অবৈধ সম্পদ অর্জনের অভিযোগে একজন পুলিশের কনস্টেবলের বিরুদ্ধে মামলা করেছে দুর্নীতি দমন কমিশন (দুদক)। মেহেদী হাসান নামের এই পুলিশ কনস্টেবলের অবৈধ সম্পদ বৈধ দেখাতে ৪৮টি নন-জুডিসিয়াল স্ট্যাম্পের মাধ্যমে জমি বন্ধক রেখে ১৮ লাখ ও ৩৩ লাখ টাকা ঋণ গ্রহণ দেখান। তবে দুদক অনুসন্ধান করে দেখেছে, জমি বন্ধক ও ঋণচুক্তির স্ট্যাম্পগুলো নকল।
সোমবার (২০ মে) দুপুরে দুদকের সমন্বিত রাজশাহী কার্যালয়ের সহকারী পরিচালক আমির হোসাইন এ মামলাটি দায়ের করেন। পুলিশ কনস্টেবল মেহেদী নাটোর জেলা পুলিশ সুপারের কার্যালয়ে কর্মরত। তার বাড়ি জয়পুরহাটের আক্কেলপুর উপজেলার চকবিজলী গ্রামে। দুদক সমন্বিত রাজশাহী কার্যালয়ের সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে এ মামলার তথ্য জানানো হয়।
মামলার অভিযোগে বলা হয়েছে, আয় বহির্ভূত সম্পদ অর্জনের অভিযোগ পেলে পুলিশ কনস্টেবল মেহেদীকে তার সম্পদ বিবরণী দাখিলের জন্য বলা হয়। তখন মেহেদী হাসান ৪৮টি স্ট্যাম্পে লিখিত ও স্বাক্ষরিত চুক্তিসংবলিত রেকর্ডপত্র দাখিল করেন। এসব স্ট্যাম্পে আটজনের সঙ্গে জমি বন্ধক রাখা বাবদ ১৮ লাখ টাকা এবং আরও ৮ জনের কাছ থেকে ৩৩ লাখ টাকা ঋণ গ্রহণ দেখান। স্ট্যাম্পগুলো ২০২০ সালের ৩০ সেপ্টেম্বর জয়পুরহাটের স্ট্যাম্প ভেন্ডার সাইদুল ইসলাম বিক্রি করেছেন বলে সিল ও স্বাক্ষর রয়েছে।
তবে দুদক জয়পুরহাট জেলা প্রশাসকের কার্যালয়ে যাচাই করে দেখেছে, ট্রেজারি শাখা থেকে এসব স্ট্যাম্পের মধ্যে ৪২টি ২০২১ সালের ২ ফেব্রুয়ারি, ৬ সেপ্টেম্বর ভেন্ডার সানোয়ার হোসেন এবং ৬টি ২০১৭ সালের ২২ জুন শহীদুল ইসলাম নামের এক ভেন্ডারের কাছে সরবরাহ করা হয়। সানোয়ার হোসেনের বক্তব্য ও তার বিক্রয় রেজিস্ট্রার যাচাই করে মেহেদী হাসানের দাখিল করা স্ট্যাম্পগুলোর অস্তিত্ব পাওয়া যায়নি।
দুদকের অনুসন্ধানের তথ্য অনুযায়ী, মেহেদী হাসানের নামে মোট ৯১ লাখ ২৪ হাজার ২৫৪ টাকার অস্থাবর ও স্থাবর সম্পদ পাওয়া যায়। তার ঋণের পরিমাণ ৯ লাখ ৩০ হাজার ৮৭০ টাকা। ঋণ বাদে অর্জিত সম্পদের নিট মূল্য ৮১ লাখ ৯৩ হাজার ৩৮৪ টাকা। মেহেদীর বক্তব্য অনুযায়ী, তিনি ১৩ লাখ ৭৭ হাজার ৩২৩ টাকা পারিবারিক ব্যয় করেছেন। ঋণের কিস্তির সুদ পরিশোধ করেছেন ১ লাখ ১৩ হাজার ৩৮৭ টাকা। ফলে তার মোট সম্পদ পাওয়া যায় ৯৬ লাখ ৮৪ হাজার ৯৪ টাকার। আর তার গ্রহণযোগ্য আয়ের পরিমাণ ৩৪ লাখ ৭৫ হাজার ৬৪ টাকা। ফলে তিনি অসৎ উপায়ে আয় বহির্ভূত ৬২ লাখ ৯ হাজার ৩০ টাকা মূল্যের সম্পদের মালিকানা অর্জন করেছেন। অবৈধ এ সম্পদ অর্জন ও ভোগ দখল করে তিনি শাস্তিযোগ্য অপরাধ করেছেন।
এ বিষয়ে দুদকের সমন্বিত রাজশাহী কার্যালয়ের সহকারী পরিচালক আমির হোসাইন বলেন, নকল স্ট্যাম্পে মিথ্যা বন্ধকিপত্র দাখিল। আয়ের সঙ্গে অসংগতিপূর্ণ সম্পদের মালিকানা অর্জন করার অপরাধে কনস্টেবল মেহেদী হাসানের বিরুদ্ধে দুর্নীতি দমন কমিশন আইন ২০০৪-এর ২৬ (২) ও ২৭ (১) ধারায় মামলা করা হয়েছে।
Array