বাংলাদেশ সেনাবাহিনী প্রধান জেনারেল এস এম শফিউদ্দিন আহমেদ বলেছেন, আমাদের ফরেন পলিসি মেনেই ডিফেন্স পলিসি হয়েছে। সেজন্য আমরা আগ্রাসী আর্মি না। তবে আমাদের সঙ্গে কেউ আগ্রাসী ভাব নিয়ে আসলে আমরা তার সঠিক জবাব দিতে পারবো। সেটার পুরো সক্ষমতা অজর্ন করতে পারবো ফোর্সেস গোল ২০৩০ এর মাধ্যমে। ওই কাজগুলো সঠিক এবং সুন্দরভাবে করতেই প্রশিক্ষণকে সর্বাধিক গুরুত্ব দেওয়া হচ্ছে। বাংলাদেশ সেনাবাহিনী আধুনিকায়নের মাধ্যমে এগিয়ে যাচ্ছে।
মঙ্গলবার (০৩ জানুয়ারি) সাভারে মিলিটারি ফার্মে ফিল্ড হেডকোয়ার্টার পরিদর্শনকালে ‘ডিফেন্স জার্নালিস্ট অ্যাসোসিয়েশন অব বাংলাদেশের (ডিজাব) সাংবাদিকদের উদ্দেশ্যে সেনাপ্রধান এ কথা বলেন।
এ সময় উপস্থিত ছিলেন- সেনাবাহিনীর চিফ অফ জেনারেল স্টাফ লেফটেন্যান্ট জেনারেল আতাউল হাকিম সারোয়ার হাসান, কোয়ার্টার মাস্টার জেনারেল জেনারেল মো. সাইফুল আলম, আর্মি ট্রেনিং এন্ড ডগট্রিন কমান্ডের জিওসি লেফটেন্যান্ট জেনারেল আহম্মদ তাবরেজ শামস চৌধুরী, ইঞ্জিনিয়ার ইন চিফ মেজর জেনারেল মুহাম্মদ যুবায়ের সালেহীন, সামরিক সচিব মেজর জেনারেল খান ফিরোজ আহমেদ, কনসালটেন্ট জেনারেল এডহক কন্সট্রাকশন সুপারভিশন কনসালটেন্ট মেজর জেনারেল এ কে এম রেজাউল মজিদ, সেনা সদরের ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তা এবং বিভিন্ন গণমাধ্যমে কর্মরত ‘ডিজাব’র বেশকিছু সদস্য।
এ সময় সেনাবাহিনীর সঙ্গে গণমাধ্যম কর্মীদের সম্পর্ক এবং প্রশিক্ষণের বিষয়ে ডিজাবের পক্ষ থেকেও বক্তব্যসহ বিভিন্ন বিষয়ে প্রশ্ন করেন সংগঠনের সাধারণ সম্পাদক আলমগীর হোসেন, যুগ্ম সম্পাদক তারিকুল ইসলাম মাসুম, নির্বাহী সদস্য আলী আসিফ শাওন এবং সদস্য কাজী সোহাগ।
সাংবাদিকদের উদ্দেশ্যে সেনাপ্রধান বলেন- দায়িত্ব নেওয়ার আগে আমি বলেছিলাম যে, সেনাবাহিনীতে আরও ‘ট্রান্সপারেন্সি’ বৃদ্ধি করবো। পাশাপাশি সেনাবাহিনীর সঙ্গে জনগণ ও গণমাধ্যম কর্মীদের দূরত্ব কমিয়ে আনবো। সেটাই করা হয়েছে। আমরা সব সময় সরকারের সিদ্ধান্তগুলো বাস্তবায়ন করি।
তিনি বলেন, সেনাবাহিনী অতীতের যে কোনো সময়ের চেয়ে এখন প্রশিক্ষণকে সর্বাধিক গুরুত্ব দিচ্ছে। এর প্রমাণস্বরূপ পরপর দুই বছর শীতকালীন প্রশিক্ষণ মহড়া সম্পন্ন হলো, যা আগে কখনোই হয়নি। ‘কঠিন প্রশিক্ষণ, সহজ যুদ্ধ’ এ বিষয়টি মাথায় রেখেই প্রশিক্ষণকে সর্বাধিক গুরুত্ব দেওয়া হচ্ছে। প্রধানমন্ত্রীও নির্দেশনা দিয়েছেন প্রশিক্ষণ কার্যক্রমকে গতিশীল করতে। প্রশিক্ষণের বিষয়ে কোনো ধরনের ছাড় না দিতেও বলেছেন তিনি। তবে আমরা সর্বোচ্চ চেষ্টা করি, যেখানেই প্রশিক্ষণ করতে হবে সেখানে যেনো কোনো ফসল নষ্ট না হয়। সেটা রক্ষার নির্দেশিনা রয়েছে। এরপরেও যদি কোনো ফসল নষ্ট হয় তার যথাযথ ক্ষতিপূরণ দেওয়া হয়। একই সঙ্গে প্রধানমন্ত্রীর নির্দেশনা অনুসারে প্রশিক্ষণ এলাকায় সাধারণ মানুষের জন্য মানবিক নানা ধরনের কার্যক্রমও চালিয়ে যাচ্ছি। ইতিমধ্যেই শীতবস্ত্র বিতরণ ও বিনামূল্যে চিকিৎসাসহ নানা কার্যক্রম পরিচালনা করা হয়েছে। শীতকালীন প্রশিক্ষণের পরে আগামী ৬ জানুয়ারি সকল সেনাসদস্য নিজ নিজ ব্যারাকে ফিরে যাবেন বলেও জানান তিনি।
সক্ষমতা অর্জন প্রসঙ্গে সেনাপ্রধান বলেন, বর্তমানে বিশ্বে যেসব যুদ্ধক্ষেত্র দেখা যাচ্ছে তাতে প্রতিনিয়তই রণাঙ্গনের কৌশল এবং সমরাস্ত্রের পরিবর্তন ঘটছে। যেমন, রাশিয়া-ইউক্রেন যুদ্ধে এখন যতটা ড্রোন ব্যবহার হচ্ছে, মিসাইল ব্যবহার হচ্ছে এসব বিষয়ে মাথায় রেখেই প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা করে তোলা হচ্ছে। বিশ্বের সঙ্গে তাল মিলিয়ে সব ধরনের প্রস্তুতি রাখছে সেনাবাহিনী।
শীতকালীন চলমান প্রশিক্ষণ সম্পর্কে তিনি বলেন, এবারের প্রশিক্ষণ সবদিক থেকেই প্রায় সফল বলতে পারি। প্রশিক্ষণ কেন্দ্রিক যা যা করার ছিল, সবই করা হয়েছে। তবে কিছু সীমাবদ্ধতা ছিল, যেগুলো শনাক্ত করে পরবর্তীতে কাজে লাগানোর অভিজ্ঞতা অর্জন করা হয়েছে।
জাতিসংঘ শান্তিরক্ষা মিশনে সেনা প্রেরণকারী দেশ হিসেবে বাংলাদেশ এক নম্বরে থাকার প্রসঙ্গে সেনাপ্রধান বলেন, পেশাদারিত্ব, সততা, নিষ্ঠা এবং কঠোর প্রশিক্ষণের কারণেই জাতিসংঘ শান্তিরক্ষা মিশনে বাংলাদেশ এক নম্বরে আছে। তিনি জানান, সেনা সদস্যদের ‘ইউএন’ মিশনে পাঠানোর ৯ মাস আগে তাদের আলাদা করে ফেলা হয়। যেখানে তারা মিশনে যাবেন, সেখানকার আবহাওয়ার সঙ্গে মিলিয়ে তাদের রাখা হয়। এরপর যাওয়ার তিন মাস আগে থেকে ‘বিপসটে’ বিশেষায়িত প্রশিক্ষণ দেয়া হয়।
সাংবাদিকদেরও কোনো কোর্সে অন্তর্ভুক্ত করা যায় কি না এমন প্রশ্নের জবাবে সেনাপ্রধান বলেন, এ বিষয়ে আমরা যথাযথ পদক্ষেপ নেব। পেশাগত উৎকর্ষতার জন্য আমরা ‘ক্যাপিস্টান’ কোর্সে অন্তর্ভুক্ত করতেও সংশ্লিষ্টদের বলবো।
Array