চলচ্চিত্রের সর্বোচ্চ সম্মাননা জাতীয় চলচ্চিত্র পুরস্কার। প্রতি বছর চলচ্চিত্র শিল্পে অবদান রাখায় এই সম্মাননা প্রদান করা হয়। প্রতি বছর ২৮টি ক্যাটাগরিতে পুরস্কার প্রদান করা হয়। তবে এ বছর ২৭ ক্যাটাগরিতে ৩৪টি পুরস্কার দেওয়া হবে। কারণ ‘শ্রেষ্ঠ নৃত্য পরিচালক’ ক্যাটাগরিতে কোনো প্রার্থী যোগ্য বিবেচিত হয়নি। সম্প্রতি জাতীয় পুরস্কার সংক্রান্ত মন্ত্রিসভা কমিটি চূড়ান্ত তালিকার অনুমোদন দিয়েছেন। এতে আজীবন চলচ্চিত্র পুরস্কার পাচ্ছেন যৌথভাবে ডলি জহুর এবং ইলিয়াস কাঞ্চন। আর এমন তালিকায় মুক্তিযুদ্ধ নিয়ে প্রথম সিনেমা ‘ওরা ১১ জন’ এর প্রধান চরিত্র নূতনের নাম না থাকায় ক্ষোভ প্রকাশ করেছেন একাধিক জাতীয় চলচ্চিত্র পুরস্কারজয়ী অভিনেত্রী অঞ্জনা।
জাতীয় চলচ্চিত্র পুরস্কারকে হাস্যকর উল্লেখ করলেন একসময়ের জনপ্রিয় অভিনেত্রী অঞ্জনা আজকালের খবরকে বলেন- এবারের জাতীয় চলচ্চিত্র পুরস্কার (২০২১) কয়েকটা ক্যাটাগরিতে সত্যিকার অর্থে হাস্যকর লেগেছে। এদেশে একজন নূতনের মতো অভিনেত্রীর অবদান, একজন জাবেদ ভাই যিনি নৃত্যের ধারাটাই বদলে দিয়েছিলেন। দেশ ছেড়ে বাংলাদেশের নাগরিকত্ব নিয়ে বাংলা সিনেমাকে ভালোবেসে থেকে গেছেন, একজন সূচরিতার মতো শক্তিমান অভিনেত্রীকেও বিবেচনায় আনা হয়নি- যাদের আপাদমস্তক সিনেমা ছাড়া অন্যকিছু নেই।
আমার মনে হয় জুরি বোর্ডে চলচ্চিত্রের মানুষগুলোর প্রাধান্য না থাকায় এমটা হয়েছে। তাই ভবিষ্যতে চলচ্চিত্র পুরস্কার বিবেচনায় অবশ্যই চলচ্চিত্রের মানুষগুলোকে রাখার জন্য আহ্বান জানাবো।
এক প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, ‘ডলি জহুর আপার অভিনয় নিয়ে কিছু বলবো না। তাকে আমি একজন নাট্যাভিনেত্রী হিসেবে শ্রদ্ধা করি। কিন্তু একজন চলচ্চিত্র অভিনেত্রী হিসেবে তাকে আমি সেই ক্যাটাগরিতে রাখতে পারবো না। ওনার সঙ্গে যাদের নাম বললাম ধরে ধরে তাদের অবদান বিচার করুন তাহলেই বুঝতে পারবেন আমি কি বলতে চেয়েছি। পুরো ইন্ডাস্ট্রির জন্য তাদের যে অবদান তা অনেকের নেই, তাদের দেখেই আজকালের ছেলেমেয়েরা অভিনয়ে আগ্রহী হয়েছে, অথচ প্রাপ্তির বিচারে তারাই আজ সেকেলে!’
এদিকে জাতীয় চলচ্চিত্র পুরস্কার নিয়ে কথা বলেছেন শক্তিমান অভিনেতা বাপ্পারাজ। বলেন, আগে পুরস্কার পেয়ে মানুষ খুশি হতো, এখন পুরস্কার দিয়ে খুশি হয়। এটাও তাই হয়েছে।
তিনি বলেন- ‘সত্যি বলতে চলচ্চিত্র এখন আর চলচ্চিত্রের মানুষের হাতে নেই। এই সত্যটা আমাদের মানতে হবে। বাইরের যারা ভালো কাজ করছে তাদের প্রশংসা করতে হবে। ভাবনার গণ্ডিটা চলচ্চিত্রের মানুষগুলোর যতটুকু বাড়ানো দরকার ছিলো সেটা কিন্তু হয়ে ওঠেনি বরং আরো কনজারভেটিভ হয়েছি আমরা। আর যে কারণে চলচ্চিত্রের মূলধারার দাপট কমেছে, এটা আমাদের মেনে নিতেই হবে। এই ভবিষ্যতবাণী আরো পাঁচ বছর আগেই বলেছিলাম, তখন অনেকেই আমাকে মেনে নিতে পারেননি। তাই আবার বলবো-চলচ্চিত্র নিয়ে ভাবনার পরিধি কেবল এফডিসিতে সীমাবদ্ধ না রেখে বড় পরিসরে ভাবুন। নিজেদের সীমাবদ্ধতা নিয়ে পারস্পারিক আলোচনা করুন, সকলেই উৎসাহীত হবে।’
যারা পুরস্কার পাচ্ছেন এবার-
নির্ভরযোগ্য সূত্রে জানা গেছে, চলচ্চিত্রে উল্লেখযোগ্য অবদান রাখায় যৌথভাবে আজীবন সম্মাননা পাচ্ছেন অভিনেত্রী ডলি জহুর ও অভিনেতা ইলিয়াস কাঞ্চন। শ্রেষ্ঠ চলচ্চিত্র যৌথভাবে মাতিয়া বানু শুকু (লাল মোরগের ঝুঁটি) ও রেজওয়ান শাহরিয়ার সুমিত (নোনাজলের কাব্য), শ্রেষ্ঠ স্বল্পদৈর্ঘ্য চলচ্চিত্র আকা রেজা গালিব (ধর), শ্রেষ্ঠ প্রামাণ্য চলচ্চিত্র কাওসার চৌধুরী (বধ্যভূমিতে একদিন), শ্রেষ্ঠ চলচ্চিত্র পরিচালক রেজওয়ান শাহরিয়ার সুমিত (নোনাজলের কাব্য), শ্রেষ্ঠ অভিনেতা যৌথভাবে মো. সিয়াম আহমেদ (মৃধা বনাম মৃধা) ও মীর সাব্বির মাহমুদ (রাতজাগা ফুল), শ্রেষ্ঠ অভিনেত্রী যৌথভাবে আজমেরী হক বাঁধন (রেহানা মরিয়ম নূর) ও তাসনোভা তামান্না (নোনাজলের কাব্য), শ্রেষ্ঠ অভিনেতা পাশর্ চরিত্রে এম ফজলুর রহমান বাবু (নোনাজলের কাব্য), শ্রেষ্ঠ অভিনেত্রী পাশর্ চরিত্রে শম্পা রেজা (পদ্মপুরাণ), শ্রেষ্ঠ অভিনেতা খল চরিত্রে মো. আবদুল মান্নান জয়রাজ (লাল মোরগের ঝুঁটি)।
শ্রেষ্ঠ অভিনেতা কৌতুক চরিত্রে প্রভাষ কুমার ভট্টাচার্য্য মিলন (মৃধা বনাম মৃধা), শ্রেষ্ঠ শিশুশিল্পী আফিয়া তাবাসসুম (রেহানা মরিয়ম নূর), শিশুশিল্পী শাখায় বিশেষ পুরস্কার জান্নাতুল মাওয়া ঝিলিক (যা হারিয়ে যায়), শ্রেষ্ঠ সংগীত পরিচালক সুজেয় শ্যাম (যৈবতী কন্যার মন), শ্রেষ্ঠ গায়ক কে. এম. আবদুল্লাহ-আল-মুর্তজা মুহিন (শোনাতে এসেছি আজ-পদ্মপুরাণ), শ্রেষ্ঠ গায়িকা চন্দনা মজুমদার (দেখলে ছবি পাগল হবি-পদ্মপুরাণ), শ্রেষ্ঠ গীতিকার প্রয়াত গাজী মাজহারুল আনোয়ার (অন্তরে অন্তর জ্বালা-যৈবতী কন্যার মন), শ্রেষ্ঠ সুরকার সুজেয় শ্যাম (অন্তরে অন্তর জ্বালা-যৈবতী কন্যার মন), শ্রেষ্ঠ কাহিনিকার রেজওয়ান শাহরিয়ার সুমিত (নোনাজলের কাব্য), শ্রেষ্ঠ চিত্রনাট্যকার নূরুল আলম আতিক (লাল মোরগের ঝুঁটি), শ্রেষ্ঠ সংলাপ রচয়িতা তৌকীর আহমেদ (স্ফুলিঙ্গ)।
শ্রেষ্ঠ সম্পাদক সামির আহমেদ (লাল মোরগের ঝুঁটি), শ্রেষ্ঠ শিল্প নির্দেশক শিহাব নূরুন নবী (নোনাজলের কাব্য), শ্রেষ্ঠ চিত্রগ্রাহক দলগত-সৈয়দ কাশেফ শাহবাজি, সুমন কুমার সরকার, মাজহারুল ইসলাম রাজু (লাল মোরগের ঝুঁটি), শ্রেষ্ঠ শব্দগ্রাহক শৈব তালুকদার (রেহানা মরিয়ম নূর), শ্রেষ্ঠ পোশাক ও সাজসজ্জা ইদিলা কাছরিন ফরিদ (নোনাজলের কাব্য)। শ্রেষ্ঠ মেক-আপম্যান দলগত- মো. ফারুখ, মো. ফরহাদ রেজা মিলন (লাল মোরগের ঝুঁটি)।
Array