এসব বিষয়গুলোর মধ্যে অভিভাবকের অসচেতনতা, দারিদ্র্য, শিশুর যত্নের ঘাটতি, মেয়ে শিশুকে শিক্ষা না দেওয়ার প্রবণতা, বাল্যবিবাহ, শিশুশ্রম, অসুস্থতা, ভাষার সমস্যা, বিদ্যালয় ও শ্রেণিকক্ষের পরিবেশ, দুর্বল শিক্ষক ও শিক্ষাব্যবস্থা, শিক্ষাক্রমের অসংগতি, বিদ্যালয়ের সময়সূচি, বিদ্যালয়ের ভৌত সুবিধাদি, সহপাঠক্রমিক কার্যক্রম, বিদ্যালয়ের দূরত্ব, যাতায়াত ব্যবস্থা, শিক্ষক-অভিভাবক সম্পর্ক ইত্যাদি উল্লেখযোগ্য।
বৃহস্পতিবার কালবেলায় প্রকাশিত ‘মাধ্যমিকেই শিক্ষাজীবন শেষ সাড়ে ৫ লাখের’ শীর্ষক প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, চলতি বছরের এসএসসি পরীক্ষায় অংশ নিয়েছে ১৯ লাখ ৯৪ হাজার ১৩৭ জন। এর মধ্যে উত্তীর্ণ শিক্ষার্থী ১৭ লাখ ৪৩ হাজার ৬১৯। অকৃতকার্য হয়েছে ২ লাখ ৫০ হাজার ৫১৮ জন। উত্তীর্ণ শিক্ষার্থীদের মধ্যে প্রথম ধাপের জন্য নির্ধারিত সময়ে কলেজে ভর্তির আবেদন করেছে ১৩ লাখ ৪৬ হাজার ১৪৬।
বিশ্লেষকরা মনে করছেন, গত কয়েক বছরের ধারা অনুযায়ী দ্বিতীয় ও তৃতীয় ধাপে আরও কিছু আবেদন জমা হলেও কমপক্ষে তিন লাখ শিক্ষার্থী উচ্চ মাধ্যমিকে ভর্তি হবে না। এর সঙ্গে অকৃতকার্যদের যোগ করলে মাধ্যমিক পর্যায়েই শেষ হয়ে যাচ্ছে প্রায় সাড়ে পাঁচ লাখ শিক্ষার্থীর পড়াশোনা।
বিশ্লেষণে দেখা গেছে, আর্থিক অনটনের কারণে শিক্ষার ব্যয় নির্বাহে অক্ষমতাসহ বিভিন্ন কারণে প্রতিবছর এসএসসি পাস করা শিক্ষার্থীদের মধ্যে প্রায় ২০ শতাংশ পড়াশোনার ইতি টানে। ২০২০ সালের ফল ও একাদশে ভর্তি বিশ্লেষণ করে দেখা গেছে, সে বছর এসএসসিতে মোট পরীক্ষার্থী ছিল ২০ লাখ ৪০ হাজার ২৮। এর মধ্যে পাস করেছে ১৬ লাখ ৯০ হাজার ৫২৩ জন। একাদশ শ্রেণিতে ভর্তি হয়েছিল ১৪ লাখ ৮৭ হাজার ২৩৯ জন। ভর্তি হয়নি ২ লাখ ৩ হাজার ২৮৪ জন। অর্থাৎ, ১২ শতাংশ শিক্ষার্থী এসএসসি পাসের পর পরবর্তী শ্রেণিতে ভর্তি হয়নি। এই শিক্ষার্থীরা এখন কোথায়, সে তথ্য নেই কারও কাছে।
ধারণা করা হচ্ছে, তারা লেখাপড়া ছেড়ে কর্মজীবনে প্রবেশ করেছে। শুধু তাই নয়, ১৪ লাখ শিক্ষার্থী উচ্চ মাধ্যমিকে ভর্তি হলেও, এবারের এইচএসসি পরীক্ষায় অংশ নিয়েছে ১২ লাখ ৩ হাজার ৪০৭ জন। অর্থাৎ, ২ লাখ ৮৩ হাজার ৮৩২ শিক্ষার্থীর শিক্ষাজীবন শেষ হচ্ছে এইচএসসি পর্যায়েই।
আমরা মনে করি, এসএসসি পাস করার পরও যেসব শিক্ষার্থী একাদশ শ্রেণিতে ভর্তি হচ্ছে না, তাদের বিষয়ে সুনির্দিষ্ট তথ্য সংগ্রহের ব্যবস্থা থাকতে হবে। কে কী কারণে পড়াশোনা ছাড়ছে, তা চিহ্নিত করতে হবে। আর্থিক সংকটের কারণে যাতে কারও শিক্ষাজীবন শেষ না হয়ে যায়, সে বিষয়ে রাষ্ট্রকে পদক্ষেপ নিতে হবে। এককথায় বলা যায়, শিক্ষার পরিমাণগত ও গুণগতমান উন্নয়ন এবং ঝরে পড়া রোধে রাষ্ট্রের সব শক্তি ও সামর্থ্য কাজে লাগাতে হবে। আর এটা করা হলে ঝরে পড়া অনেকাংশে কমে যাবে।