যুদ্ধের বিরোধিতা করে তৈরি শিল্পকর্ম ‘এ উইন্ডো অনটু ইউরোপ’
গত বছর ইউক্রেনে অভিযান শুরুর পর রাশিয়াতে নতুন করে ১০০টির বেশি আইন তৈরি করা হয়েছে। এসব আইন মূলত এই যুদ্ধের বিরোধিতাকারীদের বিরুদ্ধে ব্যবহার করা হচ্ছে।
ইউক্রেনে রুশ আগ্রাসন ও দেশটির প্রেসিডেন্ট ভ্লাদিমির পুতিনের যারা সমালোচনা করছেন, তাদের এসব আইনের আওতায় বিচারের মুখোমুখি করা হচ্ছে।
রাশিয়ার একটি ছোট শহরে চার বছর ধরে ডিস্ট্রিক্ট কাউন্সিলরের দায়িত্ব পালন করেছেন নিনা বিলিয়াবা নামে এক নারী। ইউক্রেনে রুশ আগ্রাসনের নিয়মিত বিরোধিতা করে আসছেন তিনি। গত বছর মার্চে কাউন্সিলের একটি মিটিংয়ে তিনি রুশ আগ্রাসনের বিরোধিতার কথা প্রকাশ করলে তার নিজের লোকেরাই তার বিরুদ্ধে অবস্থান নেয়।
তবে এসবে দমে যাননি নিনা। নিজের অবস্থান থেকে সরেননি তিনি। ওই বৈঠকে তিনি বলেন, আমি রুশ প্রেসিডেন্ট ও তার কর্মকাণ্ডের বিরোধিতা করছি। ইউক্রেনে যা হচ্ছে আমি বিশ্বাস করে তা যুদ্ধাপরাধ।
এ সময় এক কাউন্সিলর তাকে মুখ বন্ধ করতে বলেন। কিন্তু তাতেও তিনি মঞ্চ ছাড়েননি। তবে এসব করে নিজের বিপদ ডেকে এনেছেন নিনা। পরে পদচ্যুত করতে তার বিরুদ্ধে ভোট দেন ডেপুটিরা। আর ঝুঁকি বিবেচনায় শেষ পর্যন্ত দেশ ছেড়ে ইউরোপে আশ্রয় নিতে হয়েছে তাকে।
ইউক্রেনে হামলা শুরু হওয়ার পর আরোপিত নতুন আইন অনুযায়ী একে যুদ্ধ বলা বা তার বিরোধিতা করা অপরাধ।
তবে নিনা একা নয় তার মতো আরও মানুষ রয়েছেন যারা রাশিয়াতে থেকেই সরাসরি এ যুদ্ধের বিরুদ্ধে গলা চড়িয়েছেন।
লিওনিয়া নামে একজন স্ট্রিট আর্টিস্ট বলেন আমার মনে হয় আমাদের নীরব থাকা উচিৎ নয়। আমরা চুপ থাকবো না।
যুদ্ধের বিরোধিতা করে দেওয়ালে কিছু স্টিকার লাগানোর অপরাধে পুলিশের হাতে গ্রেপ্তার হয়েছিলেন তিনি।
লিওনিয়া বলেন, আমাকে পুলিশ স্টেশনে নিয়ে যাওয়া হলো। আমি আইনজীবীর সাথে কথা বলার বিষয়ে বললে তারা আমাকে পেটাতে শুরু করে। আমি বুঝতে পারছিলাম না, আমি তো আইনজীবীর কথা বলেছি, এতে আমাকে পেটানো হচ্ছে কেন?
পরে আদালত তাকে এক মাসের জন্য মানসিক হাসপাতালে পাঠিয়ে দেয়।
ইউক্রেন রুশ আগ্রাসনের বিরোধিতাকারীদের আরও একজন হলেন দিমা। ইউক্রেন যুদ্ধ শুরু হওয়ার পর রাশিয়াতে এত পরিবর্তন এসেছে যা বিশ্বাস করা তার জন্য কঠিন। তিনি বলেন, আমি এক সময় মজা করে বলতাম যে আমরা একসময় অপরাধী হয়ে যাব, চরমপন্থি হয়ে যাব। আমি জেলে যাব। কিন্তু সত্যিই যখন জেলে গেলাম তখন ভয় পেয়ে গিয়েছিলাম।
স্বাধীনতা না থাকায় নিনাসহ হাজারো রুশ দেশ ছাড়তে বাধ্য হয়েছেন। তবে লিওনিয়ার কাছে স্বাধীরতার অর্থ হলো- যেখানে ইচ্ছা সেখানে থাকতে পারা।
Array