- এম.মোরছালিন, বরগুনা প্রতিনিধি
যেন শুরু থেকে শেষ পর্যন্ত অনিয়মে ভরা। বরগুনার তালতলী উপজেলার সোনাকাটা ইউনিয়নের ৮নং ওয়ার্ডের গ্রাম পুলিশ নিয়োগে এমনটাই হয়ে বলে অভিযোগ ওঠে। মোঃ শাহ আলম গ্রাম পুলিশ পদে চাকরি বহাল থাকলেও তার স্থলে তার ছেলেকে নিয়োগ দিবে এমন আশ্বাস দিয়ে স্বেচ্ছায় পদত্যাগ পত্র নেন ইউনিয়নের চেয়ারম্যান ফরাজী মোঃ ইউনুস। চাকুরি পেতে তাকে দিয়েছেন মোটা অংকের টাকা। কিন্তু ওই ইউনিয়নের সংরক্ষিত (নারী) ইউপি সদস্যের নিকট থেকে অধিক টাকা নিয়ে তার ছেলেকে পদটিতে নিয়োগ দেয়া হয়। আশ্চয্যজনকভাবে যিনি নিয়োগ পেয়েছে তাকে চেনেন না স্থানীয় কেউই।
বিধি মোতাবেক গত ৭ নভেম্বর সোনাকাটা ইউনিয়নে ৮নং ওয়ার্ডের গ্রাম পুলিশ নিয়োগের বিজ্ঞপ্তি প্রকাশ করে সংশ্লিষ্ট দপ্তর। ছেলেকে চাকরি পাইয়ে দেয়ার আশ্বাস দিয়ে ওই ওয়ার্ডের গ্রাম পুলিশ শাহ আলমকে দিয়ে চাকরির মেয়াদ থাকা স্বত্ত্বেও স্বেচ্ছায় অব্যহতি নিয়ে নেন চেয়ারম্যান ইউনুস ফরাজী। এমনকি টাকাও নিয়েছেন ৫ লাখ। কিন্তু (৭,৮,৯নং ওয়ার্ডের) সংরক্ষিত ইউপি সদস্য রাহিমা বেগমের থেকে অধিক টাকা নিয়ে তার ছেলেকে নিয়োগ দেয়া হয় বলে অভিযোগ আরেক নিয়োগ প্রার্থী শাহিনের।
শাহিন ও তার বাবা শাহ আলম জানায়, গ্রাম পুলিশে নিয়োগ দিবে বলে আমাদের নিকট থেকে ৫ লাখ টাকা ঘুষ নিয়েছে চেয়ারম্যান ইউনুস ফরাজী। শাহ আলম বলেন, আমার ছেলেকে আমার পরিবর্তে নিয়োগের কথা বলে আমাকে দিয়ে স্বেচ্ছায় পদত্যাগ করায় চেয়ারম্যান। টাকা পয়সার কথাও বলেন আমাকে। আমি আমার ছেলেকে দিয়ে তাকে টাকা দিয়েছি। কিন্তু সে মহিলা মেম্বারের নিকট থেকে অধিক টাকা নিয়ে তার ছেলেকে নিয়োগ দিয়েছে।
পদটিতে নিয়োগ পেয়েছেন রানা নামের একজন। অথচ তাকে গ্রামের কেউ রাহিমা মেম্বারের ছেলে হিসেবে চেনেন না। গ্রামের লোকজন জানান তার দুটি ছেলে ও একটি মেয়ে। কিন্তু রানা নামে কোন ছেলে সন্তান তাদের আছে বলে জানেন গ্রামবাসী। একাধিক এলাকাবাসীর সাথে কথা বলে এসব তথ্য জানাযায়।
অনুসন্ধান করতে গিয়ে দেখা যায়- রাহিমা বেগম এর যেই ছেলের চাকরি হয়েছে তাকে গ্রামের লোকজন চেনেন রাসেল নামে। বড় আমখোলা নাজিরবাড়ি স্বতন্ত্র ইবতেদায়ী মাদ্রাসার ২০১৩ সনের প্রাথমিক সমাপনী পরীক্ষার কাগজপত্রের তথ্যেও তার মিল পাওয়া যায়। অথচ চাকরি পেয়েছে রানা। কে এই রানা? ২০০৯ সনের মাধ্যমিক শ্রেণি উত্তরণ পরীক্ষায় উত্তীর্ণ হওয়া রানা নামের একটি সনদ দিয়ে চাকরি পেয়েছেন রাসেল। কিন্তু এসব অভিযোগ মানতে চান না চাকরি পাওয়া রানা ও তার বাবা। রাসেল/রানা বলেন- আমি রানা। রাসেল নামে কাউকে আমি চিনি না। তার বাবা বলেন- রানা আমার ছেলে, রাসেল নামে আমার কোন ছেলে নেই। ছেলেদের জন্ম হয়েছে কত সালে এমন প্রশ্ন করলে উত্তর দিতে পারেননি তিনি। রাসেল/রানাও তার জন্ম তারিখের সঠিক উত্তর দিতে পারেনি।
লাউপাড়া সাগর সৈকত মাধ্যমিক বিদ্যালয়ে গিয়ে সনদটি সম্পর্কে জানতে চাইলে পাওয়া যায়নি প্রধান শিক্ষককে। সহকারী প্রধান শিক্ষকও বিষয়টি এড়িয়ে গেছেন।
ইতিমধ্যে এ বিষয়ে একাধিক দপ্তরে অভিযোগ দেয়া হয়েছে। মহামান্য হাইকোর্টে একটি রিট পিটিশন দায়ের করেন আরেক প্রার্থী শাহিন। তবে এসব বিষয়ে কথা বলতে চায়নি সোনাকটা ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান মোঃ ইউনুস ফরাজী।
এদিকে সার্বিক বিষয় জেনে তালতলী উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা সিফাত আনোয়ার তুমপা বলেন- ইতিমধ্যে আমার কাছে একটি অভিযোগ এসেছে। একবার শুনানিও করেছি। রানার সনদ নিয়েও মাধ্যমিক শিক্ষা অফিসারকে তদন্ত করার জন্য বলেছি। সার্বিক বিষয় সত্যতা পেলে ব্যবস্থা নেয়া হবে।
Array