বাংলাদেশের অপরূপ সৌন্দর্যের অন্যতম নীলাভূমি সাগরকন্যা কুয়াকাটা। পদ্মা সেতু চালু হওয়ার পর থেকে কুয়াকাটা যেন প্রাণ ফিরে পেয়েছে। প্রতিনিয়ত পর্যটককে টইটম্বুর থাকছে এ সৈকত। কিন্তু কিছু অসচেতন আর উদাসীন পর্যটক ও ক্ষুদ্র ব্যবসায়ী প্লাস্টিক বর্জ্য থেকে শুরু করে বিভিন্ন ময়লা ফেলে বিনষ্ট করছে সৈকতের পরিবেশ। পৌর কর্তৃপক্ষ ও প্রশাসন বলছে পর্যাপ্ত ডাস্টবিন থাকলেও তা ব্যবহার করছে না কিছু পর্যটক ও ব্যবসায়ী।
সোমবার (২২ এপ্রিল) বিকেলে কুয়াকাটা সৈকতের বিভিন্ন পয়েন্টে ঘুরে দেখা যায়, সৈকতের বিভিন্ন জায়গায় ময়লার ভাগাড় বানিয়ে রাখা হয়েছে। মশা মাছি আর দুর্গন্ধ ছড়াচ্ছে পুরো সৈকত জুড়ে। এতে বিপাকে পড়েছে সচেতন ও উচ্চাভিলাসী পর্যটকরা। সৈকতের মূল পয়েন্টটি এভাবে ময়লা আবর্জনা ফেলে রাখায় বিরক্ত ও ক্ষুব্ধ অনেক পর্যটক। অধিকাংশ পর্যটক বলছেন, সৈকতের পরিবেশ রক্ষা করতে না পারলে পর্যটক কমবে কুয়াকাটায়।
ঢাকা থেকে কুয়াকাটায় বেড়াতে আসা পর্যটক আবু তাহের বলেন, আমি আমার স্ত্রী ও ছোট দুই বাচ্চা নিয়ে সৈকত এসে ছাতার নিচে বসলাম কিন্তু পিছনেই কি পরিমাণ ময়লা তা আপনারা দেখতে পাচ্ছেন। এই যদি হয় কুয়াকাটা সৈকতের পরিবেশ তাহলে ছোট ছোট বাচ্চাদের নিয়ে দুর্গন্ধের মধ্যে কীভাবে বসব। সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষের সৈকতের পরিবেশ রক্ষা করার জন্য এখনই পদক্ষেপ নেওয়া জরুরি ।
চিপস খেতে খেতে সৈকতে নামছিলেন দুজন পর্যটক, খাওয়া শেষ হতে না হতেই চিপসের খালি প্যাকেট দুটি ফেলে দেয় সৈকতে। এভাবে সৈকতে ময়লা ফেলা ঠিক হয়েছে কিনা জানতে চাইলে এ পর্যটক বলেন, সবাই তো ফেলছে আমরা ফেললে সমস্যা কি। কোনো সচেতন মানুষের এরকম কাজ করা ঠিক কিনা জানতে চাইলে তিনি একপর্যায়ে ভুল স্বীকারও করেন। পরিশেষে সৈকতের পরিবেশ ও সৌন্দর্য রক্ষা করার জন্য সবাইকে অনুরোধও করেন তিনি।
এ বিষয় সঙ্গে কথা হয় একাধিক ঝাল মুড়ি, আইসক্রিম, চানাচুর, চাটনি বিক্রেতাসহ একাধিক ক্ষুদ্র ব্যবসায়ীর সঙ্গে, তাদের প্রত্যেকের দোকানের আশপাশে ময়লা, পলিথিন, আচারের প্যাকেটসহ নানা ময়লা থাকলেও তারা বলেন আমরা প্রত্যেক দোকানদার ডাস্টবিন ঝুড়ি ব্যবহার করছি। এখন পর্যটকরা তাতে ময়লা না ফেললে আমরা কি করতে পারি। আবার কেউ কেউ বলছেন এই ময়লা আমার দোকানের না। এরকম একাধিক দায়সারা বক্তব্য দেন তারা।
এ বিষয় বিডি ক্লিন ডটকম কুয়াকাটা শাখার সমন্বয়ক ডা. ইসলাঈল ইমন বলেন, সৈকত বা রাস্তা এইগুলা পরিষ্কার পরিচ্ছন্ন রাখা আমাদের সকলের দায়িত্ব ও কর্তব্য। আমরা অনেকেই মনে করি সৈকত রাস্তাঘাট পরিষ্কার পরিচ্ছন্ন রাখা এটা শুধু পৌর কর্তৃপক্ষের দায়িত্ব, কিন্তু না। ময়লা আবর্জনা ফেলার সময় নির্দিষ্ট ডাস্টবিন ব্যবহার করলেই পরিবেশের ভারসাম্য রক্ষা হবে। সেজন্য পর্যটক ও স্থানীয়সহ আমাদের সকলের সচেতন হতে হবে।
এ বিষয় কুয়াকাটা পৌরসভার প্যানেল মেয়র (২) মো. শহিদ দেওয়ান বলেন, আমাদের পৌরসভার একাধিক পরিচ্ছন্ন কর্মী দিনরাত চেষ্টা করছেন সৈকত পরিষ্কার রাখার জন্য। কিন্তু অসচেতন কিছু পর্যটক ও উদাসীন ক্ষুদ্র ব্যবসায়ীদের জন্য সৈকত পরিষ্কার রাখা যাচ্ছে না। তবে সৈকতে কেউ প্লাস্টিক বর্জ্য নিয়ে নামতে পারবে না এরকম কোনো প্রচার-প্রচারণা প্রশাসনিকভাবে থাকলে কিছুটা হলেও সৈকতের পরিবেশ রক্ষা করা যেত।
Array