বসন্ত বরণ আর ভালোবাসা দিবস উদযাপনে মেতেছিল তরুণ-তরুণীরা। দেশের অন্যান্য জেলার মতো রংপুরেও দেখা গেছে বসন্ত বরণের উৎসব। ভালোবাসা দিবসে হলুদ-লাল শাড়ি কিংবা পাঞ্জাবি পরিহিত তরুণ-তরুণীদের বাড়তি আকর্ষণ ছিল ফুল। এরই মাঝে মাথায় হেলমেট দিয়ে প্লাস্টিকের ‘লাল গোলাপ ফুল’ হাতে ঘুরে বেড়াচ্ছেন এক তরুণ।
মঙ্গলবার (১৪ ফেব্রুয়ারি) দুপুরে রংপুর চিড়িয়াখানা রোডে হাতে প্লাস্টিকের ফুল নিয়ে দাঁড়িয়ে থাকতে দেখা যায় সিয়াম সাদিক নামের ওই তরুণকে। তিনি রংপুর মহানগরীর মাহিগঞ্জ কলেজের উচ্চ মাধ্যমিকের প্রথম বর্ষের শিক্ষার্থী। বিশ্ব ভালোবাসা দিবসে পছন্দের মানুষকে ফুল উপহার দিতে নয়, বরং ফুল বিক্রি করতেই অভিনব এই কৌশল তার। আর নিজের পরিচয় আড়ালে রাখতে মাথায় হেলমেট পরে বিক্রি করছেন নিজের তৈরি ফুল।
সিয়াম সাদিক একজন সৌখিন বাইকার। তিনি রংপুর মহানগরীর মাহিগঞ্জ সাতমাথা এলাকায় থাকেন। নিজের পড়ালেখার খরচ যোগাতে নিজেই পুতি দিয়ে প্লাস্টিকের ফুল, ফুলের তোড়া এবং ফুলের মালা তৈরি করে থাকেন। তৈরি করা এসব ফুল বাজারে পাইকারিভাবে বিক্রি করেন সিয়াম। তাতে যা আয় হয় তা দিয়ে পড়ালেখা ও ব্যক্তিগত খরচ মেটানোর চেষ্টা করেন।
সিয়াম সাদিক জানান, তিনি একজন বাইকার। নিজের টাকা দিয়ে মোটরবাইক কিনেছেন। নিয়মিত তেলসহ যাবতীয় খরচ নিজেই বহন করেন। কখনও কখনও বাড়িতেও নিজের তৈরি করা ফুল বিক্রির টাকায় সহায়তা করেন। বিশ্ব ভালোবাসা দিবসে ফুলের বেশি চাহিদা থাকায় নিজেই বিক্রি করতে শহরে এসেছেন। নিজে ফুল বিক্রি করতে পারলে পাইকারি বিক্রির চেয়ে বেশি লাভ হবে। প্রতিটি পুতির ফুলের মালা বা তোড়া তৈরিতে তার খরচ পড়েছে ৫৫-৬০ টাকা। এগুলো পাইকারি বিক্রি হয় ৮০ টাকায়। আর খুচরা বিক্রি হচ্ছে ১০০ থেকে ১২০ টাকা।
বড় হয়ে উদ্যোক্তা হবার স্বপ্ন দেখা এই তরুণ বলেন, নিজে তৈরি করে নিজে যদি বিক্রি করাতে পারায় বেশি লাভ পাওয়া যাচ্ছে। সকাল ১০টা থেকে দুপুর পর্যন্ত ২২টা ফুলের তোড়া বিক্রি করেছি। ব্যাগে আরও ২৮টা ফুল রয়েছে। বিকেলের মধ্যে শেষ করার চেষ্টা করব। তা না হলে বাকিগুলো পাইকারি দোকানে বিক্রি করব।
হেলমেট মাথায় দিয়ে ফুল বিক্রি প্রসঙ্গে সিয়াম সাদিক বলেন, দুটি কারণে হেলমেট মাথায় দিয়ে ফুল বিক্রি করছি। একটি হলো নিজের পরিচয় আড়াল করা, আর অন্যটি হচ্ছে আজ বিশেষ দিনে অনেক বন্ধু-বান্ধবী হয়তো চিড়িয়াখানায় ঘুরতে আসবে। তাছাড়া বাইকার হওয়ার কারণে অনেক পরিচিত বাইকারের সঙ্গে দেখা হতে পারে। তবে পরিচিত কারো সঙ্গে দেখা হলে হয়তো কেউ কেউ কটু কথা বা মন্তব্য করতে পারে। এ কারণে নিজেকে আড়াল রাখার কৌশল হিসেবে মাথায় হেলমেট পরেছি। যদিও নিজের কাজে লজ্জা নাই, তারপরও বর্তমান সমাজ ব্যবস্থায় বিষয়টা সহজ ভাবে কেউ নেয় না। এজন্যই নিজেকে আড়াল করা।
Array