প্রতিবছরের আশ্বিন মাস থেকে শুরু করে চৈত্র মাস পর্যন্ত এ শুঁটকি উৎপাদন ও বিক্রি চলছে বহু যুগ ধরে। এক সময় উপজেলার সদর, নোয়াগাঁও, নোয়াগড়, বিরাট, কোদালিয়া, বদলপুরে শুঁটকি প্রক্রিয়াজাতকরণের অসংখ্য ডাঙ্গা (চাতাল) থাকলেও মাছ সংকটের কারণে হাতেগোনা কয়েকটি ছাড়া বন্ধ হয়েছে সব ডাঙ্গা। ডাঙ্গায় আগে দেশীয় প্রজাতির পুঁটি, চিংড়ি, কাকিয়া, শোল, গজার, টাকি, বাইম, ট্যাংরাসহ বিভিন্ন প্রজাতির শুঁটকি তৈরি করা হলেও এখন মাছের অভাবে পুঁটি ছাড়া আর তেমন কোনো মাছের শুঁটকি তৈরি হচ্ছে না।
উৎপাদনকারীরা বলছেন, মাছের সংকট এবং মাছের মূল্যবৃদ্ধি এবং স্থানীয় মৎস্য বিভাগের কোনো ধরনের সহযোগিতা না থাকায় লোকসানে অনেকটাই মুখ থুবড়ে দিন দিন বিলুপ্তির পথে এ শুঁটকি উৎপাদন। অনেকেই এ পেশা ছেড়ে যোগ দিচ্ছেন নতুন পেশায়।
উপজেলা মৎস্য অফিস বলছে, গত বছরের সাতটি চাতালের হিসাব থাকলেও চলতি বছরে কয়টি চাতাল রয়েছে কিংবা গত বছর এবং চলতি বছরে উপজেলায় কী পরিমাণ শুঁটকি উৎপাদন হয়েছে, তার কোনো তথ্য নেই মৎস্য অফিসে।
উপজেলার বদলপুর ইউনিয়নের দীঘলবাঘের শুঁটকি উৎপাদনকারী গণেশ দাস কালবেলাকে বলেন, গত এক যুগের বেশি সময় ধরে শুঁটকি উৎপাদন করছি। আগে মৌসুমে প্রতিদিন বিভিন্ন ধরনের প্রায় ১ হাজার ২০০ থেকে ১ হাজার ৬০০ কেজি মাছ কিনে শুঁটকি বানাতাম। কিন্তু গত বছর এবং চলতি বছরে গড়ে প্রতিদিন মাত্র ১০০ থেকে ২০০ কেজি মাছ পাচ্ছি। তা-ও সব ধরনের মাছ পাই না। শুধু পুঁটি ও ছোট মাছ পাই।
প্রতাপ চন্দ্র দাস জানান, গত বছরও এ এলাকায় ছয়টি চাতাল ছিল। কিন্তু মাছের সংকটে দুটি চাতল বন্ধ হয়ে গেছে। ভাবছি আগামী বছর থেকে আর চাতাল করব না। কারণ, মাছ পাওয়া যায় না। ভালো মাছ যা আসে, তা বেশি দামে আড়তদার নিয়ে যায়। বেশি দামে মাছ কিনে শুঁটকি তৈরি করলেও তা বেশি দামে বিক্রি করা যায় না।
জেলা মৎস্য কর্মকর্তা নজরুল ইসলাম জানান, বিভিন্ন কারণে নদনদীতে মাছের উৎপাদন কমে গেছে। যার কারণে জেলায় শুঁটকি উৎপাদন কমছে। তবে যারা এখনো শুঁটকি উৎপাদনে জড়িত, মৎস্য অধিদপ্তর থেকে তাদের প্রশিক্ষণ দেওয়া হচ্ছে।