সাতক্ষীরায় বিভিন্ন জাতের আম চাষ হয়ে থাকে। এর মধ্যে হিমসাগর, ল্যাংড়া, গোবিন্দভোগ, আম্রপালি, মল্লিকা, সিঁদুররাঙা, ফজলি, কাঁচামিঠা, বোম্বাই, লতাবোম্বাই উল্লেখযোগ্য।
জানা গেছে, সাতক্ষীরার আমের সুনাম রয়েছে ইউরোপ পর্যন্ত। প্রতিবছর সাতক্ষীরা থেকে উল্লেখযোগ্য পরিমাণ আম ইউরোপে রপ্তানি করা হয়। নবমবারের মতো চলতি বছরও ইতালি, ফ্রান্স, ডেনমার্ক, জার্মানি, ইংল্যান্ডে রপ্তানি হবে সাতক্ষীরার আম।
জেলা কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের তথ্যমতে, এ বছর সদর উপজেলায় এক হাজার ২৩৫ হেক্টর, কলারোয়ায় ৬৫৫ হেক্টর, তালায় ৭১৫ হেক্টর, দেবহাটায় ৩৭০ হেক্টর, কালিগঞ্জে ৮৩৫ হেক্টর, আশাশুনিতে ১৪৫ হেক্টর ও শ্যামনগরের ১৬০ হেক্টর জমিতে আম চাষ হয়েছে। সবমিলিয়ে চার হাজার ১১৫ হেক্টর জমিতে আমের আবাদ হয়েছে। জেলায় সরকারি তালিকাভুক্ত পাঁচ হাজার ২৯৯টি আমবাগান ও ১৩ হাজার ১০০ জন চাষি রয়েছেন। উৎপাদনের লক্ষ্যমাত্রা ৪৫ হাজার ৫০০ মেট্রিক টন। যে ফলন হয়েছে, তাতে আবহাওয়া অনুকূলে থাকলে লক্ষ্যমাত্রা ছাড়িয়ে যাবে।
কৃষি বিভাগের তথ্যমতে, চলতি মৌসুমে জেলার চার হাজার ১১৫ হেক্টর জমিতে আম চাষ হয়েছে। যেখানে উৎপাদনের লক্ষ্যমাত্রা নির্ধারণ করা হয়েছে ৪৫ হাজার ৫০০ মেট্রিক টন। কোনো প্রাকৃতিক দুর্যোগের কবলে না পড়লে দেশের চাহিদা মিটিয়ে বিদেশে রপ্তানি করা হবে সাতক্ষীরার আম। এতে সবমিলিয়ে বিক্রি হবে প্রায় ২২৫ কোটি টাকার আম।
সাতক্ষীরার তালা সদরের আমচাষী আব্দুল কাদের জানান, তার ৫ বিঘার হিমসাগর আমের বাগান রয়েছে। গত কয়েক বছর প্রাকৃতিক দুর্যোগসহ আশানুরূপ দাম না পাওয়ার কারণে বেশ ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছেন। তবে চলতি বছর আবহাওয়া ভালো থাকায় আর আমের ফলন তুলনামূলক অনেক বেশি হওয়ায় অন্যান্য বছরের তুলনায় বেশি লাভের আশা করছেন।
পাটকেলঘাটার জুসখোলা এলাকার আমচাষ মজিদ মাহমুদ জানান, গত কয়েক বছর ফলন ভালো হলেও প্রাকৃতিক দুর্যোগের কবলে পড়ে ব্যবসায় লোকসান হয়েছে। তবে চলতি মৌসুমে আমের বাম্পার ফলন হয়েছে। বাজার মূল্য সঠিক পেলে এবার তুলনামূলক অনেক লাভ হবে। গত বছর গড়ে হিমসাগর আমের কেজি ৫০ টাকা বিক্রি হয়েছিল। এ বছর আমের আকৃতি অনেক বড় হয়েছে, সেক্ষেত্রে আমের দাম বৃদ্ধি পাবে।
সাতক্ষীরা শহরের ব্যবসায়ী ঈদ্রিস আলী জানান, সাতক্ষীরা জেলা প্রশাসনের পক্ষ থেকে আম বাজারজাতকরণের নির্দিষ্ট সময়সীমা ও তারিখ নির্ধারণ করা হয়েছে। অনেক অসাধু ব্যবসায়ী অপরিপক্ব আম কেমিক্যাল দিয়ে বাজারজাত করার চেষ্টা করছেন। প্রশাসনের নজরদারিতে কিছু ধরাও পড়ছে। প্রশাসন তৎপর থেকে অপরিপক্ক আম বাজারজাত করা রোধ করতে না পারলে প্রকৃত আম চাষিরা ক্ষতিগ্রস্ত হবে।
তিনি আরও জানান, অসাধু ব্যবসায়ীরা বেশি লাভের আশায় অপরিপক্ব আম কেমিক্যাল দিয়ে পাকিয়ে ঢাকাসহ দেশের বিভিন্ন অঞ্চলে বিক্রির চেষ্টা করছেন। অসাধু এসব ব্যবসায়ীদের কারণে প্রকৃত আমচাষিদের সুনাম নষ্ট হয়। যেহেতু সাতক্ষীরার আমের সুনাম সুদূর ইউরোপ পর্যন্ত রয়েছে, সেক্ষেত্রে সুনাম ধরে রাখতে প্রশাসনসহ সংশ্লিষ্ট বিভাগকে তৎপর থাকতে হবে। তাছাড়া সর্বক্ষণিক আমের বাজার মনিটরিং ব্যবস্থা করতে হবে।
সাতক্ষীরা জেলা কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের উপ-পরিচালক কৃষিবিদ মো. সাইফুল ইসলাম বলেন, প্রাকৃতিক দুর্যোগের কবলে না পড়ায় এবার উল্লেখযোগ্য পরিমাণে আমের মুকুল হয়েছিল। আমের গুটি ধরেছিল অনেক। সে তুলনায় কম পরিমাণে আমের গুটি ঝরেছে। এজন্য উল্লেখযোগ্য পরিমাণে আম উৎপাদন হবে বলে আশাবাদী।
তিনি জানান, যেহেতু গত কয়েক বছরের তুলনায় আমের ফলন ভালো হয়েছে, সেক্ষেত্রে লক্ষ্যমাত্রা পূরণ হয়ে উল্লেখযোগ্য পরিমাণে আম উৎপাদন হবে। জেলায় সরকারি তালিকাভুক্ত পাঁচ হাজার ২৯৯টি আমবাগান ও ১৩ হাজার ১০০ জন চাষি রয়েছেন। ৫০ টাকা কেজি দরে দাম ধরলে ২২৫ কোটি টাকার আম বিক্রি হবে। তাছাড়া এ বছরও ইউরোপসহ বিভিন্ন দেশে আম রপ্তানি করা হবে।
অনুকূল আবহাওয়া ও ফলন ভালো হওয়ায় সাতক্ষীরায় চলতি মৌসুমে ২২৫ কোটি টাকার আম বিক্রির কথা জানিয়েছে কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তর। গত কয়েক বছর প্রাকৃতিক দুর্যোগের কবলে পড়ে আমচাষিদের যথেষ্ট পরিমাণে লোকসান গুনতে হয়েছে। তবে চলতি মৌসুমে কোনো ধরনের ঝড়-বৃষ্টি না হওয়ায় আমের ফলন ভালো হয়েছে। এর ফলে গত কয়েকবারের লোকসান কাটিয়ে লাভের মুখ দেখার আশা করছেন আমচাষিরা।
এদিকে, সাতক্ষীরা জেলা প্রশাসনের পক্ষ থেকে বিভিন্ন জাতের আমের বাজারজাতকরণের নির্দিষ্ট সময়সীমা নির্ধারণ করা হয়েছে। নির্দেশনা অনুযায়ী আগামী ১২ মে থেকে গোপালভোগ, গোবিন্দভোগ, বোম্বাই ও গোপালখাসসহ অন্যান্য স্থানীয় আম পাড়তে নির্দেশ দেওয়া হয়েছে। তাছাড়া ২৫ মে থেকে হিমসাগর, ১ জুন ল্যাংড়া ও ১৫ জুন থেকে আম্রপালি পাড়ার নির্দেশ দেওয়া হয়েছে।
Array