বরিশাল প্রতিনিধি : ৫৯ কোটি টাকার বিল বাকি থাকায় বরিশাল সিটি করপোরেশনের (বিসিসি) আওতাধীন ১৫টি সড়কের বিদ্যুৎ সংযোগ বিচ্ছিন্ন করে দিয়েছে ওয়েস্টজোন পাওয়ার ডিস্ট্রিবিউশন কোম্পানি (ওজোপাডিকো)। এতে ওসব সড়কের সঙ্গে থাকা অলিগলিও অন্ধকার আচ্ছন্ন হয়ে নগরীতে ভুতুড়ে পরিবেশ বিরাজ করছে। মঙ্গলবার (২০ সেপ্টেম্বর) রাতে এসব সড়কের বিদ্যুৎ সংযোগ বিচ্ছিন্ন করা হয়।
সংশ্লিষ্ট সূত্র জানিয়েছে, বিসিসির কাছে বছরের পর বছর কোটি কোটি টাকা বিদ্যুৎ বিল বকেয়া রয়েছে। বিষয়টি প্রকট হয়ে দাঁড়ায় সিটি করপোরেশনের তৃতীয় পরিষদের সময়ে। সে সময় বকেয়া ছিল ১৩ কোটি টাকা। পরে তা ২২ কোটি টাকায় রূপ নেয়। চতুর্থ পরিষদ দায়িত্ব নেওয়ার পর থেকে বকেয়া বিদ্যুৎ বিলের জন্য ওজোপাডিকো সিটি করপোরেশন থেকে শুরু করে সংশ্লিষ্টদের নিয়ে একাধিক বৈঠক করলেও বিল পরিশোধে গড়িমসি করা হয়। এতে পরের বছরগুলোতে বিদ্যুৎ বিল দাঁড়ায় ৫৯ কোটি টাকা। প্রতিদিন এ বিল বাড়ছে। কিন্তু সিটি করপোরেশন বিল পরিশোধ না করায় নগরীর সব সড়কের সংযোগ বিচ্ছিন্ন করে দেয় ওজোপাডিকো। এতে রাতে চলাফেরায় দুর্ভোগে পড়ছেন নগরবাসী। এমনকি ছোট ছোট যানবাহন চলাচলে দুর্ঘটনাকবলিত হচ্ছে।
বিসিসির প্রশাসনিক কর্মকর্তা স্বপন কুমার দাস জানিয়েছেন, সোমবার থেকে বিদ্যুৎ সংযোগ বিচ্ছিন্ন শুরু হলেও মঙ্গলবার রাতে বিষয়টি জানতে পেরেছি আমরা। তবে ১৮ সেপ্টেম্বর ৮০ লাখ টাকা বিল দেওয়া হয়েছে। সংযোগ বিচ্ছিন্ন করে দেওয়ায় নগরীর ১৮টি মোটর থেকে পানি উত্তোলন বন্ধ হয়ে পড়বে। এতে নগরবাসীর মাঝে পানির সংকট দেখা দেবে। আমার জানামতে, আমাদের ৪২ কোটি ২২ লাখ টাকা বকেয়া।
তবে ওজোপাডিকো বিক্রয় ও বিতরণ বিভাগ-১-এর নির্বাহী প্রকৌশলী আমজাদ হোসাইন এবং বিক্রয় ও বিতরণ বিভাগ-২-এর নির্বাহী প্রকৌশলী মো. ফারুক হোসেন জানান, বরিশাল সিটি করপোরেশনের কাছে ৫৯ কোটি টাকা পাওনা রয়েছেন তারা। এজন্য সিটি করপোরেশনকে বারবার নোটিশ দেওয়া হলেও বকেয়া পরিশোধ করেনি। এমনকি বিষয়টি বিভাগীয় কমিশনারকেও অবহিত করা হয়েছে। বিল পরিশোধ না করায় বিক্রয় ও বিতরণ বিভাগ-১-এর অধীন সাতটি এবং বিক্রয় ও বিতরণ বিভাগ-২-এর অধীন আটটি লাইন সোমবার ও মঙ্গলবার বিচ্ছিন্ন করে দেওয়া হয়। এতে নগরীর ১৫টি প্রধান সড়ক এবং এর সঙ্গে থাকা অলিগলি বিদ্যুৎহীন হয়ে পড়েছে।
ওজোপাডিকো বরিশালের পরিচালনা ও সংরক্ষণ সার্কেলের সহকারী প্রকৌশলী নুরুল ইসলাম বিশ্বাস বলেন, ১০ বছর ধরে বিদ্যুৎ বিল পরিশোধ না করায় বকেয়ার পরিমাণ বিশাল হয়ে দাঁড়িয়েছে। ওই টাকা উত্তোলন করতে না পারায় মন্ত্রণালয়ের চাপের মুখে রয়েছি আমরা। আমাদের জবাবদিহি করতে হয়। এ কারণে বিদ্যুৎ সংযোগ বিচ্ছিন্ন করতে বাধ্য হয়েছি।
পরিচালনা ও সংরক্ষণ সার্কেলের তত্ত্বাবধায়ক প্রকৌশলী এটিএম তারিকুল ইসলাম বলেন, বিদ্যুৎ বিলের বকেয়া পরিশোধে অসংখ্যবার চিঠি দেওয়া হয়েছে। কিন্তু সিটি করপোরেশন থেকে কোনও সাড়া মেলেনি। সর্বশেষ পরিশোধের তারিখ ছিল ১৮ সেপ্টেম্বর। বিল পরিশোধ করলে সংযোগ চালু করা হবে।