চাঁপাইনবাবগঞ্জের ভোলাহাট উপজেলায় সুলতানা (২৭) নামের এক গৃহবধূ চিঠি লিখে আত্মহত্যা করেছেন। বুধবার (২১ মে) দুপুরে চাঁপাইনবাবগঞ্জের ভোলাহাট উপজেলার গোহালবাড়ী ইউনিয়নের খালে আলমপুর গ্রামে বাবার বাড়িতে ওড়না পেঁচিয়ে আত্মহত্যার ঘটনা ঘটে।
নিহত সুলতানা ওই গ্রামের হাফিজুল ইসলামের মেয়ে। ১৬ বছর আগে বিয়ে হয় একই ইউনিয়নের বজরাটেক কলোনী গ্রামের ইদারুল ইসলামের সাথে। দাম্পত্য জীবনে তাদের ছোট দুটি সন্তান আছে।
পারিবারিক সূত্রে জানা গেছে, বিয়ের পর থেকেই সুলতানা স্বামী ও শ্বশুর-শাশুড়ির দ্বারা শারীরিক ও মানসিক নির্যাতনের শিকার হয়ে আসছিলেন। এ অবস্থায় নির্যাতন সহ্য করতে না পেরে গত মঙ্গলবার (২০ মে) সন্ধ্যায় তিনি দুই সন্তানকে নিয়ে বাবার বাড়িতে চলে আসেন।
বুধবার (২১ মে) সকালে বাবা কাজে এবং মা ধান শুকাতে যাওয়াতে সুলতানা বাড়িতে একা ছিলেন। দুপুরের সময় আকাশে মেঘ উঠলে ধান উঠানোর জন্য তাকে ডাকেন। কিন্তু সাড়া না পেয়ে সন্দেহ হলে পরিবারের লোকজন দরজা ভেঙে ঘরে ঢুকে তার ঝুলন্ত দেহ দেখতে পান। পরে ঝুলন্ত দেহ নামিয়ে মেডিকেল যাওয়ার পথে মারা যান।
ঘটনার পর সুলতানার ঘর থেকে একটি চিঠি উদ্ধার করা হয়। চিঠিতে তিনি স্বামী ও শ্বশুর-শাশুড়ির বিরম্নদ্ধে নির্যাতনের অভিযোগ তোলেন এবং আত্মহত্যার জন্য তাদেরকে দায়ী করেন।
চিঠিতে সুলতানা লিখেন, বিসমিল্লাহির রহমানির রহীম। আশা করি সবাই বুঝবেন। আমি এতটাই অসহায় হলাম যে, আমাকে আমার স্বামী শশুর শাশুরির কারণে এ কাজটি করতে বাধ্য হইলাম। তারা আমাকে কোনো ভাবেই বাঁচতে দিলো না। অনেক স্বপ্ন ছিল আমার। আমার গায়ে এমন ভাবে সাদা মনে কাঁদা দাঁগ লাগিয়ে দিল যে আমি সয্য করতে পারলাম না। তাও আবার রমজান মাস থেকে আমার স্বামী এবং শশুর শাশুরি বলে, আমি নাকি হিজাবের তলে বেশ্যা গিরি করে খাই। সবার সামনে বলে। তাই বলে ছিলাম যে প্রমান না দিলে থানায় ভরবো তোমাদের। এটাতে তাঁরা আমার ওপর খেপে বাঁচতে দিল না।
তিনি আরো লিখেন, অনেক অপমান লাঞ্ছনা আর আমার বাবাকে অনেক হেনস্থা হতে হয়েছে গত কালকে, কিছুতেই মানতে পারলো না। আল্লাহ যেন আমাকে মাফ করে। আর আপনারা সবাই। বিশেষ করে আমার দুই বাচ্চা। অনেক আদরের আমার অনেক আশা তাদেরকে নিয়ে। হতে দিলনা তারা। আমি শুধু একটা ঘর চেয়ে ছিলাম এতদিন। কিন্তু স্বপ্নই থেকে গেল ঘর পেলাম না। আর আমার বাবার অপমান সয্য করার মত না। আমার আদরের দুই সন্তানকে সবাই আগলে রাখবেন যতটুকু পারবেন।
তিনি লিখেন, আমি সব কিছু লুকিয়ে আনছিলাম বেশ জানেন আপনারা, আমার স্বামীর কাছে ছুটে যাওয়ার জন্য। প্রানের স্বামী আমার, জঘন্য ভাবে আপনি আমাকে ছাড়ানোর এবং তারানোর অনেক চেষ্টা করেছেন বা করলো তারা। অনেক অনেক বদনাম দিল আমাকে আর আমার বাবাকে জঘন্য ভাবে তাচ্ছিল্য ভাবে। শুধুই বলতো মারতো যে, মরে যাসনে কেন। এখুনি বাড়ি বানাবো, কারণ সে আমাকে চাইতো না আমার জন্য করত না। কিন্তু আমি না খেয়ে ছেড়া-ছেপনা পুরানা জিনিস পরে ঘুরতাম আর অনেক কিছু করতাম। গয়না বা কাপর চোপর পরে বেড়াব তখন যেন না অভাব হয়। কিন্তু কার জন্যই বা করলাম। সে না বুঝে দাগ দিল আমাকে।
আত্মহত্যার খবর পেয়ে সন্ধ্যা ৬ টার দিকে ভোলাহাট থানা পুলিশ ঘটনাস্থলে যান। এসময় অতিরিক্ত পুলিশ সুপার (গোমস্তাপুর সার্কেল) মো. তারেক হাসান ও ভোলাহাট থানার অফিসার ইনচার্জ (ওসি) মো. শহিদুল ইসলাম ঘটনাস্থল পরিদর্শন করেন।
অফিসার ইনচার্জ (ওসি) মো. শহিদুল ইসলাম বলেন, মরদেহর সুরতহাল রিপোর্ট তৈরি করা হয়েছে। লাশ ময়নাতদন্তের জন্য চাঁপাইনবাবগঞ্জ মর্গে প্রেরণ করা হবে।
Array