মোহাম্মদ মিলন আকতার, ঠাকুরগাঁও প্রতিনিধি; সূর্যমুখী অতি পরিচিত একটি ফুল। এর তেল মানে-গুণে অনন্য। সারাবিশ্বেই এর ব্যাপক চাহিদা থেকে এদেশেও বাণিজ্যিকভাব সূর্যমুখীর চাষ শুরু হয় ষাটের দশকে। তেলের উৎস হিসেবে পৃথিবীতে সূর্যমুখীর ব্যাপক চাহিদা রয়েছে।
বর্তমানে দেশের অন্যান্য জেলার পাশাপাশি ঠাকুরগাঁও জেলার বিভিন্ন স্থানে সূর্যমুখীর চাষ শুরু হয়েছে। এরই ধারাবাহিকতায় ঠাকুরগাঁও সদর উপজেলার জগন্নাথপুর ইউনিয়নের হাজিরমোড় (বিজিবি ক্যাম্পের পাশে), শীবগঞ্জ, রুহিয়া থানার ঢোলারহাট সহ বিভিন্ন এলাকায় সূর্যমুখীর চাষ হয়েছে। রুহিয়া থানার ঢোলারহাট মুখাবন্দি গ্রামের কৃষক ছবি লাল (৫০) এক বিঘা (৫০ শতক) জমিতে সূর্যমুখী চাষ করেছেন। তার ক্ষেতের সকল গাছে ফুল ধরতে দেখা যায়।
গতবছরে ঐ জমিতে সূর্যমুখী চাষ শুরু করেছিলেন তিনি। বাগানটি প্রকৃতপ্রেমীদের উপভোগের বিষয় হয়ে উঠেছে। দলে দলে তারা ছুটে চলছেন এবং ছবি তুলে পোস্ট করছেন সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে। ঠাকুরগাঁও জেলা কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তর সূত্রে জানা যায়, ঠাকুরগাঁও জেলায় এ বছর ৫ হেক্টর জমিতে সূর্যমুখী আবাদের লক্ষ্যমাত্রা থাকলেও আবাদ হয়েছে কম। এ পর্যন্ত প্রায় ১ দশমিক ২৫ হেক্টর জমিতে সূর্যমুখীর চাষ হয়েছে। এতে উৎপাদনের লক্ষ্যমাত্রা ধরা হয়েছিল ১২ মেট্রিক টন। তবে প্রতি হেক্টরে ২ দশমিক ৫০ মেট্রিক টনের মত উৎপাদন হতে পারে বলে ধারনা কৃষি বিভাগের। আবহাওয়া অনুকূলে থাকলে শতভাগ জমিতেই ভালো বীজ পাওয়ার আশা করছে কৃষি বিভাগ।
ঠাকুরগাঁও সদর উপজেলার রুহিয়া ঢোলারহাট মুখাবিন্দ গ্রামের কৃষক ছবি লাল (৫০) বলেন, জেনেছি সূর্যমুখীর বীজ পশুখাদ্য হিসেবে হাঁস মুরগিকে খাওয়ানো হয়। এই বীজ যন্ত্রে মাড়াই করে তেল বের করা হয়। ঘিয়ের বিকল্প হিসেবে সূর্যমুখীর তেল ব্যবহৃত হয়, যা বনস্পতি তেল নামে পরিচিত। এতে কোলেস্টেরলের মাত্রা অত্যন্ত কম থাকে। এছাড়াও এতে ভিটামিন এ, ডি ও ই রয়েছে। ভিটামিন ‘ই’ এর ক্যান্সাররোধী গুণাবলীর কথাও জানা গেছে। এ কারনে সূর্যমুখী চাষে উদ্বুদ্ধ হই। আপাতত এক বিঘা (৫০ শতক) জমিতে আবাদ করেছি। পরবর্তিতে আরও বেশি জমিতে সূর্যমুখী চাষ করার পরিকল্পনা রয়েছে।
ঠাকুরগাঁও কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের উপ- পরিচালক কৃষিবিদ মো: সিরাজুল ইসলাম জানান, ঠাকুরগাঁও কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের আওতায় তেল জাতীয় ফসলের প্রযুক্তি বিস্তার ও দানা জাতীয় ফসলের প্রযুক্তি বিস্তার প্রদর্শনীর আওতায় সূর্যমুখীর চাষ করা হচ্ছে। ঠাকুরগাঁও জেলার বিভিন্ন উপজেলার চাষীদের কৃষি বিভাগের নিয়মিত তদারকি ও পরামর্শ দিয়ে সব ধরনের সহযোগিতা করা হয়েছে। অল্প কিছুদিনের মধ্যেই কাটাই-মাড়াই শুরু হবে এবং বড় কোন প্রাকৃতিক দুর্যোগ দেখা না দিলে সূর্যমূখীর বাম্পার ফলন হবে বলে প্রত্যাশা ব্যক্ত করেন তিনি।
Array