হজরত আনাস (রা.) থেকে বর্ণিত, রসুল (সা.) ইরশাদ করেছেন, ‘যে আল্লাহ তায়ালার রাস্তায় এক সকাল অথবা এক বিকাল মানুষের কল্যাণের জন্য ব্যয় করবে, তাকে সমগ্র দুনিয়া এবং এর ভিতর যা কিছু আছে তা দান করার চেয়েই বেশি সওয়াব দান করা হবে।’ সুবহানাল্লাহ।
আল্লাহ রব্বুল আলামিন পৃথিবীতে যত জাতিকে দুনিয়াতে প্রেরণ করেছেন তার মধ্যে উম্মতে মোহাম্মদী হচ্ছে শ্রেষ্ঠ জাতি। এ শ্রেষ্ঠত্বের কারণ হলো উম্মত শুধু নিজের নয় পুরো মানব জাতির মুক্তি ও কল্যাণের জন্য কাজ করবে। তারা সৎ কাজের আদেশ দেবে এবং অসৎ কাজে নিষেধ করবে এবং বাধা দেবে।
পবিত্র কোরআনে আল্লাহ বলেন, ‘পুরুষ এবং নারীর মধ্যে যে কেউ মুমিন অবস্থায় নেক আমল করবে, আমি অবশ্যই তাকে শান্তিময় জীবন দান করব এবং তারা যা আমল করত তার তুলনায় আমি অবশ্যই তাদের উত্তম পুরস্কার দেব।’ (সুরা নাহল, আয়াত ৯৭)।
আল্লাহ আরও বলেন, ‘সম্পদ ও সন্তান-সন্তুতি হলো দুনিয়ার জীবনের শোভামাত্র, আর তোমার রবের নিকট নেক আমল চিরস্থায়ী এবং তার প্রতিদানও উত্তম এবং প্রত্যাশাও উত্তম’। (সুরা কাহাফ, আয়াত ৪৬)।
আল্লাহ আরও বলেন, ‘যে কেউই নেক কাজ করবে সেই মোমেন হিসেবে গণ্য হবে, হ্যাঁ এরাই হচ্ছে সে সৌভাগ্যবান মানুষ যারা সহজে জান্নাতে প্রবেশ করবে এবং সেখানে তাদের অপরিমিত রিজিক দেওয়া হবে।’ (সুরা মোমেন, আয়াত ৪০)।
আবার বদ বা খারাপ আমলের জন্য রয়েছে কঠিন ও কঠোর শাস্তি।
আল্লাহ রব্বুল আলামিন বলেন, ‘যারা মন্দ কাজ করেছে তাদের প্রতিফল মন্দের মতোই হবে। অপমান আর লাঞ্ছনা তাদের আচ্ছন্ন করে ফেলবে। সেদিন আল্লাহর আজাব থেকে তাদের রক্ষাকারী কেউই থাকবে না। তাদের চেহারা হবে এমন কালো যে অন্ধকার রাতের এক অংশ দিয়ে তাদের চেহারা ঢেকে দেওয়া হবে। এরাই হবে জাহান্নামের অধিবাসী, সেখানে তারা চিরস্থায়ী হবে।’ (সুরা ইউনুস, আয়াত ২৭)।
উত্তম নেক আমলসমূহ হলো বিশুদ্ধভাবে কোরআন পাঠ করা, মসজিদে গিয়ে নামাজ আদায় করা, জাকাত আদায় করা, আর্থিক সামর্থ্য থাকলে হজ আদায় করা, অন্যের হক নষ্ট না করা, মিথ্যা কথা না বলা, পিতা-মাতার হক আদায় করা, গরিবদের সাহায্য করা, অর্থাৎ এক কথায় সব ভালো কাজ করা এবং মন্দ কাজ থেকে বিরত থাকাই নেক আমল। আল্লাহর রাস্তায় দান করা নেক আমলের অন্তর্ভুক্ত।
পবিত্র কোরআনে আল্লাহ বলেন, ‘আর তোমরা আল্লাহর রাস্তায় ব্যয় কর। নিজ হাতে নিজেদের ধ্বংসের মুখে ঠেলে দিও না। আর নিশ্চয়ই আল্লাহ সৎকর্মশীলদের পছন্দ করেন।’ (সুরা বাকারা, আয়াত ১৯৫)।
আমাদের নেক আমলগুলো এমন হওয়া উচিত যা আমাদের আল্লাহর সন্তুষ্টি অর্জন করতে সাহায্য করে, কারণ আল্লাহর সন্তুষ্টি অর্জন ছাড়া কোনো আমলই গ্রহণযোগ্য হবে না।
সুরা আল ইমরানে আল্লাহ রব্বুল আলামিন বলেন, ‘তারা (আহলে কিতাবের কিছু লোক) আল্লাহ ও পরকালের প্রতি বিশ্বাস স্থাপন করে, সৎকাজের আদেশ দেয় ও অসৎ কাজে নিষেধ করে এবং তারা কল্যাণকর কাজে প্রতিযোগিতা করে। মূলত তারাই পুণ্যবানদের অন্তর্ভুক্ত।’ (আয়াত ১১৪)।
এ আয়াতে উম্মতে মোহাম্মদীকে আল্লাহতায়ালা উত্তম উম্মত হিসেবে ঘোষণা দিয়ে তাদের সৎকাজ করার আদেশ ও অসৎ কাজ থেকে বিরত থাকার কথা বিবৃত করেছেন। আল্লাহর প্রতি যারা বিনয়াবনত হয় এবং তিনি যা নাজিল করেছেন তা সুচারুভাবে মেনে জীবন পরিচালনা করে তারাই সফলকাম এবং নেক আমলকারী।
নিয়মিত নেক আমলগুলোর প্রতি যত্নবান হতে উৎসাহিত করেছেন রসুল (সা.)। কোনো নেক আমল নিয়মিত করলে তা ছেড়ে দেওয়া উচিত নয়। যেমন রাত জেগে তাহাজ্জুদের নামাজ আদায়, রাতে ঘুমাতে যাওয়ার আগে দোয়া দরুদ পাঠ করা, ফজরের সালাতের পর ইশরাকের নামাজ আদায় করা ও কোরআন পাঠ করা, জুমার দিন সুরা কাহাফ পাঠ করা এবং বেশি বেশি দরুদ পড়া ইত্যাদি।
কেউ যদি এ আমলগুলো নিয়মিত করে তাহলে তার উচিত হবে কখনো তা ছেড়ে না দেওয়া। আল্লাহ রব্বুল আলামিন আমাদের সবাইকে বেশি বেশি নেক আমল করার মাধ্যমে আল্লাহর সন্তুষ্টি অর্জনের তৌফিক দান করুন।
লেখক : অবসরপ্রাপ্ত ব্যাংকার।
Array