্থানীয়রা জানান, পলিথিনের ছাউনি দেওয়া নড়বড়ে একটি ছায়লা ঝুপড়ি ঘরে বসবাস করেন বৃদ্ধা নুরজাহান বেগম। নড়বড়ে সেই ঘরের উপর প্রতিবেশী মৃত মজিবর রহমানের ছেলে মজনু মিয়ার একটি বাঁশ হেলে পড়ে। বাঁশটি পড়ে যেকোনো সময় বৃদ্ধা নুরজাহানের ক্ষতি করতে পারে। বাঁশ মালিককে একাধিকবার কেটে অপসরণ করতে বললেও কেটে নেয়নি। তাই বাধ্য হয়ে গত ২৩ এপ্রিল বৃদ্ধার ছেলে আব্দুর রাজ্জাক বাঁশটির হেলে পড়া অংশ কেটে ফেলে।

    খবর পেয়ে ওই দিন বিকেলে বাঁশ মালিক মজনু মিয়া ও তার পুরো পরিবার অতর্কিত হামলা চালিয়ে বৃদ্ধা নুরজাহানের ছেলে রাজ্জাক, ইব্রাহীম, নাতনী ও ছেলের বউকে রক্তাক্ত জখম করে। পরে স্থানীয়রা তাদের উদ্ধার করে প্রথমে কালীগঞ্জ হাসপাতাল ও পরে রংপুর মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে ভর্তি করে। সেখানে চিকিৎসাধীন অবস্থায় ৪ দিন পর মারা যান আব্দুর রাজ্জাক।

    এদিকে সবাই হাসপাতালে চিকিৎসা নিয়ে ব্যস্ত। ২৬ এপ্রিল একটি দালাল চক্রের তিন সদস্য রবি, মোখলেছুর ও পুলিশের দালাল শাহিন বৃদ্ধা নুরজাহানকে জোর করে গাড়িতে তুলে নিয়ে যায়। এরপর একটি কাগজে টিপ সই নিয়ে ২০ জনের বিরুদ্ধে কালীগঞ্জ থানায় একটি মামলা দায়ের করেন।

    মামলার কয়েকদিন পরে বৃদ্ধা নুরজাহান জানতে পারেন এ মামলায় ২০ জনকে আসামি করা হয়েছে। যার ৭ জনকে বৃদ্ধা চেনেন না বা জানেন না। খবর পেয়ে এ ৭ জনের নাম মামলা থেকে বাদ দিতে পুলিশ সুপারসহ বিভিন্ন দপ্তরে নিস্ফল ছুটেছেন তিনি। কিন্তু কোনো প্রতিকার মেলেনি।

    এ দিকে হামলার বিষয়ে কিছু না জেনেও হত্যা মামলার আসামি হয়ে অহেতুক বাড়ি ছাড়া ইশোরকোল গ্রামের ৭টি পরিবার। তাদের একজন মেছের আলীর ছেলে মোস্তাফিজুর রহমান বলেন, মৃত রাজ্জাকের মামাত ভাই রবিউল ইসলামদের সঙ্গে মসজিদের কমিটি নিয়ে বিরোধ চলে আসছে। রবিউলদের ছুরির আঘাতে আমার ভাতিজা এক মাস ধরে হাসপাতালে চিকিৎসাধীন রয়েছে। কালীগঞ্জ থানার সেই মামলার জেরে আমাদের গ্রামের ৭ জনকে হত্যা মামলায় জড়িয়েছে। আমাদের মামলার যারা সাক্ষী তাদেরকেও এ হত্যা মামলায় ফাঁসিয়েছে। মূলত হয়রানি করতে তারা এমনটা করেছে।

    মামলার বাদী বৃদ্ধা নুরজাহান বলেন, সবাই রংপুরে চিকিৎসা নিয়ে ব্যস্ত থাকায় বাড়িতে আমি একা ছিলাম। এ সময় আমার ভাতিজা রবি, মোখলেছুর ও পুলিশের দালাল শাহিন এসে জোর করে আমাকে গাড়িতে তুলে থানায় নিয়ে যায়। কাগজে টিপ সই নিয়ে বাড়িতে পাঠিয়ে দেয়। পরে জানতে পারি ইশোরকোল গ্রামের নির্দোষ ৭জনকে এ মামলায় আসামি করা হয়েছে। তাই এই ৭ জনকে মামলার হয়রানি থেকে বাঁচাতে আমি নিজেও এখন বিভিন্ন দপ্তরে ঘুরে হয়রান হচ্ছি।

    তিনি আরও বলেন, ভাতিজারা তাদের নিজেদের প্রতিপক্ষকে ফাঁসাতে শাহীন ওরফে টেনশন শাহীন নামে এক দালালকে দিয়ে এ মামলাটি করিয়েছে।

    ছেলের হত্যাকারীদের দৃষ্টান্তমূলক শাস্তি দাবি করে এ মামলায় অহেতুক দেওয়া ইশোরকোল গ্রামের ৭ জনের নাম বাদ দিতে চেয়ারম্যানের বাড়ি বাড়ি গিয়েও কোনো কাজ হয়নি বলে জানান বৃদ্ধা নুরজাহান।

    তবে থানার বদলি জনিত ওসি এ টি এম গোলাম রসূল কয়েকদিন আগে ওই বৃদ্ধার বাড়িতে গিয়ে নির্দোষ ৭ জন আসামিকে ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষের সঙ্গে কথা বলে তাদের নাম বাতিল করার আশ্বাস দিয়েছেন।

    মৃত রাজ্জাকের ভাই ইব্রাহীম বলেন, মজনু মিয়ার পুরো পরিবার পিটিয়ে আমার ভাইকে মেরে ফেলেছে। আমরা হাসপাতালে থাকায় মাকে জিম্মি করে মামাত ভাইরা তাদের প্রতিপক্ষদের এ মামলায় ফাঁসিয়েছে। আমাদের বাড়ি থেকে ইশোরকোল গ্রামের দূরত্ব প্রায় ১২/১৪ কিলোমিটার।

    তবে দালাল চক্রের হোতা রবিউল ইসলাম রবির ফোনে কল দিলে তার স্ত্রী নিলুফা ইয়াসমিন বলেন, মসজিদের কমিটি নিয়ে হামলার মামলায় আমরা ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছি। আমাদের প্রতিবেশী মেছের আলীর ছেলে ভুট্টুর মামলায় আমার ভাসুরের সেনাবাহিনীর চাকরির সমস্যা হয়েছিল। এই কারণে মামলা দায়ের করেছেন কিনা এমন প্রশ্ন করতেই তিনি ফোন কেটে দেন।

    এদিকে বিষয়টি জানাজানি হওয়ার পর গত ৮ মে বদলিজনিত ওসি এ টি এম গোলাম রসুল ঘটনাস্থল পরিদর্শন করেন। সেখানে নির্দোষ যদি কোনো আসামি থাকে তাদের তদন্ত করে নাম বাতিল করা হবে। কিন্তু তার কিছুদিন পরেই তার বাতিল হয়ে যায়। ফলে নতুন করে চিন্তায় পড়েছেন ওই পরিবার।

    কালীগঞ্জ থানা পুলিশের ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি তদন্ত) হাবিবুর রহমান বলেন, প্রথম দিকে বিষয়টি জানা ছিল না। পরে জানতে পেয়ে ঘটনাস্থল তদন্ত করেছি। বাদী নিজেও এই ৭ জনকে বাদ দিতে বলেছেন। যেন অহেতুক কেউ হয়রানির স্বীকার না হয় সে দিকে খেয়াল রেখে ব্যবস্থা নেওয়া হচ্ছে। এ বিষয়ে এসপি স্যার দিকনির্দেশনা দিচ্ছেন বলেও তিনি জানান।

    Array
    We use all content from others website just for demo purpose. We suggest to remove all content after building your demo website. And Dont copy our content without our permission.
    আমাদের ইউটিউব চ্যানেলে সাবস্ক্রাইব করুন
    এই বিভাগের আরও খবর
     
    Jugantor Logo
    ফজর ৫:০৫
    জোহর ১১:৪৬
    আসর ৪:০৮
    মাগরিব ৫:১১
    ইশা ৬:২৬
    সূর্যাস্ত: ৫:১১ সূর্যোদয় : ৬:২১

    আর্কাইভ