এম.মোরছালিন, বরগুনা প্রতিনিধি: এমপিওভুক্ত মাদ্রাসাগুলোতে এনটিআরসিএ বর্হিভূত পদের নিয়োগে স্বচ্ছতা আনতে মাদ্রাসা অধিদপ্তর কর্তৃক ২০২২ সনের ০৫ ডিসেম্বর সংশ্লিষ্ট মাদ্রাসায় নিয়োগ কার্যক্রম আয়োজনের জন্য চিঠি ইস্যু করা হয়।
চিঠিতে সংশ্লিষ্ট মাদ্রাসায় নিয়োগ কার্যক্রমের ব্যাখায় নিয়োগে স্বচ্ছতা নিশ্চিতকরণের লক্ষ্যে এমন সিদ্ধান্ত হওয়াই যুক্তিযুক্ত বলে উল্লেখ করাও হয়। আবার যৌক্তিক কারণ থাকলে মাদ্রাসা অধিদপ্তরের মহাপরিচালকের পূর্বানুমতি ক্রমে স্থান পরিবর্তন করে পরীক্ষা নেয়া যাবে বলেও উল্লেখ রয়েছে।
বরগুনা সদর উপজেলার নলী চরকগাছিয়া এতিম মঞ্জিল আলিম মাদ্রাসায় ৫টি পদের নিয়োগ পরীক্ষা আগামী ০১ মে বরগুনা সরকারি কলেজে অনুষ্ঠিত হবে মর্মে নিশ্চিত করেন প্রতিষ্ঠানের অধ্যক্ষ মোঃ বনি আমিন। নিয়োগ সংক্রান্ত বিষয় অভিযোগ ওঠে অফিস সহকারী কাম-হিসাব সহকারী (০১টি) পদে রফিকুল ইসলাম, অফিস সহকারী কাম-কম্পিউটার অপারেটর (০২টি) পদে রাব্বানী ও আল আমিনকে অর্থের বিনিময়ে নিয়োগ দিচ্ছে। এমন অভিযোগে অন্য আবেদনকারীরা অধ্যক্ষকে নানা প্রশ্ন করলে তিনি পরীক্ষার স্থান পরিবর্তনের নানা ফন্দি আটেন। গত ২৭ এপ্রিল ওই মাদ্রাসার একজন সহকারী শিক্ষক মাদ্রাসা অধিদপ্তরের মহা-পরিচালক বরাবর অর্থ লেনদেনের বিষয়ে একটি অভিযোগ করেন।
অভিযোগে উল্লেখ করেন, মহা-পরিচালকের মনোনিত প্রতিনিধি এবং প্রতিষ্ঠানের অধ্যক্ষের যোগসাজসে ১১ লাখ টাকার বিনিময়ে নিয়োগ কার্যক্রম হচ্ছে। অভিযোগে বলা হয় ৫টি কর্মচারী পদে ১১ লাখ টাকার চুক্তিতে নগদ ৬ লাখ টাকা মাদ্রাসা অধিদপ্তরের উপ-পরিচালক (অর্থ) আবুল বাশার অধ্যক্ষের নিকট থেকে গ্রহণ করেন এবং পরীক্ষার প্রশ্নপত্র ইতিমধ্যে পছন্দের প্রার্থীদের দিয়ে দেয়া হয়েছে। প্রার্থীদের নিকট থেকে গোপনে টাকা নিয়ে নিয়োগ দেয়া এবং ডিজির প্রতিনিধিকে ৬ লাখ টাকা দিয়ে ম্যানেজ করার বিষয়ে অডিও কল রেকর্ডের কথাও অভিযোগে উল্লেখ করা হয়। এসব কারণে স্ব-প্রতিষ্ঠানে নিয়োগ কার্যক্রম করতে রাজি নন অধ্যক্ষ।
অফিস সহকারী কাম-হিসাব সহকারী পদে নিয়োগের জন্য ১১ লাখ টাকা চুক্তিতে ৯ লাখ টাকা দিয়েছেন রফিকুল ইসলাম। তার স্ত্রীর একটি অডিও কলরেকর্ডে এসব তথ্য পাওয়া গেছে। রফিকুলের স্ত্রী অপর প্রান্তে থাকা ব্যক্তিকে বলেন, অধ্যক্ষ বলেছেন ১১ লাখ টাকা চুক্তিতে ৬ লাখ ডিজির প্রতিনিধিকে ঢাকা গিয়ে দেয়া হয়েছে। বাকি টাকা নিয়োগ পরীক্ষার দিন দিতে হবে।
অভিযোগের বিষয় সহকারী শিক্ষক মোঃ কাওছার এর নিকট জানতে চাইলে তিনি বলেন, নিয়োগে টাকা লেনদেন হচ্ছে। অধ্যক্ষ টাকা নিয়ে অযোগ্যদের নিয়োগ দিচ্ছে এমন খবর পেয়ে আমি অভিযোগ করি। অফিস সহকারী কাম-কম্পিউটার অপারেটর পদে দক্ষ কেউ নিয়োগ না পেলে প্রতিষ্ঠানের ক্ষতি হবে। সেই বিবেচনায় আমি অভিযোগ করেছি।
খোজ নিয়ে জানা যায়, প্রতিষ্ঠানটিতে দীর্ঘদিন যাবৎ এই পদ ৫টিতে নিয়োগের জন্য অধ্যক্ষ কার্যক্রম করে আসছে। একাধিকবার পত্রিকায় বিজ্ঞপ্তি দেয়া হয়েছে। বারবারই কোননা কোন অভিযোগে পরিক্ষা স্থগিত হয়েছে। প্রতিষ্ঠানের সভাপতির ছেলে চাকরির প্রার্থী হওয়ায় তিনি নিয়োগ বোর্ডের সদস্য থাকতে পারছেন না। তাই অভিভাবক সদস্য আঃ মজিদ মোল্লাকে নিয়োগ কার্যক্রম চলাকালীন সময় সভাপতি পদে দায়িত্ব অর্পন করা হয়েছে। অভিযোগ রয়েছে আঃ মজিদ মোল্লার চাচাত নাতী/নাতনী পড়াশুনা করে মাদ্রাসাটিতে। সেই সুবাধে তিনি অভিভাবক সদস্য।
অভিভাবক সদস্য ও নিয়োগ সংক্রান্ত কমিটির সভাপতি আঃ মজিদ মোল্লার নিকট জানতে চাই ‘তার ছেলে নাকি মেয়ে মাদ্রাসায় লেখাপড়া করে?’ তিনি বলেন, এতকথা বলার সময় নাই। আমি একজায়গায় মিটিং এ আছি, এত কথা বলার সময় নাই। প্রশ্ন রাখি ‘নিয়োগ বোর্ডের আপনি সভাপতির দায়িত্ব পালন করছেন?’ তিনি বলেন, তাও আমি বলতে পারি না, বলে ফোন কেটে দেন।
নিয়োগ সংক্রান্ত যাচাই বাছাই কমিটির সদস্য ও ম্যানেজিং কমিটির বিদ্যুৎসাহী সদস্য আঃ মজিদ জানান, বাছাই কার্যক্রমের কোন কাজ করা হয়নি। তবে মাওলানা করিমকে দিয়ে মাসখানে আগে আমার নিকট থেকে রেজুলেশনসহ বেশ কয়েকটি কাগজে স্বাক্ষর নেয়া হয়েছে। আমার পুত্রবধু কম্পিউটার অপারেটর পদে আবেদন করেছে। তাকে এখন পর্যন্ত প্রবেশপত্র দেয়া হয়নি। প্রতিষ্ঠানে পরীক্ষা নেয়ার পরিবেশ সম্পর্কে জানতে চাইলে তিনি বলেন, প্রতিষ্ঠানে পরীক্ষার নেয়ার যথেষ্ট সুযোগ রয়েছে।
এসব অভিযোগের বিষয় জানতে চাইলে প্রতিষ্ঠানের অধ্যক্ষ মোঃ বনি আমিন বলেন, এসব অভিযোগ সব মিথ্যা। পরীক্ষা স্থান পরিবর্তনের কারণ জানতে চাইলে তিনি বলেন, প্রতিষ্ঠানের একটি টিনসেট রুমের কাজ চলে। ৭৩ জন পরীক্ষার্থী প্রতিষ্ঠানে বসানো সম্ভব নয় বিধায় আইনগতভাবে পরীক্ষার স্থান পরিবর্তন করা হয়েছে। বরগুনা সদর উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তার মাধ্যমে মহা-পরিচালক বরাবরে লিখিত দিয়ে স্থান পরিবর্তন করা হয়েছে।
এ বিষয়ে বরগুনা সদর উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা মোঃ শামিম মিঞা বলেন, প্রতিষ্ঠানের পর্যাপ্ত স্থান সংকট ও নিয়োগকালীন সময়ে বিশৃঙ্খলা হতে পারে মর্মে উল্লেখ করে আমার কাছে আবেদন দিলে আমি সুপারিশসহ মহা-পরিচালক বরাবর প্রেরণ করি। অনুমতি দিয়েছে কিনা সেই বিষয়ে আমার জানা নেই।
অর্থ লেনদেনের অভিযোগের বিষয়ে মাদ্রাসা অধিদপ্তরের মহা-পরিচালকের প্রতিনিধি ও মাদ্রাসা অধিদপ্তরের উপ-পরিচালক (অর্থ) মোঃ আবুল বাশারকে মুঠোফোনে একাধিকবার ফোন দিলেও তিনি রিসিভ করেননি।
Array