উলিপুর (কুড়িগ্রাম) প্রতিনিধিঃ
কুড়িগ্রামের উলিপুর পৌর শহরের মধ্যপাড়া এলাকায় পারিবারিক জমি দখলকে কেন্দ্র করে সংঘর্ষ, নারী সদস্যদের ওপর হামলা ও মিথ্যা মামলার পাল্টাপাল্টি অভিযোগ উঠেছে। ঘটনার মূল অভিযুক্ত হিসেবে স্থানীয় বাসিন্দা আব্দুল মালেকের বিরুদ্ধে গুরুতর অভিযোগ তুলেছেন তারই ভাই আব্দুল খালেক।
ভুক্তভোগী পরিবারের দাবি, গত ১৩ আগস্ট বিকেলে পুরুষ সদস্যদের অনুপস্থিতির সুযোগে আব্দুল মালেক ভাড়াটে সন্ত্রাসী নিয়ে জমি দখলের চেষ্টা করে। বাধা দিলে দেশীয় অস্ত্র দিয়ে হামলা চালিয়ে নারীসহ অন্তত ৩ জনকে গুরুতর আহত করা হয়। এ ঘটনায় উলিপুর থানায় মামলা হয়েছে এবং পরে পাল্টা মামলা দায়ের করা হয়েছে ভুক্তভোগীদের বিরুদ্ধেই।
অভিযোগে বলা হয়, দীর্ঘদিন ধরে আব্দুল খালেকের নিজের নামে থাকা বাড়ির সামনের একটি পুকুর দখল করে রেখেছিলেন তার বড় ভাই আব্দুল মালেক। পুকুরটি ফেরত চাওয়ায় মালেক ক্ষিপ্ত হন। স্থানীয়ভাবে মীমাংসার চেষ্টা ব্যর্থ হলে, গত ১৩ আগস্ট বিকেলে ভাড়াটে লোকজন নিয়ে জমিতে টিন দিয়ে ঘেরা দেয়ার চেষ্টা করেন মালেক। এ সময় আব্দুল খালেকের স্ত্রী রওশন আরা বেগম ও মেয়েরা বাধা দিলে তারা হামলার শিকার হন।
হামলায় ধারালো দা’র কোপে রওশন আরা বেগমের মাথায় ও গালে গুরুতর রক্তাক্ত জখম হয়। মেয়ে খাদিজা আক্তারের হাত ভেঙে যায় এবং ছোট মেয়ে সালমা বেগমের কোলে থাকা ১৮ মাসের শিশুও হামলার শিকার হয়। সালমা বেগমের শ্লীলতাহানির অভিযোগও তোলা হয়েছে।
এ ঘটনায় আব্দুল খালেক বাদী হয়ে ৬ জনের নাম উল্লেখ ও ১০-১২ জন অজ্ঞাতনামা ব্যক্তির বিরুদ্ধে উলিপুর থানায় মামলা দায়ের করেন। মামলা নং:২৩/ ১৯৪ অপরদিকে, আব্দুল মালেকের স্ত্রী নাজমা বেগম কুড়িগ্রাম আদালতের মাধ্যমে পাল্টা মামলা দায়ের করেন, যেখানে ভুক্তভোগী পরিবারের ৯ জন সদস্যকে অভিযুক্ত করা হয়। অভিযোগ উঠেছে, এই মামলায় এমন ব্যক্তিদের স্বাক্ষী বানানো হয়েছে, যারা ঘটনার সময় ঘটনাস্থলে ছিলেন না।
প্রাপ্ত তথ্যে জানা যায়, মামলার ১, ২ ও ৩ নম্বর স্বাক্ষী যথাক্রমে তাইজুল ইসলাম, আব্দুর রহিম ও শিমুল ইসলাম সাংবাদিকদের উপস্থিতিতে সরাসরি অভিযোগ করে বলেন, তারা কিছুই জানেন না এবং ঘটনার সময় উপস্থিতও ছিলেন না।
তাইজুল ইসলাম বলেন,
“আমি বাজারে ছিলাম, হঠাৎ শুনি রিয়াজের বোনকে হাসপাতালে নেয়া হচ্ছে। পরে জানতে পারি আমাকে মামলার স্বাক্ষী বানানো হয়েছে।”
আব্দুর রহিম বলেন,
“ঘটনার সময় আমি নিজের দোকানে ছিলাম। কিছুই জানি না। অথচ মামলায় আমার নাম দেওয়া হয়েছে।”
শিমুল ইসলাম বলেন, “আমি তখন ঢাকায় ছিলাম। কিছুই জানি না। তবুও মামলায় আমাকে জড়ানো হয়েছে।”
অভিযুক্ত নাজমা বেগম তার বিরুদ্ধে ওঠা অভিযোগ অস্বীকার করে বলেন, “আমার বিরুদ্ধে যে অভিযোগ করা হয়েছে, তা সম্পূর্ণ মিথ্যা ও ভিত্তিহীন।”
উলিপুর থানার অফিসার ইনচার্জ (ওসি) মো. জিল্লুর রহমান জানান,
“আব্দুল খালেকের দায়ের করা অভিযোগের ভিত্তিতে ৬ জন নামীয় ও ১০/১২ জন অজ্ঞাতনামা আসামির বিরুদ্ধে মামলা রেকর্ড করা হয়েছে। অভিযুক্তদের গ্রেফতারে অভিযান চলছে।”
তিনি আরও জানান,“অপরদিকে, আদালতের মাধ্যমে দায়ের করা মামলাটিও তদন্তাধীন রয়েছে। তদন্তের ভিত্তিতেই পরবর্তী পদক্ষেপ গ্রহণ করা হবে।”