চাঁপাইনবাবগঞ্জে তারাবির নামাজ পড়তে গিয়ে অটোরিকশা হারানো অসহায় ইভান আলীর পাশে দাঁড়িয়েছেন তরুণ রাজনীতিবিদ ও সমাজসেবক ফারাজ করিম চৌধুরী।
অটোরিকশা কেনা বাবদ তাকে এই টাকা দেওয়া হয়েছে জানিয়ে এমপিপুত্র ফারাজ করিম চৌধুরী বলেন, গণমাধ্যমের খবরে জানতে পারি তারাবির নামাজ পড়তে গিয়ে অটোরিকশা হারিয়ে গেছে ইভান আলীর। উপার্জনের সম্বল হারিয়ে অনেক কষ্টে ছিলেন, বিষয়টি আমরা উপলব্ধি করতে পেরেছি। এরপর বিভিন্ন মানুষের পাঠানো সাহায্য থেকে অটোরিকশা কেনার প্রতিশ্রুতি দেই। আমরা আশা করি এই টাকা দিয়ে অটোরিকশা চালিয়ে ঋণের টাকা ফেরত দেওয়ার সামর্থ্য হবে ইভান আলীর।
এসময় ফারাজ করিম চৌধুরী আরও বলেন, এখন প্রথম ধাপে ১ লাখ ৩০ হাজার টাকা তুলে দিলাম। পরবর্তীতে আরও ২০ হাজার টাকা দেওয়া হবে। এই দেড় লাখ টাকায় একটি অটোরিকশা কিনে জীবিকা নির্বাহ করবেন ইভান আলী। এই টাকা নিয়ে তিনি কতদূর যেতে পারেন তা আমরা মনিটরিং করব ইনশাআল্লাহ।
ফারাজ করিম চৌধুরী আরও বলেন, বঙ্গবাজারে ক্ষতিগ্রস্ত মানুষের পাশে দাঁড়াতে অনেক সহযোগিতা করার জন্য সবার প্রতি কৃতজ্ঞতা। তবে আজকের পর থেকে বঙ্গবাজারে ক্ষতিগ্রস্তদের জন্য দয়া করে আর কেউ টাকা পাঠাবেন না। মঙ্গলবার এক ভাইয়ের মাধ্যমে সাড়ে ৫ লাখ টাকা ক্ষতিগ্রস্ত ব্যবসায়ীদেরকে দেওয়া হয়েছে। দুর্যোগ ছাড়া আপনাদের কাছে কোনো অর্থ চাইব না। যতটুকু পারি আত্বীয়-স্বজনদের কাছ থেকে নিয়ে চালিয়ে নেব। তবে বিপদ হলে আবারও আপনাদের সবার সহযোগিতা চাইব।
টাকা পেয়ে ইভান আলী বলেন, আলহামদুলিল্লাহ খুব উপকার হলো ফারাজ করিম চৌধুরী ভাইয়ের মাধ্যমে এই টাকা পেয়ে। এই টাকা দিয়ে আবারও আগের মতো একটি পুরাতন অটোরিকশা কিনে চালাতে পারব। এমন সহযোগিতার জন্য সবার প্রতি সারাজীবন কৃতজ্ঞ থাকব। হারিয়ে যাওয়া গাড়ি কিনতে হয়েছিল ঋণ করে। আশা করি সহযোগিতার টাকায় অটোরিকশা কিনে সেই ঋণ শোধ করতে পারব।
তিনি আরও বলেন, চাঁপাইনবাবগঞ্জ সরকারি হরিমোহন উচ্চ বিদ্যালয়ে আমি পিয়নের অস্থায়ী চাকরি করি। স্কুল থেকে তিনি মাসে ৬-৭ হাজার টাকা বেতন পাই। কিন্তু এই সামান্য বেতনের টাকা দিয়ে পরিবার চালানো সম্ভব নয়। তাই অবসর সময় বা রাতের বেলায় বাড়তি আয়ের জন্য অটোরিকশা চালাই। আগের কেনা অটোরিকশার ঋণ শোধ করতে প্রতিমাসে ১৮ হাজার করে টাকা লাগত। ফারাজ করিম চৌধুরীর মাধ্যমে টাকা পেয়ে আরেকটি অটোরিকশা কিনে কিস্তি পরিশোধ করব ও সংসার চালাব।
হরিমোহন সরকারি উচ্চ বিদ্যালয়ের শিক্ষক মাহবুবুল হক জানান, ইভান আলী অনেক দরিদ্র একজন মানুষ। সে স্কুলে চাকরির পাশাপাশি রাতের বেলায় অটোরিকশা চালিয়ে সংসার পরিচালনা করে। সে অনেক পরিশ্রমী মানুষ। তিনি পরিবারের একমাত্র উপার্জনক্ষম ব্যক্তি। তাই স্বাভাবিকভাবে অটোরিকশা হারিয়ে ভেঙে পড়েছিলেন।
মঙ্গলবার (১৮ এপ্রিল) রাতে রাজধানীর গুলশানে অটোরিকশা চালক ইভান আলীর হাতে নগদ ১ লাখ ৩০ হাজার টাকা তুলে দেন তিনি। এ সময় ইভান আলীকে আরও ২০ হাজার টাকা দেওয়ার প্রতিশ্রুতি দেন ফারাজ করিম চৌধুরী।
উল্লেখ্য, গত রোববার (১৬ এপ্রিল) রাতে চাঁপাইনবাবগঞ্জ জেলা শহরের হরিমোহন গাবতলা পাঠাগার মসজিদে তারাবির নামাজ পড়তে গিয়ে ইভান আলীর অটোরিকশা চুরি হয়ে যায়। বাইরে এসে অটোরিকশা না দেখতে পেয়ে কান্নায় ভেঙে পড়েন তিনি। ঘটনার দিন রাতেই ইভান আলী চাঁপাইনবাবগঞ্জ সদর মডেল থানায় চুরি হওয়া অটোরিকশার জন্য সাধারণ ডায়েরি করেন।
চাঁপাইনবাবগঞ্জ সদর থানা পুলিশের ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি তদন্ত) মাহফুজুল হক চৌধুরী জানান, ইভান আলীর চুরি হওয়া অটোরিকশা উদ্ধারে পুলিশ কাজ করছে। আমরা সর্বোচ্চ চেষ্টা অব্যাহত রেখেছি, তার হারিয়ে যাওয়া অটোরিকশা উদ্ধার করার জন্য।
Array