এম.মোরছালিন, বরগুনা প্রতিনিধি: দীর্ঘ ১০ বছর বন্ধ থাকার পর বাংলাদেশ সরকারের সম্মতিক্রমে গত বছর দুই হাজারের অধিক প্রতিষ্ঠান এমপিওভুক্ত করে শিক্ষা মন্ত্রণালয়। বরগুনার আমতলী উপজেলার ড. মোঃ শহিদুল ইসলাম কলেজ তার মধ্যে একটি। প্রতিষ্ঠান এমপিও মানা হয়নি অধিকাংশ শর্ত। পূর্বের শিক্ষক-কর্মচারী বাদ দিয়ে ঐ (পূর্বের) তারিখের নিয়োগ দেখিয়ে নতুন শিক্ষক-কর্মচারীদের বেতনভাতা করার পায়তারা চালাচ্ছেন প্রতিষ্ঠানে প্রতিষ্ঠাতা ও সভাপতি ড. মোঃ শহিদুল ইসলাম।
বরগুনার আমতলী উপজেলার ড. মোঃ শহিদুল ইসলাম কলেজটি ২০২২ সালে এমপিও ভুক্ত হয়। বেসরকারি শিক্ষা প্রতিষ্ঠান স্থাপন নীতিমালা অনুযায়ী কলেজের নামে এক একর সম্পত্তি থাকার কথা থাকলেও (হিন্দু সম্প্রদায়ের জমি) জাল দলিলের মাধ্যমে জমি দেখিয়েছেন বলে অভিযোগ স্থানীদের। এ নিয়ে ২৫/২০১১নং দেওয়ানী মামলাও চলমান।
জমির মালিক সুজন চন্দ্র ধুপী জানান, কলেজের প্রতিষ্ঠাতা ও সভাপতি মোঃ শহিদুল ইসলাম সোহেল আমাদের জমি জোর পূর্বক দখল করে। পরে আমরা মামলা করে জমি দখলে নেই। মামলাটি বিজ্ঞ আদালতে চলমান।
স্থানীয়রা জানান, কলেজের সভাপতি জমির মালিক সুজন চন্দ্র ধুপীর সৎ ভাই দেখিয়ে জাল দলিল করেছেন। অথচ সুজনদের কোন সৎ ভাই আছে কিনা আমাদের জানান নেই। সুজনের বাবার মৃত্যুর পর আমাদের ইউনিয়নের চেয়ারম্যান ওয়ারিশ সনদপত্র দিয়েছেন তাতে সুজরা চার ভাই ওয়ারিশ রয়েছেন। আমাদের জানামতে এই জমি সুজনদের। কিন্তু সভাপতি সুজনদের জমি কলেজের দখলে নেয়ার জন্য বিভিন্ন পায়তারা চালাচ্ছে।
সরেজমিনে খোজ নিয়ে জানান যায়, ড. মোঃ শহিদুল ইসলাম কলেজ প্রতিষ্ঠা হওয়ার পর যেসকল শিক্ষক/কর্মচারী চাকরী দায়িত্ব পালন করে আসছিলেন তাদেরকে বাদ দিয়ে মোটা অংকে টাকার বিনিময় নতুন শিক্ষক/কর্মচারী পূর্বের তারিখে নিয়োগ দেখিয়ে শিক্ষক-কর্মচারী এমপিও করার পায়তারা চালাচ্ছেন। ২০১৪ সালের ৬ নভেম্বর দৈনিক সমকাল পত্রিকায় বিজ্ঞপ্তির মাধ্যমে অধ্যক্ষসহ বিভিন্ন পদে নিয়োগ সম্পান্ন করা হয়। তৎকালীন সময় অধ্যক্ষ পদে উক্ত সভাপতির আপন ভাই হাসানুজ্জামান নিয়োগ প্রাপ্ত হন।
সভাপতির বিভিন্ন অনিয়মে সঙ্গ না দেয়ায় তাকে কলেজ থেকে বের করে দেয়া হয়। এরপর থেকে ঐ প্রতিষ্ঠানে অধ্যক্ষ পদে আজ পর্যন্ত কোন বিজ্ঞপ্তি প্রকাশ কিংবা নিয়োগ প্রক্রিয়া সম্পান্ন হয়নি। অথচ প্রতিষ্ঠান এমপিও হওয়ার পর সভাপতির স্ত্রী মাসুমা আক্তার খাদিজাকে প্রভাষক (ইসলাম শিক্ষা) পদ থেকে হঠাৎ করে অদৃশ্য কারণে অধ্যক্ষ করা হয়।
এমনকি তৎকালীন সময় যেসকল শিক্ষক/কর্মচারী নিয়োগ পেয়েছিলেন তাদের নিকট সভাপতি মোটা অংকে টাকা চাইলে তারা দিতে না পারায় তাদের বাদ দিয়ে নতুন শিক্ষক/কর্মচারী নেয়া হয়েছে। সভাপতি মোঃ শহিদুল ইসলামের টাকা চাওয়ার একটি অডিও কলরেকর্ড ইতমধ্যে সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে ভাইরাল হয়।
খোজ নিয়ে জানা যায়, কলেজের সভাপতি ড. মোঃ শহিদুল ইসলাম বিভিন্ন সময়ে জাল জালিয়াতির অভিযোগে মামলার আসামী হয়েছেন। এমনকি তার চাকরিরত প্রতিষ্ঠান মোজাহার উদ্দিন বিশ্বাস কলেজ, কলাপাড়া থেকে জাল স্বাক্ষর প্রদানের কারণে ২০০৯-২০১৬ পর্যন্ত সাময়িক বরখাস্ত ছিলেন। প্রশ্ন উঠেছে তার ডক্টরেট ডিগ্রি নিয়েও। ইউনিভার্সিটি অব হনলুলু থেকে ডক্টরেট ডিগ্রি অর্জন করেছেন তিনি। কিন্তু বাংলাদেশ বিশ্ববিদ্যালয় মঞ্জুরী কমিশন (ইউজিসি) কর্তৃক বেশ কিছু ভুয়া ও মানহীন পিএইচডি ডিগ্রি দেওয়া প্রতিষ্ঠানকে কলো তালিকাভুক্ত করেন। তারমধ্যে ইউনিভার্সিটি অব হনলুলু রয়েছে।
এদিকে চলতি মাসে শিক্ষক-কর্মচারীদের বেতনভাতা হওয়ার নির্দেশনা আসলে প্রতিষ্ঠানে সভাপতি পূর্বের শিক্ষক-কর্মচারীদের অধিকাংশ বাদ দিয়ে নতুন করে ঐ (পূর্বের) তারিখে নিয়োগ দেখিয়ে মোটা অংকের টাকার বিনিময়ে শিক্ষক-কর্মচারীদের বেতনভাতা করার জন্য তোরজোর চালাচ্ছেন বলে অভিযোগ শিক্ষক-কর্মচারীদের। কলেজের বিভিন্ন অনিয়ম দূর্ণীতি নিয়ে শিক্ষকরা একাধিকবার বিভিন্ন দপ্তরে অভিযোগ দিয়েও কোন প্রতিকার পাননি বলে দাবী করেন।
কলেজে চাকুরীরত বেশ কয়েকজন শিক্ষক-কর্মচারী বলেন, সভাপতি মোঃ শহিদুল ইসলাম আমাদের নিকট মোট অংকের টাকা দাবী করেন। আমরা টাকা দিতে না পারায় আমাদের নাম বাদ দিয়ে আমাদের নামের স্থলে নতুন শিক্ষক-কর্মচারীদের নাম দিয়ে বেতন ভাতা করার পায়তারা চালাচ্ছেন। এ বিষয়ে আমরা বিভিন্ন দপ্তরে অভিযোগ করেছি। এখন পর্যন্ত কোন প্রতিকার পাইনি।
এদিকে ৫ ফেব্রুয়ারী ২০২৩ তারিখে অনলাইন থেকে উত্তোলিত প্রতিষ্ঠান স্বীকৃতি নবায়নের কপিতে দেয়া যায় সভাপতি মোঃ শহিদুল ইসলামের স্ত্রী মাসুমা আক্তার খাদিজা প্রভাষক পদে কর্মরত আছেন।
প্রতিষ্ঠানে গিয়ে জানতে চাইলে সভাপতি কোন কাগজপত্র দেখাতে রাজি হননি। প্রতিষ্ঠান এমপিও হওয়ার পর হঠাৎ করে কিভাবে মাসুমা আক্তার খাজিদা অধ্যক্ষ পদে পেলেন, এ বিষয়ে অভিযুক্ত সভাপতি মোঃ শহিদুল ইসলাম (সোহেল) এর নিকট জানতে চাইলে তিনি বলেন- ২০১৩ সালে আমার স্ত্রীকে অধ্যক্ষ পদে নিয়োগ দিয়েছি। শিক্ষকদের হাজিরা খাতা দেখতে চাইলে তিনি বলেন, শিক্ষকদের হাজিরা সীট আমি ভিন্ন একটা করেছি। সেটা আপনাকে ডিপার্টমেন্টালভাবে দিতে রাজি, কিন্তু আমি আপনাদেরকে দিতে রাজি না। পত্রিকার বিজ্ঞপ্তি ২০১৪ সনে, কিভাবে ২০১৩ সনে স্ত্রীকে অধ্যক্ষ পদে নিয়োগ দিয়েছে জানতে চাইলে তিনি প্রতিবেদককে মুঠোফোনে অকথ্যভাষায় দেখে নেয়ার হুমকি প্রদান করেন।
এ বিষয়ে জেলা শিক্ষা অফিসার, শিক্ষক যাচাই বাছাই কমিটির আহবায়ক বরগুনা সরকারি কলেজের অধ্যক্ষসহ কোন কর্মকর্তাই বক্তব্য দিতে রাজি হননি।
তবে বরিশাল বিভাগীয় আঞ্চলিক পরিচালক প্রফেসর মোঃ মোয়াজ্জেম হোসেন বলেন- নতুন এমপির ব্যাপারে অনেক অভিযোগই আসে। জেলা পর্যায়ে তদন্ত কমিটি তদন্ত করা হয়েছে। জেলা পর্যায়ে কাজ চলছে। প্রতিবেদন আসলে যাচাই বাছাই করে আমরা সিদ্ধান্ত নিবো।
Array